প্রথম দিনেই বেহাল বাংলাদেশ

ইন্দোরে আগে ব্যাটিং নিয়ে ‘সাহস’ দেখালেও ২২ গজে বুক চিতিয়ে লড়াইটাও করতে পারল না বাংলাদেশের কেউ। ফিল্ডিংয়ে ভারতের বাজে দিনের পরও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় তাই দেড়শ রানেই শেষ তাদের প্রথম ইনিংস। বল হাতেও করতে পারেনি দুর্দান্ত কিছু। সব মিলে প্রথম দিনে বিবর্ণ মুমিনুল হকের দল, দারুণ অবস্থানে ভারত।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতইন্দোর থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2019, 10:20 AM
Updated : 14 Nov 2019, 03:42 PM

হলকার স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দিনের খেলা যখন শেষ তখনও আলো ঝলমল করছে ইন্দোরে। কিন্তু বাংলাদেশ দল ডুবে গেছে আঁধারে। শেষ সেশনে ব্যাট করে ১ উইকেটে ৮৬ রান করেছে ভারত। মায়াঙ্ক আগারওয়াল ৩৭ ও চেতেশ্বর পুজারা ৪৩ রানে ব্যাট করছেন।

বোলিংয়ে শুরুটা ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের। আগের সিরিজে তিনটি সেঞ্চুরি করা রোহিত শর্মাকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন আবু জায়েদ চৌধুরি। শুরুর সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি সফরকারীরা। ভারতকে এগিয়ে নেন মায়াঙ্ক ও পুজারা।

ছবি: বিসিসিআই

দিনের শেষ দিকে জুটি ভাঙার একটা সুযোগ এসেছিল। আবু জায়েদের বলে স্লিপে মায়াঙ্কের সহজ ক্যাচ মুঠোয় নিতে পারেননি ইমরুল কায়েস।

প্রথম দিন ভারত পিছিয়ে আছে ৬৪ রানে, হাতে আছে ৯ উইকেট। টেস্ট শুরুর দিনেই চাপে পড়ে যাওয়া মুমিনুলদের সামনে অপেক্ষা করছে আরও কঠিন সময়।

এর আগে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস টিকে মোটে ৫৮.৩ ওভার। ম্যাচের প্রস্তুতিপর্বে স্পিন সামলানোয় বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল তারা। মাঠের লড়াইয়ে নাস্তানাবুদ হলো পেসে। অবশ্য স্পিনের বিপক্ষেও তেমন কিছু করতে পারেনি তারা।

২৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে থামিয়ে দেওয়ায় সবচেয়ে বড় অবদান মোহাম্মদ শামির। দুটি করে উইকেট নেন ইশান্ত শর্মা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও উমেশ যাদব।

ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটে ভারতের তিন চৌকস পেসারকে সামলাতে বাংলাদেশের প্রস্তুতির ঘাটতি বেরিয়ে পড়ে শুরুতেই। উমেশ ও ইশান্তের একের পর এক বল যাচ্ছিল ইমরুল ও সাদমান ইসলামের ব্যাটের কানা ঘেঁষে।

দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান শুরু করেছিলেন বেশ সতর্কতায়। তবে যেতে পারেননি বেশিদূর। উমেশের লেংথ থেকে আচমকা লাফানো বল শক্ত হাতে খেলতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন ইমরুল। পরের ওভারে ফাঁদে ফেলে সাদমানকে কট বিহাইন্ড করেন ইশান্ত। ১২ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।

মনে হচ্ছিল যেন মুমিনুল ও মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটে শুরুর কঠিন সময় পার করে ফেলেছে বাংলাদেশ। ঠিক তখনই আঘাত হানেন শামি, দারুণ এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ মিঠুন।

এরপর নিজেদের সেরা জুটি পায় বাংলাদেশ। ইনিংসের একমাত্র পঞ্চাশ ছোঁয়া এই জুটি ভাঙতে পারতো শুরুতেই। উমেশের বলে স্লিপে বিরাট কোহলিকে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান মুশফিক। সে সময় ৩ রানে ছিলেন তিনি। পরে জীবন পান ১৫ ও ৩৪ রানে।

শুরুতে রাহানেকে কঠিন ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া মুমিনুল খেলছিলেন আস্থার সঙ্গে। কঠিন সময় পার করে দেওয়ার পর ধীরে ধীরে শট খেলতে শুরু করেন। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি তিনিও; অশ্বিনের স্লাইডার বুঝতে না পেরে ফিরেন বোল্ড হয়ে। নেতৃত্বের অভিষেকে নিজের প্রথম ইনিংসে ৬ চারে ৩৭ রান করেন মুমিনুল। ভাঙে ৬৮ রানের জুটি।

এরপর আর তেমন কোনো জুটি গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ৭ উইকেট হারায় ৫১ রানে।

শুরু থেকে নড়বড়ে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। স্পিন, পেস সবকিছুতেই ভুগছিলেন। কোণঠাসা দলকে টেনে তুলতে দরকার ছিল চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা, মাটি কামড়ে পড়ে থাকার; কিন্তু বাজে এক শটে বোল্ড হয়ে যান অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। ৭ রানে জীবন পেয়েছিলেন, সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তারপরও। বিদায় নেন দুই অঙ্ক ছুঁয়েই।

গিয়েই দারুণ এক কাভার ড্রাইভে শুরু করেন লিটন। তার সঙ্গে মুশফিকের জুটিতে দ্বিতীয় সেশন কাটিয়ে দেওয়ার আশা জেগেছিল। কিন্তু তাদের এলোমেলো করে দেন শামি।

দারুণ এক ডেলিভারিতে মুশফিককে বোল্ড করার পর এলবিডব্লিউ করেন মেহেদী হাসান মিরাজকে। টেস্টে প্রথমবারের মতো গোল্ডেন ডাকের স্বাদ পাওয়া অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার রিভিউ নিলে অবশ্য বেঁচে যেতেন। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা গেছে বল যাচ্ছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে।

প্রথম সেশনে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশনে হারায় চার উইকেট। তৃতীয় সেশনে তাদের ইনিংস টেকে মাত্র ৪.৩ ওভার। শেষ ৫ উইকেট হারায় মাত্র ১০ রানে।

তৃতীয় সেশনের প্রথম বলেই কট বিহাইন্ড লিটন। শামির হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেওয়া তাইজুল ইসলাম ফিরেন রান আউট হয়ে। দারুণ এক ডেলিভারিতে ইবাদত হোসেনকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেন উমেশ।

সব মিলে চিত্রটা বড্ড হতাশার। ১৯ বছরে যেন একটুও পাল্টায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেট। ব্যাটিং নিয়ে বা পেয়ে প্রথম দিনই গুটিয়ে যাওয়া, শেষ সেশনে প্রতিপক্ষের ইনিংস শুরু হওয়া। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে নতুন শুরুর দিকে তাকিয়ে থাকা বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে দেখাতে পারেনি উন্নতির কোনো নমুনা। ব্যাটসম্যানরা দেখাতে পারেননি লড়াইয়ের মানসিকতা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৮.৩ ওভারে ১৫০ (সাদমান ৬, ইমরুল ৬, মুমিনুল ৩৭, মিঠুন ১৩, মুশফিক ৪৩, মাহমুদউল্লাহ ১০, লিটন ২১, মিরাজ ০, তাইজুল ১, আবু জায়েদ ৭*, ইবাদত ২; ইশান্ত ১২-৬-২০-২, উমেশ ১৪.৩-৩-৪৭-২, শামি ১৩-৫-২৭-৩, অশ্বিন ১৬-১-৪৩-২, জাদেজা ৩-০-১০-০)।

ভারত ১ম ইনিংস: ২৬ ওভারে ৮৬/১ (মায়াঙ্ক ৩৭*, রোহিত ৬, পুজারা ৪৩*; ইবাদত ১১-২-৩২-০, আবু জায়েদ ৮-০-২১-১, তাইজুল ৭-০-৩৩-০)।