আক্ষেপের সিরিজ হতে পারতো প্রাপ্তির

সফর শুরুর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজে একটি জয়ের কথা বললে হয়তো খুশিই হতো বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতে এসে যেমন খেলল দল, তাতে আক্ষেপই বাড়ছে। একটু হিসেবি, আরেকটু পরিণত ক্রিকেট খেললে হয়তো আক্ষেপের জায়গায় প্রাপ্তির হতে পারতো এই সিরিজ।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতনাগপুর থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2019, 02:35 AM
Updated : 11 Nov 2019, 02:36 AM

তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। এবারই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে কোনো ম্যাচে হারাতে পেরেছে তারা।

হুট করে খেলোয়াড়দের ডাকা ধর্মঘটের জন্য সফর নিয়ে জেগেছিল শঙ্কা। এর সমাধান হতেই বাংলাদেশের ক্রিকেট খায় বড় ধাক্কা। জুয়াড়িদের প্রস্তাব গোপন করার দায়ে সাকিসব আল হাসানকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি।

চোটের জন্য ছিটকে যান পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। পারিবারিক কারণে নিজেকে সরিয়ে নেন তামিম ইকবাল। নিয়মিত একাদশের তিন খেলোয়াড়কে হারিয়ে বড় ধাক্কা খাওয়া বাংলাদেশের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল মনোবল ফিরে পাওয়া, দল হিসেবে মাঠে নামা।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখনও পায়ের নিচে মাটি শক্ত হয়নি বাংলাদেশের। অচেনা অনেক অলি-গলি। সেখানে সাকিব-তামিম-সাইফকে ছাড়া খেলতে নেমে সঠিক কম্বিনেশন খুঁজে বের করা ছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

সাকিব না থাকলে সবসময়ই সঠিক কম্বিনেশন পেতে ভুগতে হয় বাংলাদেশকে। কখনও বোলার আবার কখনও ব্যাটসম্যান কম নিয়ে দল সাজাতে হয়। এবার ব্যাটিংয়ে শক্তি বাড়িয়ে নামে সফরকারীরা।

তিন পেসারের সঙ্গে একজন লেগ স্পিনার নিয়ে গড়ে বোলিং আক্রমণ। পঞ্চম বোলারের শূন্যতা পূরণে অনিয়মিত পেসার সৌম্য সরকারের সঙ্গে ছিলেন তিন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন, আফিফ হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ।        

দেশ থেকে ভারতে এসে আরেক অস্বস্তিতে পড়ে দল। দিল্লির বায়ু দূষণ। ভারতের রাজধানীতে ম্যাচের দিন দূষণের মাত্র এতো বেড়ে যায় যে ম্যাচ মাঠে গড়ানো নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত বিকেলে নাটকীয়ভাবে উন্নতি ঘটে পরিস্থিতির। মাঠে তার চেয়েও বেশি নাটকীয় ক্রিকেটে দারুণ এক জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।

ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সেই প্রথম জয়ে ভিত গড়ে দেন বোলাররা। তবে জয়টা মোটেও সহজে আসেনি। এক সময়ে বেশ কঠিন হয়ে পড়া সমীকরণ মেলান মুশফিক। কিপার-ব্যাটসম্যানের অসাধারণ ইনিংসে সিরিজে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।

পরের ম্যাচে দলকে ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার। এর সুবিধা কাজে লাগাতে পারেননি পরের ব্যাটসম্যানরা। অনেক বড় সংগ্রহের আশা জাগিয়েও বাংলাদেশ থেমে যায় দেড়শ রানে গিয়ে। রোহিত শর্মার বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ৮ উইকেটের অনায়াস জয় পায় ভারত।

তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে লক্ষ্য ছিল চ্যালেঞ্জিং। এবারও তালগোল পাকান ব্যাটসম্যানরা। মোহাম্মদ নাঈম শেখের অসাধারণ ইনিংসে আশা জাগিয়ে রাখা বাংলাদেশ পারেনি শেষের ব্যর্থতায়। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে মেলাতে পারেনি ৮ ওভারে ৬৯ রানের সমীকরণ। হেরে যায় ৩০ রানে। নাঈম ও মোহাম্মদ মিঠুন ছাড়া আর কেউ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে।

গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। এবারের ম্যাচটি ফাইনাল ছিল না, তবে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ তো একরকম ফাইনালের মতোই। হতাশার চিত্রটা পাল্টানোর সুযোগ ছিল মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকুর রহিমদের সামনে। নিদারুণভাবে ব্যর্থ হলেন তারা। যে সিরিজ হতে পারতো প্রাপ্তির, নিজেদের নতুন উচ্চতায় তুলে নেওয়ার, সেখানে তা হয়ে থাকল চরম আক্ষেপের।