সাকিববিহীন পথের শুরুতে চনমনে বাংলাদেশ

ক্রিকেটারদের আন্দোলন শেষ হতেই সাকিব আল হাসানের ওপর আইসিসির নিষেধাজ্ঞার আঘাত। বাংলাদেশের ক্রিকেটে বয়ে যাওয়া কয়েক দিনের ঝড়ো হাওয়া শেষে ভারতে এসে কিছুটা ভালো লাগছে, বলছিলেন রাসেল ডমিঙ্গো। দিশেহারা শিষ্যদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন পরিবর্তন। সতেজ হয়ে উঠছে সবাই। দেশের সেরা ক্রিকেটারকে ছাড়া পথ চলার শুরুতে চনমনে হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ দল।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতদিল্লি থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2019, 08:57 PM
Updated : 1 Nov 2019, 10:31 PM

আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় এক বছর দলের বাইরে থাকতে হবে সাকিবকে, যা বড় এক ধাক্কা দিয়েছে সতীর্থদের। সে আঘাত কাটিয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট সময়ও মেলেনি। এরই মাঝে নামতে হচ্ছে মাঠের লড়াইয়ে। দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় রোববার হবে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি।

বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারকে হারানোর ধাক্কা অবশ্য নাড়িয়ে দিতে পারেনি ক্রিকেটারদের। শুরুর হতবিহ্বল অবস্থা কাটিয়ে ধীরে ধীরে পরিস্থিতিটা বুঝতে শুরু করেছেন তারা। শুরু হয়েছে দলে ভারসাম্য এনে দেওয়া অলরাউন্ডারকে ছাড়াই এগিয়ে যাওয়ার কাজ। 

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সময়টাও বেশ কিছুদিন ধরে ভালো যাচ্ছে না। গত বিশ্বকাপের শেষ দুই রাউন্ড দিয়ে শুরু হয় দিক হারানোর। পরে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে হতে হয় হোয়াইটওয়াশড। দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে হারের পর দল পড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে।

পরে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দেখায় হেরে বসে। তখন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান থেকে শুরু করে প্রায় সব ক্রিকেটার টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের চেয়ে আফগানদের এগিয়ে রেখে সমালোচনাকে আরও উস্কে দেন।

মাঠের ক্রিকেটের সেই বাজে অবস্থার মাঝে বাইরের পরিস্থিতিও ঘোলাটে হয়ে ওঠে। ১১ দফা দাবিতে ক্রিকেটাররা ধর্মঘট ডাকলে ভারত সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা জাগে। দুই দিন পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকার পর হয় সমাধান। এরই মধ্যে দাবি বাড়ে আরও দুটি। বোর্ডের আশ্বাসে মাঠে ফেরেন ক্রিকেটাররা।

তবে ফেরে না স্বস্তি। চার দিনের অনুশীলন ক্যাম্পে প্রথম দিন ছিলেন না সাকিব। দ্বিতীয় দিন যোগ দেওয়ার পর অনুপস্থিত আবার পরের দুই দিন। শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা এবং এরপরই আসে সাকিবের নিষেধাজ্ঞার খবর।

এমন পরিস্থিতির মাঝে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষে হিসেবে পেয়েছে ভারতকে। ঘরের মাঠে যারা প্রায় অপরাজেয়।

দেশের মাটিতে সময়টা দুর্দান্ত কাটছে দলটির। তাদের দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দেওয়ার স্মৃতি এখনও তাজা। উড়তে থাকা দলটির সামনে কতটা লড়াই করতে পারবে বাংলাদেশ? তাও আবার সাকিব ও তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে।

ভারত সফরের বাংলাদেশ দল নিয়ে বাজি ধরার লোক হয়তো খুব বেশি পাওয়া যাবে না। রবি শাস্ত্রির শিষ্যদের বিপক্ষে তাদের খুব একটা সম্ভাবনা অনেকেই দেখেন না। তবে সেসব নিয়ে ভাবছেন না ক্রিকেটাররা।

দূষণে অনেকটা গ্যাস চেম্বার হয়ে উঠেছে দিল্লি। শ্বাস নেওয়াই কঠিন। তারপরও এখানে এসেই যেন স্বস্তির শ্বাস ফেলতে পারছেন ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। কঠিন কয়েকটি দিন কাটানোর পর খেলায় ফিরতে পারাটা শিষ্যদের জন্য কতটা স্বস্তি বয়ে এনেছে, অনুভব করতে পারছেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ। 

“এখানে আসতে পেরে ভালো লাগছে। বাংলাদেশে কিছু চ্যালেঞ্জিং দিন কিংবা বলতে পারি সপ্তাহ শেষে এখানে এসেছি। কখনও কখনও এমন সময় আসে, তখন দল আরও কাছাকাছি চলে আসে। এখানে আসার পর ছেলেরা খুব ভালো আছে, ওরা প্রাণশক্তিতে ভরপুর। ছেলেদের দেখে রিল্যাক্সড ও খুশি মনে হচ্ছে্।”

মুখে মাস্ক পরে ফিল্ডিং অনুশীলনের পর দেখা গেল ফুরফুরে মেজাজের বাংলাদেশ দলকে। যেন কোনো চাপ নেই তাদের। ব্যাটিং-বোলিং উপভোগ করছেন। বোলাররা বোলিংয়ের সময় ফিল্ডিং সাজিয়ে কোনো একটা লক্ষ্য দিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন ব্যাটসম্যানদের। কখনও ব্যাটসম্যান জিতছেন, কখনও বোলার।

শার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট প্রাণপণে খাটছেন পেসারদের নিয়ে। একটু পর কোনো না কোনো পেসারের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেল তাকে। স্পিন বোলিং কোচ ড্যানিয়েল ভেটোরি সারাক্ষণ উৎসাহ দিয়ে গেলেন আরাফাত সানি, তাইজুল ইসলামদের।

নিল ম্যাকেঞ্জি যথারীতি ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের নিয়ে। মোসাদ্দেক হোসেন, সৌম্য সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন অনেকটা সময় নিয়ে। মোহাম্মদ মিঠুনের কাঁধ ধরে স্টান্স ঠিক দিলেন ম্যাকেঞ্জি।

এই সিরিজ দিয়ে জাতীয় দলে ফেরা আল আমিন হোসেন মুখিয়ে আছেন নিজেকে উজার করে দিতে। সাকিবকে হারানোর শোক ভুলে দেশকে সম্মানজনক কিছু উপহার দেওয়ার লক্ষ্য এই পেসারের।

“আমরা ‘ন্যাশনাল ডিউটি’ পালন করতে এসেছি। প্রত্যেকে দেশের জন্য খেলবে। কে নেই ওটা নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। পৃথিবীর কোনো শোকই বেশি দিন থাকে না। শোক কিছু থাকলে সেটা শক্তিতে পরিণত করে জাতিকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারলে সবার সম্মান বাড়বে। আমরা দেশের সম্মানের জন্য খেলব।”

হুট করে দলে ফেরা ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন বললেন, “সবাই ভালো আছে। খেলা ছাড়া কোনো চিন্তা নেই।”

এরই মধ্যে দিল্লিতে স্কুল বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দমবন্ধ অবস্থা প্রথম ম্যাচের শহরে। খেলার বাইরেও তাই ভাবার কিছু ব্যাপার তো আছেই বাংলাদেশের।