বাংলাদেশের বেশির ভাগ ক্রিকেটারের মতো আফিফের উঠে আসাও বয়সভিত্তিক দল দিয়ে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাংলাদেশের। ১৭ বছর বয়সে বিপিএল অভিষেকে ৫ উইকেট নিয়ে নজর কাড়েন। গত বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে পা রাখেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ভালো করতে না পারায় ছিটকে যান।
তবে ভড়কে যাননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরর্ম করেছেন। ভালো করেছেন বিসিবি একাদশ, বাংলাদেশ ‘এ’ দলে। জাতীয় দলে ফেরেন গত সেপ্টেম্বরে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে।
এবার আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আট নম্বরে নেমে ২৬ বলে ৫২ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলে জেতান হারতে বসা দলকে।
তার মাঝে তরুণ বয়সের সাকিব আল হাসানের ছায়া দেখেন অনেকে। একইরকম ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলেন দুজন। রাজকোটে মঙ্গলবার দলের অনুশীলন শেষে প্রসঙ্গটি উঠতেই আফিফ জানিয়ে দিলেন, তার মাঝেও বাস করেন একজন সাকিব।
“সাকিব ভাইকে একদম ছোট থেকেই ফলো করি…।”
সাকিবের মতো ‘জেনুইন’ অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে তারও। সবশেষ দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে যদিও তার বোলিংই ছিল বেশি কার্যকর। সেপ্টেম্বরে ত্রিদেশীয় সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে বোলিংয়ের ৩ ওভারে ৯ রানে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। ঝড় তোলা হজরতউল্লাহ জাজাইকে থামানোর পর বিদায় করেছিলেন অভিজ্ঞ আসগর আফগানকে।
বোলিংয়ের ঝলক আবার দেখালেন ভারতের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও। দিল্লিতে ৩ ওভারে ১১ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। গতি বৈচিত্র্য আর লেংথ পরিবর্তন করে বেঁধে রাখেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের।
তবে ২০ বছর বয়সী ক্রিকেটার আপাতত নিজেকে দেখছেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবেই।
“অবশ্যই আমি একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার। শেষ ম্যাচে আমার ব্যাটিংয়ের সুযোগ আসেনি। বোলিংয়ে সুযোগ এসেছে। সেখানে আমি দলের জন্য পারফর্ম করার চেষ্টা করেছি। ব্যাটিংয়ে সুযোগ এলে আমি একইভাবে চেষ্টা করবো আমার সেরাটা দেয়ার।”
দিল্লিতে একজন বোলার কম নিয়ে খেলেছিল বাংলাদেশ। ৪ ওভারের জন্য সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন ও আফিফের দিকে তাকিয়ে ছিল দল। মূলত আফিফের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পঞ্চম বোলারের উপর চেপে বসতে পারেনি ভারত।
“বোলিংয়ে আলাদা কোনো ভাবনা ছিল না। ডট বল খেলানোর চেষ্টা করছিলাম।”
বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ ড্যানয়েল ভেটোরির সঙ্গে এখনো খুব বেশি কাজ করা হয়ে উঠেনি আফিফের। নিউ জিল্যান্ডের সাবেক বাঁহাতি স্পিনারের কাছ থেকে নতুন কিছু শিখতে মুখিয়ে আছেন তিনি।
“নতুন তেমন কিছু এখনো শেখা হয়নি। অন্য বোলারদের নিয়ে অনেক কাজ করলেও আমার সঙ্গে ততটা করা হয়নি। আমি সব সময় যেমন করে থাকি, আমাকে সেটাই করে যেতে বলেছেন তিনি।”
ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের গত আসরে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন আফিফ। যেতে পারেননি অনাপত্তি পত্র না পাওয়ায়। অনেকেই তার মাঝে দেখেন বিপুল সম্ভাবনা। তাদের প্রত্যাশা মেটাতে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন আফিফ।
“অবশ্যই ব্যাপারটা উপভোগ করছি। পারফর্ম করলে সবার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। চেষ্টা করব আরও ভালো করে তাদের প্রত্যাশা মেটাতে।”
“জার্নিটা অনেক আনন্দদায়ক। এখানে এসে অনেক কিছু শিখতে পারছি। জাতীয় দলের সঙ্গে প্রথম সফর। শুরু থেকে রোমাঞ্চিত ছিলাম। প্রথম থেকেই চেষ্টা করছিলাম, এখানে এসে যেন আমি নিজের সেরাটা দিতে পারি।”
বৃহস্পতিবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ, আরেকবার তরুণ আফিফের দিকে তাকিয়ে থাকবে দল।