আবু জায়েদের দ্যুতির পরও আঁধারে বাংলাদেশ

সকালে অসাধারণ বোলিং করলেন আবু জায়েদ চৌধুরি। ফিরিয়ে দিলেন চেতেশ্বর পুজারা ও বিরাট কোহলিকে। দ্বিতীয় নতুন বলে অজিঙ্কা রাহানেকে ফিরিয়ে ভাঙলেন ১৯০ রানের জুটি। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের পরও ইন্দোর টেস্টে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। দারুণ এক ডাবল সেঞ্চুরিতে ভারতকে বিশাল সংগ্রহের পথে নিয়ে গেছেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতইন্দোর থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2019, 11:59 AM
Updated : 15 Nov 2019, 03:51 PM

হলকার স্টেডিয়ামে শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ভারতের সংগ্রহ ৬ উইকেট ৪৯৩ রান। প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের চেয়ে তারা এগিয়ে গেছে ৩৪৩ রানে। রবীন্দ্র জাদেজা ৬০ ও উমেশ যাদব ২৫ রানে ব্যাট করছেন।

দিনের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য ছিল আশা জাগানিয়া। এক প্রান্তে আঁটসাঁট বোলিং করেন ইবাদত হোসেন, অন্য প্রান্তে ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নেন আবু জায়েদ। ডানহাতি এই পেসারের বলে গালিতে কঠিন এক ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান পুজারা।

পরের ওভারেই এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন আবু জায়েদ। বদলি ফিল্ডার সাইফ হাসান নেন চমৎকার ক্যাচ। ৭২ বলে ৯ চারে ৫৪ রান করে ফিরেন পুজারা।

ছবি: বিসিসিআই

এরপর মেলে আরও বড় উইকেট। শূন্য রানে কোহলিকে ফিরিয়ে দেন আবু জায়েদ। তীক্ষ্ণ বাঁক নিয়ে ভেতরে ঢোকা বল ব্যাটে খেলতে পারেননি ভারত অধিনায়ক। আম্পায়ার জোরালো আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেন মুমিনুল হক। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায় বল লাগতো লেগ স্টাম্পে, ফিরে যান কোহলি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হন তিনি।    

প্রথম ঘণ্টার প্রায় পুরোটা সময় টানা বোলিং করা আবু জায়েদ ও ইবাদত আক্রমণ থেকে সরতেই সরে যায় চাপ। প্রথম সেশনের বাকি সময়টুকু কাটিয়ে দেওয়ার পর মায়াঙ্ক ও অজিঙ্কা রাহানে রানের গতি বাড়ান দ্বিতীয় সেশনে। ৩০ ওভারে যোগ করেন ১১৫ রান।

পুরানো বলে ওয়ানডে ক্রিকেটের গতিতে রান তোলেন দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ একটুও ভাবাতে পারেননি ব্যাটসম্যানদের। দুইশ রানের পথে থাকা জুটি ভাঙেন আবু জায়েদ। দ্বিতীয় নতুন বলে ফিরিয়ে দেন রাহানেকে।

ভারত সহ-অধিনায়কের দায়ই অবশ্য বেশি। অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল মারার মতোই ছিল। তিনি ক্যাচ দেন ডিপ পয়েন্টে। ৯ চারে ৮৬ রান করে ফিরেন রাহানে। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো চার উইকেট নেন আবু জায়েদ।

জাদেজার সঙ্গে আরেকটি শতরানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন মায়াঙ্ক। দ্বিতীয় নতুন বলে দুই পেসারের স্পেল শেষ হতেই রানের গতি বাড়ায় ভারত।

ছবি: বিসিসিআই

তাইজুল-মিরাজের ওপর চড়াও হন মায়াঙ্ক ও জাদেজা। পঞ্চম উইকেটে ১২১ বলে গড়েন শতরানের জুটি। ছক্কায় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর যেন ছক্কার নেশায় পেয়ে বসেছিল মায়াঙ্ককে।

মিরাজকে উড়িয়ে টেস্টে ভারতের হয়ে নভজোৎ সিং সিধুর এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮ ছক্কার রেকর্ড স্পর্শ করেন মায়াঙ্ক। পরের বলে আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন তিনি। ৩২ রানে ইমরুল কায়েসের হাতে জীবন পাওয়া মায়াঙ্ক ফিরেন ২৪৩ রান করে। তার ৩৩০ বলের ইনিংস গড়া ২৮ চার ও ৮ ছক্কায়।

বেশিক্ষণ টিকেননি কিপার-ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমান সাহা। স্টাম্পের বল লেগে ঘুরাতে গিয়ে ফিরে যান বোল্ড হয়ে। ক্রিজে গিয়েই ঝড় তোলেন উমেশ, ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে নেন জাদেজা। বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের ৭৬ বলের ইনিংস গড়া দুই ছক্কা ও ছয় চারে। উমেশ ১০ বলের ইনিংসে হাঁকিয়েছেন তিন ছক্কা ও এক চার।       

শেষ সেশনে ৩০ ওভারে ১৯০ রান যোগ করেছে ভারত। রান দেওয়ার সেঞ্চুরি হয়ে গেছে বাংলাদেশের মূল চার বোলারের। ১০৮ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন আবু জায়েদ। একটি করে উইকেট পেয়েছেন ইবাদত ও মিরাজ। উইকেটশূন্য তাইজুল ইসলাম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫০

ভারত ১ম ইনিংস: ১১৪ ওভারে ৪৯৩/৬ (আগের দিন ৮৬/১) (মায়াঙ্ক ২৪৩, রোহিত ৬, পুজারা ৫৪, কোহলি ০, রাহানে ৮৬, জাদেজা ৬০*, ঋদ্ধিমান ১২, উমেশ ২৫*; ইবাদত ৩১-৫-১১৫-১, আবু জায়েদ ২৫-৩-১০৮-৪, তাইজুল ২৮-৪-১২০-০, মিরাজ ২৭-০-১২৫-১, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-২৪-০)