স্বস্তি নিয়ে রাজকোটে বাংলাদেশ দল

বিশ্বের অন্যতম দূষিত নগরী ছেড়ে বাংলাদেশ দলের এবারের ঠিকানা ভারতের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহরগুলো একটি। দিল্লি থেকে সোমবার রাজকোটে পৌঁছেছেন মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকুর রহিমরা। পরিবেশের মতো পরিবর্তন এসেছে দলের আবহেও। দিল্লির জয়ে সবার ভেতরের গুমোট ভাব কেটে গিয়ে বইছে স্বস্তির সুবাতাস।  

ক্রীড়া প্রতিবেদকদিল্লি থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2019, 02:27 PM
Updated : 4 Nov 2019, 03:00 PM

প্রথম ম্যাচের আগে অনুশীলনের ফাঁকে মোসাদ্দেক হোসেন বলেছিলেন, তিনটি ম্যাচই জিততে চায় দল। অতীত রেকর্ড আর সাম্প্রতিক বাস্তবতা বলছিল, সেটি স্রেফ কথার কথা। কিন্তু প্রথম ম্যাচে জয়ের পর মনে হচ্ছে, অসম্ভব নয় কিছুই!

সেই বিশ্বাস ছড়িয়ে গেছে দলেও। প্রথম ম্যাচের জয়ে দারুণ বোলিং করা আমিনুল ইসলামের কণ্ঠে শোনা গেল সেই বিশ্বাসের প্রতিধ্বনি। তরুণ এই লেগ স্পিনার জানালেন, ধারাবাহিকতা ধরে রেখে সিরিজ জয়ের কাজটা তারা সেরে ফেলতে চান রাজকোটেই।

“ভারত অনেক বড় দল। ওরা অনেক ভালো দল। আমাদের আত্মবিশ্বাসের জন্য ওদের বিপক্ষে জেতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সবাই দারুণ চেষ্টা করেছে, আমরা জিতেছি। সবাই খুব খুশি।”

“প্রথম ম্যাচটা জিতেছি। এখন লক্ষ্য দিন দিন আরও উন্নতি করা। পরের ম্যাচে যদি ভালো খেলতে পারি, তাহলে জিতব ইনশাল্লাহ।”

ভারতকে প্রথমবার টি-টোয়েন্টিতে হারালেও তেমন একটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়নি বাংলাদেশকে। সংবাদ সম্মেলনে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় মুশিফকুর রহিম জানিয়েছিলেন, উদযাপন তুলে রাখছেন তারা সিরিজ জয়ের জন্য।

জয়ের পর বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমেও ছিল না বাড়তি কোনো উদযাপন। সবার প্রতি বার্তা ছিল, “মোমেন্টাম ধরে রাখতে হবে। ভালো শুরুটা কাজে লাগাতে হবে। আর ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ’ ভালো খেলে যেতে হবে।”

দিল্লিতে কেটেছে গেরো। ভারতের বিপক্ষে নবমবারের চেষ্টায় বাংলাদেশ পেয়েছে জয়ের স্বাদ। দিল্লি ম্যাচের পর বাংলাদেশ আরও বেশি সমীহ আদায় করে নিয়েছে রোহিত শর্মার।

বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেওয়া হয়েছিল কি না, এই প্রশ্নে বেশ বিরক্ত ছিলেন ভারত অধিনায়ক। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ যে ব্যবধান ক্রমশ কমিয়ে আনছে, সেটা বেশ ভালোভাবেই অনুভব করছেন তিনি। বুঝতে পারছেন, সিরিজ জেতার লড়াই এখন বহুগুণ কঠিন হয়ে গেছে।

“দেখুন, আগে কত দিন পরপর আমরা বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতাম আমি জানি না। সেই সময়ে ওদের দল কেমন ছিল, সেটাও জানি না। তবে এটা জানি, ওই দল আর এই দলের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। এই দলে অনেক নতুন খেলোয়াড় আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন অনেক পরিণত, তারা অঘটন ঘটায় না, প্রতিপক্ষকে হারায়।”

স্রেফ পিঠ চাপড়ানো কথা নয়। সাম্প্রতিক সময়ে উপমহাদেশের সবেচেয়ে বেশি রোমাঞ্চ ছড়াচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশের লড়াই। শক্তিতে বেশ পিছিয়ে থাকলেও মনোবল আর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে বাংলাদেশ। দিল্লিতে মাহমুদউল্লাহদের জয় দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন অধ্যায়ের। প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলতে এসেই ভারতকে হারিয়ে দিয়েছে তারা।

ভারত দলে নেই বিরাট কোহলি, জাসপ্রিত বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়া। বাংলাদেশও পাচ্ছে না সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনকে। দুই দলই যথেষ্ট শক্তি হারিয়েছে, তারপরও বেশ এগিয়ে থেকে সিরিজে ফেভারিট ভারত। কারণ, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অলিগলি সব চেনা তাদের। বাংলাদেশের যিনি চিনতেন, সেই সাকিব নিজের ভুলে আটকা পড়েছেন অন্ধ গলিতে। সেই আঁধার কাটানোর মিশন নিয়ে নেমেছেন মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকুর রহিমরা।

তাদের তরুণ সঙ্গী আফিফ হোসেন, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, আমিনুল ইসলামদের ক্যারিয়ারের গতিপথ নির্ধারণ করে দিতে পারে এবারের সফর। নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে হবে সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মোসাদ্দেকেরও। সিরিজ জিততে তাদের সবার জ্বলে ওঠার দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ।

ভারতে সফরকারী পেসাররা ইদানিং সুবিধা করতে পারছেন না। স্বাগতিক বোলারদের আলোয় ম্লান দেখায় তাদের। এই সিরিজে ব্যাপারটি হতে পারে উল্টো। মুস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম, আল আমিন হোসেন ও আবু হায়দারকে নিয়ে গড়া বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণ বেশ শক্তিশালী ও অভিজ্ঞ। কোনো সন্দেহ নেই সিরিজে তাদের রাখতে হবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

ভারতের বিপক্ষে হারানোর কিছু নেই বাংলাদেশের। পাওয়ার আছে অনেক কিছু। ৭ উইকেটের জয়ে খুলেছে এর দুয়ার। বাকিটুকু পাওয়ার পথ সহজ হবে না। দেশের মাটিতে একের পর এক সিরিজে সফরকারীদের উড়িয়ে দেওয়া ভারত মরিয়া থাকবে দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে। তাই রাজকোটে হবে রাসেল ডমিঙ্গোর দলের শক্তি-সামর্থ্য-স্কিলের সত্যিকারের পরীক্ষা।

দিল্লিতে বায়ু দূষণের জন্য ম্যাচ হবে কি না-তা নিয়ে জেগেছিল শঙ্কা। রাজকোটে শঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে সাইক্লোনের জন্য। একই সঙ্গে উজ্জীবিত বাংলাদেশকে দেখেও নিশ্চয়ই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রোহিত, রবি শাস্ত্রিদের কপালে!