ক্রিকেটারদের দাবিগুলো নিয়ে যা বললেন বিসিবি প্রধান

বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্র, দেশের ক্রিকেটকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত, এই ধরনের কথা বারংবার তো ছিলই। পাশাপাশি ক্রিকেটারদের ১১ দফা দাবির বেশ কিছু নিয়ে সরাসরিই কথা বলেছেন নাজমুল হাসান। দাবির কিছু বোর্ড এমনিতেই পূরণ করছে, কিছু পূরণ করার প্রক্রিয়া এমনিতেও চলছে বলে দাবি করলেন বিসিবি প্রধান। আর কিছু দিলেন উড়িয়ে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2019, 02:43 PM
Updated : 22 Oct 2019, 04:02 PM

ক্রিকেটারদের প্রথম দাবি ছিল ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা কোয়াবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ। এই দাবির সঙ্গে যদিও বিসিবির সম্পর্ক নেই, তবু কোয়াবের সভাপতি একজন বোর্ড পরিচালক (সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান) বলেই ছিল বেশি প্রশ্ন।

তবে এটি বোর্ডের ব্যাপার নয় বলে কথাই বলতে চাইলেন না নাজমুল হাসান। উল্টো শোনালেন কোয়াবকে তারা স্বীকৃতিই দিতে চাননি একসময়, পরে নাকি নানান অনুরোধে দেন স্বীকৃতি।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বিতর্কিত ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েজ’ পদ্ধতি চালু করার সময় নাজমুল হাসান বলেছিলেন, “নিশ্চয়তা দিচ্ছি এটি শুধু এবারের জন্যই।” পরে সেই পদ্ধতিই থেকে গেছে, যেখানে ক্রিকেটারদের নিজস্ব দল ও পারিশ্রমিক ঠিক করার স্বাধীনতা নেই। এই দাবি নিয়ে বোর্ড প্রধান জানালেন, এর মধ্যেই তিনি এটিতে সম্মতি দিয়েছেন।

এত বছর চালু ছিল কেন, এই প্রশ্নে বিসিবি প্রধান জানালেন, ক্রিকেটাররা বাতিল চায়নি। যদিও প্রতি মৌসুমের আগে এই পদ্ধতি বাতিলের আকুতি করেছেন ক্রিকেটাররা, সংবাদমাধ্যমে এসেছে সেসব খবর। ক্রিকেটারদের অনুরোধ না রেখে বোর্ড বরাবরই শুনেছে ক্লাবগুলোর দাবি।

এবার বিপিএলের বিশেষ আসরের পর আগামী আসর থেকে আগের মতোই ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিতে পরিচালনার যে দাবি, সেটি নিয়ে নাজমুল হাসান বললেন, “প্রথম দিন থেকেই বলে আসছি, পরের বার থেকে আগের নিয়মে হবে।”

তবে বাস্তবতা হলো, পরের বারের আসর নিয়ে বিসিবি প্রধান অনেকবারই বলেছেন, "পরের টুর্নামেন্ট পরে দেখা যাবে।”  ক্রিকেটারদের অনিশ্চয়তা ছিল সেই কারণেই।

বিপিএল নিয়ে ক্রিকেটারদের অন্যতম দাবি, বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেশের ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের সামঞ্জস্য। এটি নিয়ে কোনো কথা বলেননি বিসিবি সভাপতি।

ব্রাদাস ইউনিয়নের কাছে গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পারিশ্রমিকের ৪০ শতাংশ এখনও পাওনা ক্রিকেটারদের। বোর্ড সভাপতির আশ্বাস, আগামী লিগের আগেই টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। যদিও বিসিবির নিয়ম অনুযায়ী, এই টাকা অনেক আগেই দেওয়ার কথা।

কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ক্রিকেটারদের সংখ্যা বাড়ানো ও বেতন বাড়ানো নিয়ে তার কথা, “অনেক দেশের চেয়েই আমাদের চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের সংখ্যা বেশি। কত জনকে রাখব? ২০০-৩০০ ক্রিকেটারকে টাকা দেব? আর আমরা দায়িত্বে আসার পর কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে ওদের টাকা।”

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর দাবিতে নাজমুল হাসানের অভিমত, “খারাপ দিচ্ছি, তা তো নয়!”

আদতে গত ৬-৭ বছরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বেড়েছে সামান্যই। উল্টো কমানো হয়েছে চুক্তিতে রাখা ক্রিকেটারদের সংখ্যা। তাদের পারিশ্রমিকের আরেকটি প্রশ্নে নাজমুল হাসান তাচ্ছিল্য ভরে বলেছেন, “খেলা পারে না… বাজে খেলে… ওদের টাকা দেব না।”

ক্রিকেটারদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল জাতীয় লিগের পারিশ্রমিক বাড়ানো। এখানে বোর্ড সভাপতি শোনালেন আশ্বাসের কথা।

“প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ম্যাচ ফি বাড়ানো…. হতে পারে, ব্যাপারটি আপেক্ষিক। ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার করেছি (দ্বিতীয় স্তরে), ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার করেছি (প্রথম স্তরে)। ওরা তো বলেনি যে আরও বাড়াতে হবে। বাড়ানো যেতে পারে আরও।”

ঘরোয়া ক্রিকেটে একদিনের ম্যাচের টুর্নামেন্ট বাড়ানোর দাবি নিয়ে বোর্ড সভাপতির ঝাঁঝালো কণ্ঠ।

“ঘরোয়া ওয়ানডে বাড়াতে হবে…কখন হবে, সময়টাও বলে দিয়েন! আর টুর্নামেন্ট করব, তখন খেলতে হবে ওদের, ফিটনেস বাড়াতে হবে…।”

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সময় ক্রিকেটারদের সুইমিং পুল ও জিমসহ হোটেলে রাখার দাবির কথা উঠে এসেছিল সাকিব আল হাসানের কণ্ঠে। বলেন ভালো মানের বাসে মাঠে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে। তাকে উদ্দেশ করে বোর্ড প্রধানের কথা, “একজন ক্রিকেটার, যে লিগে খেলে না, সে জানে কিছু? থেকেছে হোটেলে, চড়েছে বাসে? যে খেলেছে, সে বললেও মানায়।”

জাতীয় দলের খেলা না থাকলে দুটির বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে খেলতে দেওয়ার দাবির ব্যাপারটি তুলে ধরেছিলেন ফরহাদ রেজা। এই সিনিয়র ক্রিকেটারকে নিয়ে বিসিবি সভাপতির তির, “যে ক্রিকেটার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দাম পেল না, কখনও তাকে ডাকেনি, ডাকবেও না, সে বলে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দুইটির বেশি লিগে খেলতে দিতে হবে। হোয়াট ননসেন্স আর ইউ টকিং? ইজ দিজ আ জোক?”

নিজেদের দাবির পাশাপাশি মাঠকর্মী, আম্পায়ারদের আর্থিক সুরক্ষার কথাও বলেছেন ক্রিকেটাররা। এই দাবিগুলোতে বিসিবি প্রধান দেখতে পেয়েছেন ষড়যন্ত্র।

“এগুলোর সঙ্গে খেলার কি সম্পর্ক? কি প্রমাণ করতে চায়? স্টাফদের বেতনের সঙ্গে ওদের কি? এসব আম্পায়ার, গ্রাউন্ডসম্যান সবকিছু নিয়ে হচ্ছে কেন? এসব ষড়যন্ত্রের অংশ ছাড়া আর কিছু নয়। ভুল প্রমাণ হলে তো আমি খুশি। কিন্তু সন্দেহ করার যথেষ্ট করার আছে।”

ক্রিকেটারদের প্রতি বোর্ডের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো, প্রাপ্য সম্মান চাওয়া, এসব দাবি নিয়েও বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন নাজমুল হাসান।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওদের বাচ্চাদের নিয়ে খেলাধূলা করেন। প্রধানমন্ত্রী ওদের বাচ্চাদের কোলে নিয়ে হাঁটেন। কি ট্রিটমেন্ট চায় ওরা? একজন ক্রিকেটার বলতে পারবে ওদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি?”

যদিও শীর্ষ ক্রিকেটারদের নিয়ে নয়, প্রাপ্য সম্মানের দাবিটি ছিল মূলত জাতীয় দলের বাইরের ক্রিকেটারদের জন্য। গোটা সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের নিয়ে যে ভাষায় ও যে ভঙ্গিতে কথা বলেছেন দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থার প্রধান, তাতে প্রাপ্য সম্মানের দাবিটি যেন আরও জোরদার হয়ে উঠছে!