বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়

খর্ব শক্তি ও ভাঙা মনোবল নিয়ে প্রায় অসাধ্য সাধন করল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার হারিয়ে দিল ভারতকে।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2019, 12:51 PM
Updated : 4 Nov 2019, 05:28 AM

প্রথমবার ভারত-জয়

টি-টোয়েন্টিতে আগের ৮ বারের দেখায় একবারও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম জয়টি এলো দেশের ক্রিকেটের দারুণ দুঃসময়ে। মুশফিকুর রহিমের দারুণ ইনিংস দলকে এনে দিল বহু কাঙ্ক্ষিত জয়।

মুশফিকের ব্যাটে দারুণ জয়

এবার আর কাছে গিয়ে হারের যন্ত্রণায় পুড়তে হলো না মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহকে। জয়ের হাসি তাই বাংলাদেশ শিবিরেও। মুশফিকের দুর্দান্ত ইনিংসে ধরা দিল দারুণ জয়। ৩ বল বাকি রেখে বাংলাদেশ জিতেছে ৭ উইকেটে।

গত কয়েক বছরে বেশ কবার কাছে গিয়েও হেরেছিল বাংলাদেশ। মুশফিক নিজে পারেননি কাজ শেষ করতে। এবার সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি হয়নি। ৪৩ বলে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে মুশফিক ফিরেছেন দলের জয় সঙ্গে নিয়ে।

শেষ ২ ওভারে যখন প্রয়োজন ২২ রান, ১৯তম ওভারের শেষ চার বলে খলিল আহমেদকে টানা চার মেরে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যান মুশফিক।

২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৩ বলে ২ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেননি মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। এবার মাহমুদউল্লাহও ছিলেন উইকেটে। শেষ ওভারে তার ছক্কায় নিশ্চিত হয়েছে জয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ২০ ওভারে ১৪৮/৬ (ধাওয়ান ৪১, রোহিত ৯, রাহুল ১৫, শ্রেয়াস ২২, পান্ত ২৭, দুবে ১, পান্ডিয়া ১৫*, সুন্দর ১৪*; শফিউল ৪-০-৩৬-২, আল আমিন ৪-০-২৭-০, মুস্তাফিজ ২-০-১৫-০, আমিনুল ৩-০-২২-২, সৌম্য ২-০-১৬-০, আফিফ ৩-০-১১-১, মোসাদ্দেক ১-০-৮-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১০-০)

বাংলাদেশ: ১৯.৩ ওভারে ১৫৪/৩ (লিটন ৭, নাঈম ২৬, সৌম্য ৩৯, মুশফিক ৬০*, মাহমুদউল্লাহ ১৫*; চাহার ৩-০-২৪-১, সুন্দর ৪-০-২৫-০, খলিল ৪-০-৩৭-১, চেহেল ৪-০-২৪-১ , পান্ডিয়া ৪-০-৩২-০, দুবে ০.৩-০-৯-০ )।

মুশফিকের ফিফটি

খলিল আহমেদের বলে টানা দুই বলে বাউন্ডারিতে পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন মুশফিকুর রহিম। ৪১ বলে স্পর্শ করলেন ফিফটি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার পঞ্চম ফিফটি।

জীবন পেলেন মুশফিক

যুজবেন্দ্র চেহেলের বলে স্লগ সুইপ করেছিলেন মুশফিক। মারে জোর ছিল না যথেষ্ট। বল যায় মিড উইকেট সীমানায় ক্রুনাল পান্ডিয়ার কাছে। সহজ ক্যাচ। কিন্তু পান্ডিয়ার হাত গলে বেরিয়ে গেল বল, মাটি ছুঁয়ে বল গেল সীমানার বাইরে।

৩৮ রানে বেঁচে গেলেন মুশফিক।

জুটি ভাঙলেন খলিল

রানের চাপ বাড়ছিল। তাই চলছিল নানাভাবে  রান বের করার চেষ্টা। সেই চেষ্টাতেই আউট হলেন সৌম্য সরকার।

খলিল আহমেদের স্টাম্প সোজা স্লোয়ার বল জায়গা বানিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন সৌম্য। ব্যৌাটে-বলে হয়নি, বল লেগেছে স্টাম্পে।

৩৫ বলে ৩৯ রানে ফিরেছেন সৌম্য। ভাঙল ৬০ রানের জুটি। 

বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ১১৪। শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ৩৫ রান।

জুটির ফিফটি

সৌম্য সরকার ও মুশফিকুর রহিমের জুটি স্পর্শ করেছে পঞ্চাশ। তৃতীয় উইকেটে দুজনের জুটির ফিফটি এসেছে ৪৮ বলে। জুটিতে ৩০ রান করেছেন মুশফিক, ১৮ সৌম্য।

সৌম্য-মুশফিকের জুটি

নাঈম আউট হওয়ার পর জুটি গড়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন মুশফিকুর রহিম ও সৌম্য সরকার। রানের গতি দারুণ না হলেও দলকে রান তাড়ার পথে রেখেছেন দুজন।

১৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৯৪। শেষ ৬ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ৫৫ রান।

রিভিউ হারাল ভারত

সৌম্য সরকারকে আউট করার জন্য রিভিউ নিয়েছিল ভারত। কিন্তু লাভ হয়নি। হারিয়েছে তারা একমাত্র রিভিউটি।

যুজবেন্দ্র চেহেলের বল সৌম্যর ব্যাটের পাশ দিয়ে যায় রিশাভ পান্তের গ্লাভসে। ভারতের কিপার আবেদন করেন জোরালো। আবেদন করেন বোলার চেহেলও। বোলারের সঙ্গে আলোচনা করে সময় শেষ হওয়ার মাত্র ২ সেকেন্ড আগে রিভিউ নেন রোহিত শর্মা। কিন্তু রিভিউয়ে দেখা যায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই ছিল সঠিক।

এর আগে ওই ওভারে আরও দুইবার মুশফিকের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করেছিলেন চেহেল। আম্পায়ার সাড়া দেননি একবারও। রিপ্লেতে দেখা গেলে, দুইবারই রিভিউ নিলে সফল হতো ভারত।

চাপে হেরে গেল নাঈম

নিজের প্রথম ওভারেই ভারতকে কাঙ্ক্ষিত ব্রেক থ্রু এনে দিলেন যুজবেন্দ্র চেহেল। নিজের প্রথম ওভারেই এই লেগ স্পিনার ফেরালেন মোহাম্মদ নাঈম শেখকে।

টানা তিনটি ডট বলে নাঈমের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন চেহেল। সেই চাপ মুক্তির জন্যই হয়তো স্লগ করলেন নাঈম, কিন্তু জোর পেলেন না শটে। বল উঠল কেবল আকাশে, সীমানা থেকে অনেক ভেতরে ক্যাচ নিলেন শিখর ধাওয়ান।

নাঈমের প্রথম আন্তর্জাতিক ইনিংস শেষ হলো ২৮ বলে ২৬ রানে। ১৪৯ রান তাড়ায় বাংলাদেশ ৭.৫ ওভারে ২ উইকেটে ৫৪।

বাংলাদেশের ফিফটি

পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর বোলিংয়ে এসেছেন খলিল আহমেদ। প্রথম বলেই জায়গা বানিয়ে শট খেলে বাঁহাতি পেসারকে বাউন্ডারিতে স্বাগত জানিয়েছেন সৌম্য সরকার। ওই ওভারেই একটি ওয়াইড বলে বাংলাদেশের স্কোর পঞ্চাশ স্পর্শ করল ৬.৩ ওভারে।

শুরুর ধাক্কা সামাল

প্রথম ওভারেই লিটনকে হারানোর ধাক্কা সামলে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। শুরুতে অস্বস্তি থাকলেও আস্তে আস্তে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন নাঈম শেখ। দিপক চাহারকে ফ্লিকে ছক্কার পর ওই ওভারেই বাউন্ডারি মারেন ড্রাইভে। নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে থাকা ওয়াশিংটন সুন্দরকে সুইচ হিটে ছক্কা হাঁকান সৌম্য।

৬ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৪৫। ২৩ বলে ২৫ রান নিয়ে খেলছেন নাঈম, ৯ বলে ১২ সৌম্য।

শুরুতেই শেষ লিটন

বাংলাদেশের শুরু অনেকটাই হলো ভারতের মতো। দারুণ দুটি শট খেলে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিলেও লিটন দাস ফিরে গেলেন প্রথম ওভারেই।

দিপক চাহারের লেংথ বল সুইং করে বেরিয়ে যাচ্ছিল একটু। লিটন যেন সংশয়ে ভুগলেন, খেলবেন নাকি ছাড়বেন। শেষ পর্যন্ত দ্বিধা নিয়েই খেললেন, সহজ ক্যাচ দিলেন কাভার পয়েন্টে।

৪ বলে ৭ রান করে বিদায় নিলেন লিটন। বাংলাদেশ ১ উইকেটে ৯।

লড়িয়ে পুঁজি

ইনিংসের বেশির ভাগ জুড়ে ধুঁকলেও শেষ পর্যন্ত লড়িয়ে সংগ্রহ গড়েছে ভারত।

পিচ রিপোর্টে মুরালি কার্তিক, সুনীল গাভাস্কার যেটি বলেছিলেন, উইকেট দেখা গেল তার উল্টো। বেশ মন্থর উইকেট, বল ব্যাটে আসেনি ঠিকমতো। টার্নও পেয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। ভারতের একাদশে মূল স্পিনারই আছেন তিনজন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাজটি তাই সহজ হওয়ার কথা নয়।

বোলাররা অবশ্য ম্যাচে রেখেছে বাংলাদেশকে। গত মাসে অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে ২ উইকেট নেওয়ার পর আঙুলের চোটে ছিটকে পড়া লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম ফিরেই আবার নিয়েছেন ২ উইকেট। আরেক স্পিনার আফিফ হোসেনও ছিলেন দুর্দান্ত।

শেষ ওভারে খরুচে বোলিং করলেও শফিউল নিয়েছেন ২ উইকেট।  তিন বছর পর ফেরা আল আমিন প্রথম তিন ওভারে ভালো বোলিং করেছেন। তবে শেষ ওভারে তিনিও ছিলেন খরুচে।

ভারত: ২০ ওভারে ১৪৮/৬ (ধাওয়ান ৪১, রোহিত ৯, রাহুল ১৫, শ্রেয়াস ২২, পান্ত ২৭, দুবে ১, পান্ডিয়া ১৫*, সুন্দর ১৪*; শফিউল ৪-০-৩৬-২, আল আমিন ৪-০-২৭-০, মুস্তাফিজ , আমিনুল ৩-০-২২-২, সৌম্য ২-০-১৬-০, আফিফ ২-০-১৫-০, মোসাদ্দেক ১-০-৮-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১০-০)

দেড়শর কাছে ভারত

শেষ দুই ওভারে ওয়াশিংটন সুন্দরের ৩ ছক্কায় রান হুট করেই একটু বাড়িয়ে নিয়েছে ভারত। ২০ ওভারে তারা তুলেছে ৬ উইকেটে ১৪৮ রান।

শফিউলকে একটি ছক্কা মারার পর ইনিংসের শেষ ওভারে আল আমিন হোসেনকে ছক্কা মারেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা মারেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। শেষ ২ ওভারে ভারত তোলে ৩০ রান।

শফিউলের শিকার পান্ত

মুস্তাফিজুর রহমানের ওভার বাকি থাকলেও শফিউল ইসলামকে বোলিং দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। শফিউল আস্থার প্রতিদান দিলেন রিশাভ পান্তকে ফিরিয়ে।

বাঁহাতিদের বিপক্ষে মুস্তাফিজ একটু কম কার্যকর বলেই হয়তো শফিউলকে এনেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এই পেসারের স্লোয়ার লেংথ বল উড়িয়ে মেরেছিলেন পান্ত। কিন্তু জোর পাননি যথেষ্ট। আবারও সীমানায় ক্যাচ নিয়েছেন নাঈম শেখ।

২৬ বলে ২৭ রান করে আউট হলেন পান্ত। ১৯তম ওভারে ভারত ৬ উইকেটে ১২০।

আফিফের প্রথম

দারুণ বোলিং করতে থাকা আফিফ হোসেন পেলেন প্রথম সাফল্য। নিজের বলে দারুণ ক্যাচে ফিরিয়ে দিলেন অভিষিক্ত শিবম দুবেকে।

স্টাম্পে থাকা বলটি ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন দুবে। টাইমিং হয়নি ঠিকমতো, ব্যাটের ওপরের কানায় লেগে বল চলে যাচ্ছিল বোলারের মাথার ওপর দিয়ে। লাফিয়ে এক হাতে বল তালুবন্দী করেন আফিফ।

দুবের অভিষেক ইনিংস শেষ ৪ বলে ১ রানে। ভারত ১৬ ওভার শেষে ৫ উইকেটে ১০২।

ভারতের একশ

মন্থর পথচলায় অবশেষে একশ ছুঁতে পারল ভারত। ১৬তম ওভারে আফিফ হোসেনের বলে রিশাভ পান্তের বাউন্ডারিতে পেরিয়েছে তারা একশ।

রান আউটে থামলেন ধাওয়ান

শুরু থেকে এক প্রান্ত আগলে রাখা শিখর ধাওয়ান মাত্রই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন হাত খোলার। বেরিয়ে এসে ছক্কা মারেন মাহমুদউল্লাহকে। কিন্তু রান আউট হয়ে গেলেন সেই ওভারেই।

মিড উইকেটের দিকে ঠেলে প্রথম রান দ্রুত নিয়েছিলেন ধাওয়ান। দ্বিতীয় রান নেওয়ার চেষ্টাতেই গড়বড়। রিশাভ পান্ত কল করেও পরে ফিরিয়ে দিলেন ধাওয়ানকে। ফেরার সুযোগ পাননি ধাওয়ান।

৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ বলে ৪১ রান করে ফিরলেন ধাওয়ান। ১৪.৫ ওভারে ভারত ৪ উইকেটে ৯৫।

আমিনুলের দ্বৈরথ জয়

উইকেটে যাওয়ার পর থেকে দারুণ আগ্রাসী খেলছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। দুই ওভারে দারুণ দুটি ছক্কা মারেন আমিনুল ইসলামকে। তবে তৃতীয়বারে হাসলেন এই লেগ স্পিনার। ফিরিয়ে দিলেন শ্রেয়াসকে।

শ্রেয়াসের মনোভাব বুঝেই হয়তো একটু টেনে ও ঝুলিয়ে বল করে ব্যাটসম্যানকে প্রলুব্ধ করেছিলেন আমিনুল। শ্রেয়াস পা দিয়েছেন ফাঁদে। যথেষ্ট জোর পাননি শটে। সীমানায় ক্যাচ নিয়েছেন অভিষিক্ত নাঈম শেখ।

১৩ বলে ২২ রান করে ফিরলেন শ্রেয়াস। ভারত ১০.২ ওভারে ৩ উইকেটে ৭০। ওপেনার ধাওয়ান খেলছেন ২৭ বলে ২৪ রানে।

শুরুতেই সফল আমিনুল

পাওয়ার প্লে শেষ হতেই আক্রমণে এলেন আমিনুল ইসলাম। তরুণ লেগ স্পিনার সাফল্য পেলেন নিজের প্রথম ওভারেই। ফেরালেন লোকেশ রাহুলকে।

অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বলটি আরও বেরিয়ে যাচ্ছিল টার্ন করে। বলের গতি অনুমান করতে পারেননি রাহুল। পিচ করার পর টার্ন ছিল আরও মন্থর। খেলতে গিয়ে নিজেকে সামলাতে চাইলেও পারেননি রাহুল। সহজ ক্যাচ গেছে শর্ট কাভারে মাহমুদউল্লাহর হাতে।

১৭ বলে ১৫ রান করে ফিরলেন রাহুল। ভারত সপ্তম ওভারে ২ উইকেটে ৩৬।

‘পাওয়ার’ ছাড়া পাওয়ার প্লে

পাওয়ার প্লেতে ভারতকে খুব বেশি ‘পাওয়ার’ ক্রিকেট খেলতে দেয়নি বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে রোহিত শর্মাকে হারানোর পর শিখর ধাওয়ান ও লোকেশ রাহুল এগিয়েছেন সতর্ক ব্যাটিংয়ে। পাওয়ার প্লেতে তাই রান ওঠেনি বলপ্রতিও। ৬ ওভারে ভারতের রান ১ উইকেটে ৩৫।

তিন ওভার বোলিং করেছেন শফিউল। তিন বছর পর দলে ফেরা আল আমিন হোসেন করেছেন ২ ওভার। আরেকটি মুস্তাফিজুর রহমান।

শুরুতেই শফিউলের আঘাত

ম্যাচের প্রথম বলে বাউন্ডারিতে শুরু। পঞ্চম বলে বাউন্ডারি আরেকটি। রোহিত শর্মার কাছে দুটি বাউন্ডারি হজমের পর শেষ বলে শোধ তুললেন শফিউল ইসলাম। ভেতরে ঢোকা বলে ফিরিয়ে দিলেন রোহিতকে। ভারতীয় অধিনায়ক টিকলেন না রিভিউ নিয়েও।

অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা বল সিমে পড়ে ঢোকে ভেতরে। রোহিতের ডিফেন্সকে ফাঁকি দিয়ে লাগে পায়ে। শফিউলের আবেদনে সাড়া দিতে খুব একটা সময় নেননি আম্পায়ার। অপরপ্রান্তে শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে রিভিউ নেন রোহিত। আম্পায়ার্স কলে টিকে থাকে শফিউলের সাফল্য।

৫ বলে ৯ রান করে ফিরলেন রোহিত। প্রথম ওভার শেষে ভারতের স্কোর ১ উইকেটে ১০।

প্রথমবার দুবে

হার্দিক পান্ডিয়ার চোটে স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়া শিবম দুবে জায়গা পেয়েছেন একাদশেও। কোচ রবি শাস্ত্রীর কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্যাপ। ২৬ বছর বয়সী পেস বোলিং অলরাউন্ডারের এটি আন্তর্জাতিক অভিষেক।

ভারত একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, শ্রেয়াস আইয়ার, রিশাভ পান্ত, শিবম দুবে, ক্রুনাল পান্ডিয়া, ওয়াশিংটন সুন্দর, যুজবেন্দ্র চেহেল, দিপক চাহার, খলিল আহমেদ।

নাঈমের অভিষেক

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্যাপ পেয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই প্রথমবার খেলতে নামছেন এই টপ অর্ডার। গত মাসে দেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে থাকলেও কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি ২০ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ৬৭তম ক্রিকেটার তিনি।

বাংলাদেশ একাদশ: সৌম্য সরকার, লিটন দাস, নাঈম শেখ, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, আমিনুল ইসলাম, শফিউল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, আল আমিন হোসেন। 

টসে হাসি বাংলাদেশের

মুদ্রা নিক্ষেপ করলেন রোহিত শর্মা, মাহমুদউল্লাহ ডাকলেন ‘হেড'। জিতলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, বেছে নিলেন বোলিং।

মাহমুদউল্লাহ জানালেন, ভারতকে যত কমে সম্ভব আটকে রান তাড়া করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

রোহিত জানালেন, রাতে শিশির পড়বে বলে টস জিতলে আগে বোলিং নিতেন তারাও। তবে আগে ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জ জিততে চান ভারত অধিনায়ক।

ব্যাটিং সহায়ক উইকেট

উইকেট দেখে আগের দিন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ যেটি বলেছিলেন, সেটির প্রতিফলন পড়ল টিভির পিচ রিপোর্টে ধারাভাষ্যকারদের কণ্ঠে। মুরালি কার্তিক জানালেন, এই মাঠের প্রথাগত উইকেটের মতো নয় এই ম্যাচের উইকেট। বরং বেশ শক্ত।

আরেকটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করলেন সুনীল গাভাস্কার, “এর চেয়ে ভালো উইকেট এখানে অনেক দিন ধরে দেখিনি। বল ব্যাটে আসবে সুন্দরভাবে। একটু আর্দ্রতা আছে বলে শুরুতে একটু মুভমেন্ট থাকতে পারে। তবে স্পিনারদের জন্য সহায়তা ততটা থাকবে না। ব্যাটসম্যানরা এখানে দারুণ উপভোগ করবে।”

গাভাস্কারের মতে, রাতের শিশিরের জন্য টস জয়ী দল হয়তো পরে ব্যাট করতে চাইবে।

হাজারতম টি-টোয়েন্টি

২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের লড়াই দিয়ে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি পথচলা। দ্রুত জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে সেই সংস্করণ আজ স্পর্শ করছে চার অঙ্কের মাইলফলক। ভারত ও বাংলাদেশের লড়াই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১ হাজারতম ম্যাচ।

ভারতও নয় পূর্ণ শক্তির

অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে এই সিরিজে বিশ্রাম দিয়েছে ভারত। তার জায়গায় নেতৃত্ব দেবেন রোহিত শর্মা। মাঠের ক্রিকেটে অনেকে অবশ্য রোহিতকেই অধিনায়ক হিসেবে এগিয়ে রাখেন। চোটের কারণে ভারত পাচ্ছে না মূল স্ট্রাইক বোলার জাসপ্রিত বুমরাহ ও অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়াকে। তারপরও সিরিজে পরিষ্কার ফেবারিট তারাই। 

নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াই

ভারতে গিয়ে ভারতের সঙ্গে লড়াই এখন ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। বাংলাদেশ সেই চ্যালেঞ্জে নামছে ভীষণ কঠিন এক সময়ে। সফরের ঠিক আগে নিষিদ্ধ হয়েছেন দেশের সেরা পারফমার সাকিব আল হাসান। বড় ভরসা তামিম ইকবাল পারিবারিক কারণে সফর থেকে ছুটি নিয়েছেন আগেই। চোটের কারণে নেই মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।

ভাঙাচোরা দলের সঙ্গে যোগ হয়েছে ভাঙা মন। আচমকা সাকিবকে হারানোর ধাক্কা দল কতটা সামলে উঠতে পেরেছে, বড় প্রশ্ন সেটিই।

ম্যাচের আগে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অবশ্য বলেছেন, সাকিবের অনুপস্থিতিই তাদের জন্য প্রেরণার। তবে বাস্তবতা হলো, ম্যাচে লড়াই জমাতে হলেও নিজেদের সামর্থ্যের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে হবে বাংলাদেশকে।