বাংলাদেশের ওপর জেতার ‘চাপ নেই’

ভারত সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা যেভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল তেমন কিছু না হলেই চলবে-বাংলাদেশের জন্য ব্যাপারটা যেন এমন। সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবালবিহীন দলকে নিয়ে ভারতের বিপক্ষে নেই খুব একটা প্রত্যাশা। জিততে হবে-এমন কোনো চাপ দেখছেন না নতুন অধিনায়ক মুমিনুল হক।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতইন্দোর থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2019, 02:50 PM
Updated : 13 Nov 2019, 03:08 PM

ইন্দোরের হলকার স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হবে সিরিজের প্রথম টেস্ট। এই ম্যাচ দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে যাত্রা শুরু হবে বাংলাদেশের, নেতৃত্বে অভিষেক হবে মুমিনুলের।

বাংলাদেশের বাস্তবিক লক্ষ্য

কোহলিরা মাঠে নামবেন নিখুঁত সিরিজ খেলার স্মৃতি নিয়ে, সেখানে বাংলাদেশ ভুলতে চেষ্টা করছে ভুলে ভরা আগের টেস্ট। ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি বৃষ্টির সহায়তা নিয়েও বাঁচাতে পারেনি তারা। সেখানে এবার নেই দেশের সফলতম ক্রিকেটার সাকিব। সঙ্গে সফলতম ব্যাটসম্যান তামিমও। তাদের ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তবিক লক্ষ্য কি?

“আমি বারবারই বলছি, এটা আমাদের জন্য সুযোগ। আমরা সবাই সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। লক্ষ্য অবশ্যই ভালো খেলা। আমরা জেতার জন্যই মাঠে নামব। আপনি যখন যাদের বিপক্ষেই খেলেন, প্রতিপক্ষ যত শক্তিশালীই হোক, কেউ হারার জন্য মাঠে নামে না। সবাই সব সময় জেতার জন্যই মাঠে নামে। আমিও এভাবেই ভাবি। আমরা সব সময় সব ম্যাচে জেতার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামি।”

-অধিনায়ক মুমিনুল হক

দেশের মাটিতে ভারতের রেকর্ড দুর্দান্ত। সবশেষ ৩২ টেস্টের ২৬টিতে জিতেছে তারা। ড্র হয়েছে পাঁচ ম্যাচ, হেরেছে কেবল একটিতে। জিতেছে রেকর্ড টানা ১১ সিরিজ।

সবশেষ সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দাঁড়াতেই দেয়নি ভারত। প্রথম ম্যাচ জিতেছিল ২০৩ রানে। পরের দুটিতে ইনিংস ব্যবধানে। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে হারের পর বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান বলেছিলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ভালো করলেই তা হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাওয়া।”

সিরিজে প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে আসা অধিনায়ক মুমিনুলের কণ্ঠেও যেন সেই সুর।

“আমার মনে হয়, আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। কারণ, আমাদের নিয়ে কোনো প্রত্যাশা নেই। আপনারাও জানেন, আমরাও জানি, সবাই জানে। আমাদের ওইরকম চাপ নেই যে, আমাদের জিততে হবে। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব।”

এ নিয়ে সম্পূরক প্রশ্ন মাঝপথে থামিয়ে ব্যাখ্যা দেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।

“জেতার প্রত্যাশার কথা বলিনি। আপনারা যেভাবে বলছেন, তেমন প্রত্যাশা নেই। যখন কোনো খেলোয়াড় মাঠে নামে, সে সবসময় জেতার জন্যই খেলে। যখন আপনি বেশি প্রত্যাশা নিয়ে কথা বলবেন তখন চাপ চলে আসবে।”

সবশেষ সিরিজে ভারতের তিন ব্যাটসম্যান করেন ডাবল সেঞ্চুরি। আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের তাদের তিন জন আছে ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা পাঁচে, দশে আছে চার জন। বোলারদের ৬ জন আছে সেরা পঁচিশে।

ভারতের ক্রিকেটাররা কেমন ছন্দে আছে, তার প্রতিফলন র‌্যাঙ্কিংয়ে। এমন একটি দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাওয়াটাই যেন বড় করে দেখছেন মুমিনুল।

“আমার মনে হয়, এটা ভালো সুযোগ সবার জন্য। সবাই খেলছে, ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবাই খুব ভালো করে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করতে চায়।”

“টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপকে সবাই একটা সুযোগ হিসেবে দেখছে। সবাই উদগ্রীব হয়ে আছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুও হচ্ছে ভারতের বিপক্ষে। সবাই পারফরম করার জন্য উদগ্রীব।”

কোহলিরা মাঠে নামবেন নিখুঁত সিরিজ খেলার স্মৃতি নিয়ে, সেখানে বাংলাদেশ ভুলতে চেষ্টা করছে ভুলে ভরা আগের টেস্ট। ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি বৃষ্টির সহায়তা নিয়েও বাঁচাতে পারেনি তারা। সেখানে এবার নেই দেশের সফলতম ক্রিকেটার সাকিব। সঙ্গে সফলতম ব্যাটসম্যান তামিমও। তাদের ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তবিক লক্ষ্য কি?

“আমি বারবারই বলছি, এটা আমাদের জন্য সুযোগ। আমরা সবাই সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। লক্ষ্য অবশ্যই ভালো খেলা। আমরা জেতার জন্যই মাঠে নামব। আপনি যখন যাদের বিপক্ষেই খেলেন, প্রতিপক্ষ যত শক্তিশালীই হোক, কেউ হারার জন্য মাঠে নামে না। সবাই সব সময় জেতার জন্যই মাঠে নামে। আমিও এভাবেই ভাবি। আমরা সব সময় সব ম্যাচে জেতার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামি।”

উন্নতি কোথায় করা যায় তা যেন আতশী কাঁচ দিয়ে খুঁজছেন কোহলি। একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সেগুলো হয়েও যাবে। আপাতত তার লক্ষ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দল যে উঁচুমানের ক্রিকেট খেলেছিল সেটার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা।

“আপনি সব সময় উন্নতি করার মতো জায়গাগুলো খুঁজবেন। সত্যি বলতে কি, সবশেষ সিরিজের পর বেশি কাজ করতে হবে এমন কোনো কিছু চিহ্নিত করা খুব কঠিন। আমার মনে হয়, আমরা একটা নিখুঁত সিরিজ খেলেছিলাম। চ্যালেঞ্জ হবে সেই মান আবারও ধরে রাখা এবং ওই রকম ক্রিকেট খেলা। আমার মনে হয়, ছেলেরা তা করার মতো মানসিক অবস্থায় আছে। আমার মনে হয় না, খুব বেশি কাজ করার আছে।”

হলকার স্টেডিয়ামে এর আগের একমাত্র টেস্টে নিউ জিল্যান্ডকে সহজেই হারিয়েছিল ভারত। টেস্টে দলটি আছেও দারুণ ছন্দে। তবে অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে নারাজ কোহলি।

“জয়ের কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর জন্য আমাদের ভালো খেলতে হবে। সেরাটা দিতে না পারলে জেতা সম্ভব হবে না। আত্মতুষ্টি এমন কিছু যা আমাদের দূরে রাখা প্রয়োজন।”    

ভারত দারুণ গোছানো দল। কাকে রেখে কাকে খেলানো যায়, এ নিয়ে আছে মধুর সমস্যা। সেখানে বাংলাদেশকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে অনেক কিছু নিয়ে। এর একটি হলো, টেস্টের পেস বোলিং আক্রমণ। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে একটি সত্যিকারের পেস বোলিং আক্রমণ গড়ে তুলতে পারেনি তারা। সব সময়ই থেকেছে পুনর্গঠনের পর্যায়ে। আল আমিন হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, আবু জায়েদ চৌধুরী ও ইবাদত হোসেনের আরেকটি অগ্নিপরীক্ষা হতে যাচ্ছে এই সিরিজ।

দেশের মাটিতে দারুণ সফল মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। দেশের বাইরে ততটাই সংগ্রাম করতে হয় তাদের। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সামনে তাদেরও দিতে হবে বড় পরীক্ষা।  

ঘটনাবহুল সময় পেরিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করতে যাচ্ছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের জগতে। মুমিনুলের হাত ধরে শুরু হতে যাচ্ছে নতুন অধ্যায়।