‘চুরি করে ক্রিকেট হয় না’; তৃতীয় বিভাগের দলের ক্ষোভ

আম্পায়ারদের ঘিরে ধরেছেন ক্রিকেটাররা। চলছে কথার তোপ। কেউ বলছেন, ‘চুরি করতে আসিনি এখানে।” কেউ বলছেন, “চুরি করে ক্রিকেট খেলা হয় না।’ আম্পায়ারদের দিকে দেখিয়ে চিৎকার করে কেউ কেউ বলছেন ‘চোর, চোর, চোর…।” আম্পায়ারদের একজন জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেন, কিন্তু ক্রিকেটারদের ক্ষোভের কাছে টিকতে পারলেন না। তাদের মাঠের বাইরে নিয়ে গেলেন ম্যাচ রেফারি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2019, 02:00 PM
Updated : 18 Nov 2019, 02:12 PM

ঘটনা রোববার ঢাকা তৃতীয় বিভাগ লিগে কামরাঙ্গীর চর স্পোর্টিং ক্লাব ও ঢাকা রয়্যাল ক্রিকেটার্সের ম্যাচের। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে ম্যাচটির পর রয়্যাল ক্রিকেটার্সের ক্রিকেটারদের ওই ক্ষোভের ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন বলছেন, “চারটি আউট দিয়েছে চুরি করে…।” আরেকজনের কথা, “এত কষ্ট করে এখানে এসেছি, সারাদিন খেলছি, এসবের জন্য!”

ঘরোয়া ক্রিকেটের নিচের স্তরের লিগগুলোতে পাতানো ম্যাচ ও পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং গত কয়েক বছরে দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুগুলোর একটি। বিশেষ করে বিসিবি কর্তাদের ছত্রছায়ায় থাকা ক্লাবগুলোকে বিশেষ সুবিধা দিতে পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিং মহামারি আকার ধারণ করেছে বলেও গত কয়েক মৌসুমে অভিযোগ উঠেছে বারবার।

সাবেক বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী তার অফিসিয়াল ফেইসবুক পাতায় ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, "এভাবেই ধ্বংস হচ্ছে আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট।"

এই ম্যাচের দুই আম্পায়ার ছিলেন সাইদুর রহমান ও জহিরুল ইসলাম (জুয়েল)। ঘরোয়া ক্রিকেটে পক্ষপাতমূলক আম্পায়ারিংয়ে যুক্ত হিসেবে যাদের বিপক্ষে অভিযোগ বেশি, তাদের একজন এই সাইদুর।

ভিডিওর শেষ দিকে দেখা যায়, রয়্যাল ক্রিকেটার্সের কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ রুবেল সামনে এগিয়ে ম্যাচ রেফারিকে বলছেন, “এই বাচ্চা বাচ্চা ছেলেগুলির জীবন নষ্ট করবেন না…।”

এই কর্মকর্তা সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন তাদের ক্ষোভ ও অভিযোগের কথা।

“ম্যাচের শুরু থেকে আমাদের বিপক্ষে একের পর এক বাজে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আম্পায়াররা। তবু আমরা ক্রিকেটের স্বার্থে খেলা চালিয়ে গেছি। লড়াই করেছি। জয়ের মতো অবস্থাও সৃষ্টি করেছি। কিন্তু আম্পায়ারদের জন্য পারিনি। এভাবে খেলা যায় না…।”

“আমাদের প্রতিপক্ষ ক্লাব বিসিবি কর্তাদের আশীর্বাদপুষ্ট। তারা নিজেরাই মিডিয়ায় বলেছেন, তাদের ছায়ায় অনেক ক্লাব। এই ক্লাবও তাদেরই। আম্পায়ারদের উদ্দেশ্য কি ছিল, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন!”

৫০ ওভারের ম্যাচে কামরাঙ্গীর চর অলআউট হয়েছিল ১৪৮ রানে। রান তাড়ায় রয়্যাল ক্রিকেটার্স ৪০ রানে ৫ উইকেট হারালেও ষষ্ঠ উইকেট জুটি তাদের রেখেছিল জয়ে পথে। এক পর্যায়ে রান ছিল ৫ উইকেটে ১১৯। সেখান থেকে ৯ রানের মধ্যে পড়ে যায় তাদের শেষ ৫ উইকেট। ম্যাচ হেরে যায় তারা ২০ রানে।

ম্যাচ নিয়ে নিজেদের অভিযোগের জায়গাও সুনির্দিষ্ট করে বললেন সাব্বির আহমেদ রুবেল।

“ওদের এক ওপেনার ৫১ করেছে (মোর্তজা আহমেদ), সে ২০ বা ২২ রানে আউট ছিল। নিশ্চিত স্টাম্পিং, ক্রিজের বাইরে ছিল অনেক। আমাদের ছেলেরা আম্পায়ারকে দেখিয়েছে যে বাইরে, তবু আম্পায়ার বলেছে যে ব্যাটসম্যান ভেতরেই। আমাদের এক ওপেনার শুরুতেই তিন বাউন্ডারি মেরেছিল। বল পায়ে লাগা মাত্র তাকে আউট দিয়েছে, যদিও আউট ছিল না। ফিল্ডারদের আবেদন শুরুই হয়নি, তার আগেই আউট!”

“টুকটাক আরও ছিল ম্যাচ জুড়েই। সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে শেষ দিকে। এই অবস্থার মধ্যেও আমরা জয়ের পথে ছিলাম। আমাদের বড় জুটি ভাঙল, এরপর আমাদের দুই ব্যাটসম্যানকে জঘন্য দুটি সিদ্ধান্তে এলবিডব্লিউ দিয়ে দিলো। তার পরও আমাদের একজন একাই টেনে নিচ্ছিল দলকে (জাহিদ হাসান, ৬০ রান), বল পায়ে লাগতেই দিচ্ছিল না। শেষে ওকেও রান আউট দিয়ে দিলো। অথচ সে ক্রিজে পৌঁছে গিয়েছিল বেশ আগেই।”

এই ম্যাচের বাইরেও সামগ্রিকভাবে দুই আম্পায়ারকে নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুললেন রয়্যাল ক্রিকেটার্সের এই কর্মকর্তা।

“নিচের দিকের লিগের সবাই জানে, আম্পায়ার সাইদুর কোন ধরনের আম্পায়ার। অনেক অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। আরেক আম্পায়ার জুয়েল (জহিরুল ইসলাম) তো পূর্বাঞ্চল ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে লিগ আয়োজকদের সভায় উপস্থিত থেকেছে। ক্লাবের প্রতিনিধি আম্পায়ারের দায়িত্ব পায়, কখনও শুনেছেন? তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করাই কঠিন।”

রুবেল জানালেন, ম্যাচ শেষে নিজেদের আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদনে এই সবকিছু তারা উল্লেখ করেছেন। ম্যাচ রেফারিকেও জানিয়েছেন তারা।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ম্যাচ রেফারি মানজুর রহমান বলছেন, “ যেখানে রিপোর্ট দেওয়ার, আমি দেব।”

আদৌ তিনি প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করেছেন কিনা, তা জানতে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। ফোন ধরেননি বিসিবির প্রধান নির্বাহী ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের কেউ।