ভারতের রান জোয়ারের দিন
প্রথম দিনে ভারতীয় বোলিং গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং। দ্বিতীয় দিনে ভারতের ব্যাটসম্যানরা একরকম উড়িয়ে দিল বাংলাদেশের বোলিং। দুই দিনেই তাই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে ম্যাচের ভাগ্য।
৬ উইকেটে ৪৯৩ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে ভারত। তাদের লিড হয়ে গেছে ৩৪৩। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করতে পেরেছিল মোটে ১৫০।
৯০ ওভার পুরো হয়নি দ্বিতীয় দিনে। কিন্তু দিনে ৮৮ ওভার খেলেই ভারত তুলেছে ৪০৭ রান!
আগের দিন ৩২ রানে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া মায়াঙ্ক আগারওয়াল করেছেন ক্যারিয়ার সেরা ২৪৩। ৮ ছক্কায় স্পর্শ করেছেন ভারতীয় রেকর্ড।
সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে অজিঙ্কা রাহানে ফিরেছেন ৮৬ রানে। ফিফটি করেছেন চেতেশ্বর পুজারা ও রবীন্দ্র জাদেজাও।
অথচ দিনের শুরুটায় ছিল লড়াইয়ের ইঙ্গিত। পুজারাকে ফিফটির পর ফিরিয়ে আবু জায়েদ শূন্য রানে ফেরান বিরাট কোহলিকে।
কিন্তু সেই লড়াইয়ের ধারা পরে আর ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং ধারহীন বোলিংকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয়রা মেতে উঠেছে রান উৎসবে।
বাংলাদেশের হয়ে আবু জায়েদ নিয়েছেন চারটি উইকেট। বাকিদের বোলিং ফিগারের দশা করুণ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫০
ভারত ১ম ইনিংস: ১১৪ ওভারে ৪৯৩/৬ (আগের দিন ৮৬/১) (মায়াঙ্ক ২৪৩, রোহিত ৬, পুজারা ৫৪, কোহলি ০, রাহানে ৮৬, জাদেজা ৬০*, ঋদ্ধিমান ১২, উমেশ ২৫*; ইবাদত ৩১-৫-১১৫-১, আবু জায়েদ ২৫-৩-১০৮-৪, তাইজুল ২৮-৪-১২০-০, মিরাজ ২৭-০-১২৫-১, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-২৪-০)।
শেষ বেলায় উমেশ ঝড়
দ্রুত রান তোলার জন্য রবিচন্দ্রন অশ্বিনের আগে উমেশ যাদবকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে ভারত। উমেশ দলের সেই চাওয়া মিটিয়েছেন দারুণভাবে। শেষ বিকেলে চালিয়েছেন ব্যাটিং তাণ্ডব।
৩ ছক্কায় ১০ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন উমেশ। জাদেজা দিনশেষে অপরাজিত ৬০ রানে। দুজনের জুটিতে ৩.১ ওভারেই এসেছে ৩৯ রান।
একদিনেই ভারতের চারশ
নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয়বার একদিনেই চারশ রান তুলেছে ভারত। আগের দুইবারই ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
জাদেজার ফিফটি
ভারতীয়দের রানের জোয়ারে সামিল হয়ে রবীন্দ্র জাদেজাও করলেন পঞ্চাশ। ৭২ বলে এসেছে তার ফিফটি। ৪টি চারের পাশে তার ইনিংসে আছে ২টি ছক্কা।
ইবাদতের প্রথম
শেষ বিকেলে আরেকটি উইকেট নিতে পারল বাংলাদেশ। নিজের ৩০তম ওভারে প্রথম উইকেটের দেখা পেলেন ইবাদত হোসেন। বোল্ড করে দিলেন ঋদ্ধিমান সাহাকে।
ইবাদতের লেংথ বলটি অন সাইডের দিকে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করেন ঋদ্ধিমান। বল লাগে স্টাম্পে।
১১ বলে ১২ রান করে ফিরলেন ভারতের কিপার-ব্যাটসম্যান। দলের রান ৬ উইকেটে ৪৫৪।
লিড ৩০০
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের রানের দ্বিগুণ হয়ে গেছে ভারতের লিড! মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ঋদ্ধিমান সাহার বাউন্ডারিতে লিড স্পর্শ করেছে ৩০০। ভারতের রান ৫ উইকেটে ৪৫০।
অবশেষে থামলেন মায়াঙ্ক
ছক্কার রেকর্ড ছোঁয়ার পরের বলেই তা নিজের করে নেওয়ার চেষ্টায় আউট হয়ে গেলেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। অবশেষে থামল তার অসাধারণ ইনিংস।
আগের বলে ছক্কার পর মিরাজকে হাঁটু গেড়ে উড়িয়ে মেরেছিলেন মায়াঙ্ক। এবার মারে জোর হয়নি যথেষ্ট। মিড উইকেট সীমানায় ভালো ক্যাচ নিয়েছেন আবু জায়েদ চৌধুরি।
৩৩০ বলে ২৪৩ রান করে আউট হলেন মায়াঙ্ক। জাদেজার সঙ্গে তার পঞ্চম জুটির রান ছিল ১২৩।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড অল্পের জন্য হাতছাড়া করলেন মায়াঙ্ক। ২০০৪ সালে ঢাকায় ২৪৮ কেরছিলেন শচিন টেন্ডুলকার।
ভারতের রান ৫ উইকটে ৪৩২।
ছক্কার রেকর্ড
দুর্দান্ত ইনিংসটির পথে মায়াঙ্ক আগারওয়াল মেতে উঠেছেন যেন ছক্কার উৎসবে। ৮ ছক্কায় স্পর্শ করলেন ভারতীয় রেকর্ড!
১৯৯৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লক্ষ্ণৌতে ১২৪ রানের ইনিংসের পথে ৮টি ছক্কা মেরেছিলেন নভজোৎ সিং সিধু। ভারতের হয়ে টেস্টে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড সেটিই। মায়াঙ্ক এবার নাম লেখালেন সিধুর পাশে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড শিমরন হেটমায়ারের। গত বছর মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যান মেরেছিলেন ৯ ছক্কা। মায়াঙ্কের মতো ৮ ছক্কা মেরেছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা, ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে ৩১৯ রানের ইনিংসে।
জুটির সেঞ্চুরি
মাইলফলকগুলি যেন ছক্কায় ছোঁয়ার পণ করেছেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। তার আরেকটি ছক্কায় এলো পঞ্চম জুটির শতরান। এবার ছক্কা হজম করা বোলার মাহমুদউল্লাহ।
১২১ বলে হলো জুটির সেঞ্চুরি। তাতে মায়াঙ্কের ব্যাট থেকেই এসেছে ৭৮!
১০৬ বলে ভারতের রান ৪ উইকেটে ৪১৪। ২৩৬ রানে খেলছেন মায়াঙ্ক, জাদেজা ২৭।
মায়াঙ্কের ক্যারিয়ার সেরা
ছক্কায় ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁয়েছিলেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল, আরেকটি ছক্কায় ছাড়িয়ে গেলেন টেস্টে তার আগের সর্বোচ্চ স্কোরকে। আগের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২১৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ২৮ বছর বয়সী ওপেনার। দুই টেস্ট পরই ছাড়িয়ে গেলেন সেই স্কোর।
১০৩ ওভারে ভারতের রান ৪ উইকেটে ৩৮৪। লিড ২৩৪ রানের।
মায়াঙ্কের রান ২১৮, জাদেজা খেলছেন ১৫ রানে।
মায়াঙ্কের ডাবল সেঞ্চুরি
১৯০ পেরিয়ে ‘নার্ভাস’ হওয়ার কোনো ছাপ নেই। ১৯৬ থেকে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে মিরাজের ডেলিভারি গ্যালারিতে পাঠিয়ে মায়াঙ্ক আগারওয়াল পা রাখলেন ডাবল সেঞ্চুরিতে!
সেটি ছিল তার ইনিংসের পঞ্চম ছক্কা, চার আছে ২৫টি। দুইশ ছুঁতে বল খেলেছেন ৩০৩টি।
প্রথম দিন শেষ বিকেলে তিনি জীবন পেয়েছিলেন ৩২ রানে।
তিন টেস্ট সেঞ্চুরির দুটিকেই মায়াঙ্ক রূপ দিলেন ডাবল সেঞ্চুরিতে। এই তিন সেঞ্চুরিই এলো সবশেষ ৫ ইনিংসে।
গত মাসেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে বিশাখাপত্নমে খেলেছিলেন ২১৫ রানের ইনিংস। পরের টেস্টে পুনেতে করেছিলেন ১০৮।
৯৯ ওভারে ভারতের রান ৪ উইকেটে ৩৬৫। ভারতের লিড ২১৫।
লম্বা জুটির পর অজিঙ্কা রাহানে ফিরে গেছেন। তবে রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে আরেকটি জুটি অনায়াসেই গড়ে তুলেছেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। পঞ্চম উইকেটে দুজনের জুটিতে ফিফটি এসেছে ৭৪ বলে।
৫০ রানের জুটিতে ৩৮ রানই এসেছে মায়াঙ্কের ব্যাট থেকে।
লিড ২০০
অজিঙ্কা রাহানে আউট হওয়ার পর রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে ভারতের লিড বাড়িয়ে নিচ্ছেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। লিড পেরিয়ে গেছে ২০০।
৯৭ ওভার শেষে ভারতের রান ৪ উইকেটে ৩৫২। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করেছে ১৫০।
অবশেষে ভাঙল জুটি
চা-বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারে উইকেটের দেখা পেল বাংলাদেশ। ভাঙল ডাবল সেঞ্চুরির পথে থাকা জুটি। অজিঙ্কা রাহানেকে ফিরিয়ে আবু জায়েদ নিলেন চতুর্থ উইকেট।
বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের দুই টেস্টেও দুইবার সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে পারেননি রাহানে। একবার আউট হয়েছে ৯৮ রানে, আরেকবার ৮২। এবার ফিরলেন ৮৬ রানে।
এবারের আউটে রাহানের নিজের দায়ই বেশি। আবু জায়েদের ডেলিভারি ছিল খেলার মতোই। অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট বল। কিন্তু রাহানে খেললেন হাওয়ায় ভাসিয়ে। ডিপ পয়েন্ট থেকে একটু সামনে এগিয়ে ক্যাচ নিলেন তাইজুল ইসলাম।
১৭২ বলে ৯টি চারে ৮৬ রান করে আউট হলেন রাহানে। চতুর্থ উইকেটে মায়াঙ্কের সঙ্গে জুটি ছিল ১৯০ রানের।
ভারতের রান ৪ উইকেটে ৩০৯। লিড ১৫৯ রানের।
মায়াঙ্ক খেলছেন ১৫৮ রানে, তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা।
বাংলাদেশের হতাশার সেশন
প্রথম সেশনে তবু লড়াই জমেছিল কিছুটা। দ্বিতীয় সেশন একদমই একতরফা। মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও অজিঙ্কা রাহানের জুটিতে ভাঙন ধরানোর কোনো পথই পায়নি বাংলাদেশ। ৩ উইকেটে ৩০৩ রান নিয়ে চা বিরতিতে গেছে ভারত। লিড ১৫৩।
উইকেটের সুযোগ সৃষ্টি করা বহুদূর, দুই ব্যাটসম্যানকে তেমন কোনো অস্বস্তিতেও ফেলতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। দুজনের স্বচ্ছন্দ ব্যাটিংয়ে রান এসেছে ওভারপ্রতি প্রায় চার করে।
দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে ৩০ ওভারে ভারত তুলেছে ১১৫ রান, হারায়নি কোনো উইকেট।
১৫৬ রান নিয়ে উইকেটে আছেন মায়াঙ্ক, রাহানের রান ৮২। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে এসেছে ১৮৪ রান।
বাংলাদেশের বোলিং ছিল ধারহীন। সেশনের শেষ দিকে দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েছে দল, তবে কোনো আশার ইঙ্গিত নেই নতুন বলের শুরুর বোলিংয়েও।
দ্বিতীয় নতুন বলের প্রথম ওভারে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের দারুণ শটে বাউন্ডারি, ওই শটে ভারতের রান ছাড়িয়ে গেল তিনশ।
৮২ ওভার শেষে ভারতের রান ৩ উইকেটে ৩০১। ভারতের লিড ১৫১।
১৫৫ রানে ব্যাট করছেন মায়াঙ্ক, রাহানে ৮১।
নতুন বল
মায়াঙ্ক ও রাহনের জুটি ভাঙতে মরিয়া বাংলাদেশ নিয়েছে নতুন বল। ৮০ ওভার পর প্রাপ্য ছিল দ্বিতীয় নতুন বল। বাংলাদেশ নিয়েছে ৯১ ওভার শেষ হওয়ার পর।
নতুন বলে বোলিং শুরু করেছেন ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা বোলার আবু জায়েদ চৌধুরি।
লিড একশ
মায়াঙ্ক ও রাহানে জুটিকে থামানোর কোনো পথই পাচ্ছে না বাংলাদেশ। দুজনের ব্যাটে বাড়ছে ভারতরে রান, লিড স্পর্শ করেছে একশ।
৭১ ওভারে ভারতের রান ৩ উইকেটে ২৫০।
দুজনের জুটির রান ১৩১। মায়াঙ্ক আগারওয়াল ব্যাট করছেন ১২৯ রানে, রাহানে ৫৭।
জুটির সেঞ্চুরি
বাংলাদেশের হতাশা বাড়িয়ে ভারতের লিড বাড়িয়ে চলেছেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও অজিঙ্কা রাহানে। চতুর্থ উইকেটের দুজনের জুটির শতরান এসেছে ঠিক ২০০ বলে।
জুটিতে দুজন এগিয়ে গেছেন প্রায় একই গতিতে। রাহানের অবদান ৪৭, মায়াঙ্কের ৫৩।
৬৫ ওভারে ভারতের রান ৩ উইকেটে ২২২। লিড ৭২।
রাহানের ফিফটি
মায়াঙ্কের সেঞ্চুরির পর শতরানের জুটিতে তার সঙ্গী অজিঙ্কা রাহানেও পেরোলেন ব্যক্তিগত মাইলফলক। স্পর্শ করলেন ফিফটি।
পঞ্চাশ ছুঁতে রাহানের বল লেগেছে ১০৫টি। সবশেষ ৯ ইনিংসে তিনি পঞ্চাশ ছুঁলেন ৬ বার।
ইন্দোরে আগের একমাত্র টেস্টে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৮ করেছিলেন রাহানে।
মায়াঙ্কের তৃতীয়
৯১ রান নিয়ে লাঞ্চে যাওয়া মায়াঙ্ক আগারওয়াল বিরতির পর অনায়াসেই পৌঁছে গেলেন তিন অঙ্কে। ১৮৩ বলে স্পর্শ করলেন সেঞ্চুরি।
অষ্টম টেস্টে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরি তিনটি এলো সবশেষ ৫ ইনিংসেই।
আগের দিন বিকেলে ৩২ রানে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন মায়াঙ্ক। দ্বিতীয় দিন সকালে ৮২ রানে আম্পায়ার আউট দিলেও তিনি টিকে যান রিভিউ নিয়ে। টুকটাক ওই অস্বস্তি ছাড়া তিনি খেলছেন দুর্দান্ত। ১৮৩ বল খেলেও শটের ওপর নিয়ন্ত্রণের শতকরা হার ৯৬ শতাংশ!
৬০ ওভারে ভারতের রান ৩ উইকেটে ২০৬। লিড ৫৬ রানের।
ভারতের লিড, এগিয়ে চলা, বাংলাদেশের লড়াই, আবু জায়েদের দারুণ বোলিং, সুযোগ হাতছাড়া, রিভিউয়ে টিকে থাকা, প্রথম সেশনে ছিল ঘটনার ঘনঘটা। তবে সব মিলিয়ে নিয়ন্ত্রণ ভারতেরই। বাড়িয়ে নিচ্ছে তারা লিড।
দ্বিতীয় দিন লাঞ্চ বিরতির সময় ভারতের রান ৩ উইকেটে ১৮৮। তাদের লিড ৩৮ রানের।
দিনের প্রথম সেশনে ২৮ ওভারে ভারত ২ উইকেট হারিয়ে করেছে ১০২ রান।
আগের দিন ৩২ রানে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া মায়াঙ্ক আগারওয়াল লাঞ্চে গেছেন ৯১ রান নিয়ে। ৮২ রানে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিলেও এই ওপেনার টিকে গেছেন রিভিউ নিয়ে। রাহানে খেলছেন ৩৫ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে তিনটি উইকেটই নিয়েছেন আবু জায়েদ চৌধুরি। আগের দিন রোহিত শর্মার উইকেট নেওয়া পেসার এ দিন ফিরিয়েছেন ফিফটি করা চেতেশ্বর পুজারাকে, শূন্য রানে বিদায় করেছেন বিরাট কোহলিকে। তার বলে ক্যাচও পড়েছে দুটি।
সকালে জোড়া ধাক্কার পর ভারত এগিয়ে যাচ্ছে মায়াঙ্ক ও রাহানের ব্যাটে। চতুর্থ উইকেটে দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৬৯।
দারুণ খেলতে থাকা মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে ফিরিয়ে উল্লাসে মেতেছিল বাংলাদেশ। তবে সেই উচ্ছ্বাস টিকল না বেশিক্ষণ। রিভিউয়ে টিকে গেলেন মায়াঙ্ক।
মেহেদী হাসান মিরাজের বলে সুইপ মতো করতে গিয়ে ভালো পজিশনে যেতে পারেননি মায়াঙ্ক, খেরতে পারেননি ঠিক মতো। বল লাগে তার প্যাডে। আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস।
নন-স্ট্রাইকে থাকা রাহানের সঙ্গে কথা বলে রিভিউ নেন মায়াঙ্ক। দেখা যায়, টার্ন করে বল চলে যাচ্ছিলন লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে। মায়াঙ্কের রান তখন ৮২।
৪৭ ওভার শেষে ভারতের রান ৩ উইকেটে ১৭০। লিড ২০ রান।
জুটির পঞ্চাশ
পুজারা ও কোহলিকে পরপর হারানোর ধাক্কা সামাল দিয়েছে ভারত। মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও অজিঙ্কা রাহানের জুটিতে লিড নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দল। দুজনই খেলছেন স্বচ্ছন্দে। চতুর্থ উইকেট জুটির রান ছুঁয়েছে পঞ্চাশ।
৮৬ বলে এসেছে জুটির ফিফটি। ততে রাহানের অবদান ২৫, মায়াঙ্কের ২৪।
রাহানের ৪ হাজার
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অজিঙ্কা রাহানে এই ইনিংসের শুরুটাও করেছেন ভালো। এগিয়ে চলেছেন সাবলিলভাবে। এগিয়ে চলার পথে ছুঁয়েছেন একটি মাইলফলক। ২৫ রানের মাথায় পূর্ণ করেছেন টেস্ট ক্যারিয়ারে ৪ হাজার রান।
৬২ টেস্ট আর ১০৪ ইনিংসে এই মাইলফলকের দেখা পেলেন রাহানে। ব্যাটিং গড় তখন ৪৩.৪৭। সেঞ্চুরি করেছেন ১১টি, ফিফটি ২০।
ভারতের লিড
মেহেদী হাসান মিরাজের বলে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের লফটেড শট, মিড অফ পেরিয়ে বল সীমানায়। ওই বাউন্ডারিতেই ভারতের রান পেরোল দেড়শ, ছাড়িয়ে গেল বাংলাদেশের রানও।
৪১ ওভারে ভারতের রান ৩ উইকেটে ১৫২, লিড এখন ২ রানের। উইকেট আছে ৭টি।
৬৮ রানে খেলছেন মায়াঙ্ক, ২২ রানে রাহানে।
কোহলির ‘ডাক’
দুর্দান্ত ডেলিভারি, দারুণ রিভিউ। বিরাট কোহলিকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দিলেন আবু জায়েদ চৌধুরি!
লেংথ বল অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে ভেতরে ঢোকে দারুণ তীক্ষ্ণভাবে। কোহলি হয়তো ভাবতে পারেননি এতটা ঢুকবে বল। তার ডিফেন্সকে ফাঁকি দিয়ে বল গিয়ে লাগে পেছনের পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার।
উইকেটের পেছন থেকে কিপার লিটন দাস বলছিলেন, তিনি ঠিকমতো বুঝতে পারছিলেন না ইম্প্যাক্ট কোথায়। অধিনায়ক মুমিনুল হক তারপরও নেন রিভিউ। দেখা গেল, ইম্প্যাক্ট লাইনেই ছিল, বল লাগছিল লেগ স্টাম্পে। উল্লাসে ভাসল বাংলাদেশ।
২ বলে শূন্য রানে বিদায় নিলেন কোহলি। টেস্ট ক্রিকেটে তার দশম শূন্য। বাংলাদেশের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই প্রথম!
ভারত ৩ উইকেটে ১১৯। মায়াঙ্ক আগারওয়ালের সঙ্গে উইকেটে যোগ দিয়েছেন অজিঙ্কা রাহানে।
জুটির সঙ্গীকে হারালেও হারায়নি মায়াঙ্ক আগারওয়ালের মনোযোগ। পুজারা আউট হওয়ার পরের ওভারেই ইবাদত হোসেনকে চার বলের মধ্যে দুটি বাউন্ডারিতে মায়াঙ্ক স্পর্শ করেন ফিফটি।
৯৮ বলে এই ওপেনার স্পর্শ করেছেন পঞ্চাশ। অষ্টম টেস্ট খেলতে নামা ব্যাটসম্যানের এটি চতুর্থ ফিফটি। পাশে সেঞ্চুরি আছে দুটি।
পুজারাকে থামালেন আবু জায়েদ
যার বলে জীবন পেয়েছিলেন, সেই আবু জায়েদের বলেই ফিরলেন চেতেশ্বর পুজারা। বাংলাদেশ পেল সকালে প্রথম উইকেটের দেখা। যিনি ক্যাচ নিতে পারেননি, সেই মিরাজের বদলি ফিল্ডারই নিলেন ক্যাচ!
আবু জায়েদের ডেলিভারিটিও ছিল যথেষ্ট ভালো। ফুল লেংথ বলে ব্যাটসম্যানকে প্রলুব্ধ করেছিলেন ড্রাইভ খেলতে। পুজারা শরীর থেকে একটু দূরে ড্রাইভ করেছিলেন। বল একটু সুইং করে বেরিয়ে তার ব্যাটের কানায় লেগে উড়ে যায় চতুর্থ স্লিপ বা ওয়াইড স্লিপে। বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন সাইফ হাসান।
আবু জায়েদের আগের ওভারে পুজারার ক্যাচ নিতে গিয়েই আঙুলে আঘাত পেয়ে মাঠের বাইরে যান মেহেদী হাসান মিরাজ। তার বদলি হিসেবে ফিল্ডিং করছিলেন সাইফ।
থিতু হলে সাধারণত বড় ইনিংস খেলেন যিনি, সেই পুজারা ফিরলেন ৭২ বলে ৫৪ রান করে। দ্বিতীয় উইকেটে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের সঙ্গে তার জুটি ছিল ৯১ রানের।
ভারত ২ উইকেটে ১০৫।
পুজারার ফিফটি
জীবন পাওয়ার বলে বাউন্ডারি পেয়েছেন পুজারা। পরের বলেই আলগা বল পেয়ে আরেকটি বাউন্ডারিতে তিনি পৌঁছে যান ফিফটিতে।
৬৮ বলে পুজারা স্পর্শ করলেন টেস্ট ক্রিকেটে তার ২৩তম ফিফটি। সঙ্গে সেঞ্চুরি আছে ১৮টি।
দিনের শুরুতেই উইকেটের সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন আবু জায়েদ চৌধুরি। কিন্তু কঠিন ক্যাচটি নিতে পারলেন না মেহেদী হাসান মিরাজ।
অফ স্টাম্পের বাইরে লেংথ বলটিতে কাট করেছিলেন পুজারা। বল একটু বেশি লাফিয়ে লাগে পুজারার ব্যাটের কানায়। গুলির বেগে উড়ে যায় স্লিপে। সেখানে মিরাজ বলে হাত ছোঁয়ালেও বল তালুবন্দী করার মতো রিফ্লেক্সই দেখাতে পারেননি। বল ছুটে গেল বাউন্ডারিতে।
অনেক কঠিন ছিল ক্যাচটি নেওয়া, কিন্তু একটি সুযোগ! ৪৩ রানে রক্ষা পেলেন পুজারা। আগের দিন বিকেলে আবু জায়েদের বলেই পড়েছে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ক্যাচ।
উইকেট ব্যাটিং সহায়ক
ম্যাচের প্রথম দিনে উইকেটে যে সবুজের ছোঁয়া ছিল, সেটি আর নেই দ্বিতীয় দিনে। অনেকটাই বাদামি চেহারার উইকেট। খেলা শুরুর আগে টিভির পিচ রিপোর্টে সুনীল গাভাস্কার বললেন, “প্রথম দিনে সূর্যের আলোর তেজ ছিল না, যা সাহায্য করেছিল ভারতীয় বোলারদের। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে আলোর তাপ আছে, যা শুষে নিয়েছে উইকেটের আর্দ্রতা। উইকেট তাই হবে দারুণ ব্যাটিং সহায়ক।”
থিতু মায়াঙ্ক-পুজারা
রোহিত শর্মাকে দ্রুত হারালেও প্রথম দিন বিকেলে ভারতকে টেনেছেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও চেতেশ্বর পুজারা। ভালো শুরু পেয়ে গেছেন দুজনই। পুজারা ছিলেন বেশি সাবলীল। দিন শুরু করবেন তিনি ৪৩ রান নিয়ে। আগের দিন শেষ বিকেলে সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া মায়াঙ্ক শুরু করবেন ৩৭ রান নিয়ে।
দিনের খেলা শুরুর আগে অফিসিয়াল ব্রডকাস্টারদের আলোচনায় সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষণের অনুমান, ডাবল সেঞ্চুরি উপহার দেবেন পুজারা।
অপেক্ষায় কঠিন চ্যালেঞ্জ
টেস্ট ম্যাচ নিয়ে এমনিতেই আশা ছিল কম। বাংলাদেশ নিজেদের কাজটা আরও কঠিন করে ফেলেছে প্রথম দিনেই। ভারত নিয়েছে নিয়ন্ত্রণ। যেখান থেকে বাংলাদেশের ফেরার পথ কঠিন।
ভারত দ্বিতীয় দিনে মাঠে নামবে লিড নিয়ে যত দূর সম্ভব এগিয়ে যেতে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের থামানোর উপায় খুঁজতে হবে বাংলাদেশকে। লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলেও বাংলাদেশকে করতে হবে দারুণ কিছু।
প্রথম দিন শেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৮.৩ ওভারে ১৫০ (সাদমান ৬, ইমরুল ৬, মুমিনুল ৩৭, মিঠুন ১৩, মুশফিক ৪৩, মাহমুদউল্লাহ ১০, লিটন ২১, মিরাজ ০, তাইজুল ১, আবু জায়েদ , ইবাদত ; ইশান্ত ১২-৬-২০-২, উমেশ ১৪.৩-৩-৪৭-২, শামি ১৩-৫-২৭-৩, অশ্বিন ১৬-১-৪৩-২, জাদেজা ৩-০-১০-০)।
ভারত ১ম ইনিংস: ২৬ ওভারে ৮৬/১ (মায়াঙ্ক ৩৭*, রোহিত ৬, পুজারা ৪৩*; ইবাদত ১১-২-৩২-০, আবু জায়েদ ৮-০-২১-১, তাইজুল ৭-০-৩৩-০)।