আল আমিনের এবার ‘শূন্য থেকে শুরু’

আশা যতটুকু বেঁচে ছিল, সবটুকুই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে ঘিরে। জাতীয় দলে ফিরতে পারলে তা ২০ ওভারের ক্রিকেট দিয়েই হবে, বিশ্বাস ছিল আল আমিন হোসেনের। তবে ফেরাটা এখনই হবে, সেই ভাবনা ছিল সামান্যই। বিস্ময় তাই একটু আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি আছে উচ্ছ্বাস। এই পেসারের চাওয়া এবার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নতুন করে সাজানো।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2019, 11:09 AM
Updated : 18 Oct 2019, 11:09 AM

বৃহস্পতিবার জাতীয় লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে খুলনায় প্রথম দিনের খেলা শেষে যখন মাঠ ছাড়ছেন, তখনই তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কয়েকজন। আল আমিন তখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। পরে বিভাগীয় দলের কোচ জানালেন, ফোন এসেছিল জাতীয় নির্বাচকের। এই ফোনের অপেক্ষায় কেটে গেছে কতশত প্রহর! রোমাঞ্চিত আল আমিন ড্রেসিং রুমে ফিরে ফোন করলেন প্রধান নির্বাচককে। জানতে পারলেন ফেরার খবর।

২০১৬ সালের মার্চে, ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবশেষ বাংলাদেশের হয়ে খেলেছিলেন আল আমিন। সেই ভারত সফরের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড দিয়েই আবার ফিরলেন বাংলাদেশ দলে। সুযোগ পেলেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবনের।

তবে থমকে যাওয়া ক্যারিয়ারে নতুন গতি দেওয়াই শুধু নয়, আল আমিন এই সুযোগকে দেখছেন একদম নতুন শুরু হিসেবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তার জন্য নতুন নয়। তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন, এবার ক্যারিয়ার গোছাতে চান নতুন করে।

“আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো কিছুদিন খেলেছি। ভালো করেছি, খারাপও করেছি। তারপর অনেক দিন বাইরে ছিলাম। লম্বা সময় বাইরে থাকায় একটা সময় আমার মনে হয়েছে, আর হারানোর কিছু নেই। এবার সুযোগ পেয়েছি, জিরো থেকে আবার সবকিছু শুরু করতে চাই। যতটুকু পাব, সেটিই অনেক।”

নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বল করছেন আল আমিন। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

প্রাপ্তির সন্ধানে নামতে হবে আপাতত টি-টোয়েন্টি দিয়ে। তবে ২০১৩ সালে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল টেস্ট দিয়ে। এই সংস্করণেই তার রেকর্ড সবচেয়ে মলিন। ৬ টেস্টে কেবল ৬টি উইকেট নিয়েছেন, গড় ৭৬.৬৬। ১৪ ওয়ানডেতে উইকেট ২১টি।

তুলনায় বেশ ভালো টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার। ২৫ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৩৯টি। সবশেষ বিপিএলে যদিও পারফরম্যান্স ছিল খুবই বাজে। তার পরও টি-টোয়েন্টিকে ঘিরেই আল আমিনের আশা ছিল নিজের সামর্থ্যের কারণেই। বরাবরই তিনি উইকেট শিকারী বোলার। ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায়েও পুরোনো এই পরিচয়টি ধরে রাখতে চান।

“আমার সবসময়ই মনে হতো, আবার জাতীয় দলে খেলতে পারলে টি-টোয়েন্টিতেই হবে। গত বিপিএল ভালো যায়নি, তবে আন্তর্জাতিক বলেন বা বিপিএল, আমার টি-টোয়েন্টি রেকর্ড তো বেশ ভালো। আর গত কয়েক বছরে তো অনেক পেসারই খেলল জাতীয় দলে, সেভাবে থাকতে পারলেন কয়জন? এসব দেখেই আশা জাগত যে আমার সুযোগ আসতে পারে।”

“টি-টোয়েন্টিতে আমার উইকেট নেওয়ার হার কিন্তু ভালো। সেটি ধরে রাখতে চাই।”

বাংলাদেশের হয়ে সবশেষ ম্যাচটিতেও বেশ ভালো বোলিং করেছিলেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে কলকাতায় ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। তবে সেই ম্যাচেই দৃষ্টিকটু এক ক্যাচ ছেড়েছিলেন, যা ভুগিয়েছিল দলকে।

তার ফিল্ডিং দুর্বলতা নিয়ে চর্চা ছিল আরও আগে থেকেই। সঙ্গে যোগ হয়েছিল আরও অনেক কিছু। শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বড় অঙ্কের জরিমানা গুণেছেন একবার। অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ক্রিকেট ও অনুশীলনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি, নিবেদন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সব মিলিয়ে জাতীয় দলের বিবেচনায়ই আসতে পারেননি সেভাবে।

এবারও তার দলে আসা অনেকটা হুট করেই। তিনি নিজে যেমন কিছুটা চমকেছেন, অবাক হয়েছে অনেকেই। এই চমকটাকেই এখন আল আমিন রূপ দিতে চান লম্বা সময়ের প্রশান্তিতে।

“অনেক কিছুই হয়েছে এই সময়ে। অনেক কথা হয়েছে। আমারও বলার থাকতে পারে। তবে সেসব আর মনে করতে চাই না। সব পেছনে ফেলে এখন সামনে তাকাতে চাই। আমি মনে করি, এখনও দলকে দেওয়ার কিছু আছে আমার। সেই প্রমাণ দিতে চাই।”

দলে ফেরার আগে বা দল ঘোষণার পরে জাতীয় দলের নতুন কোচ, বোলিং কোচ কিংবা টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, কারও সঙ্গে এখনও কথা হয়নি আল আমিনের। তবে নির্বাচকেরা জানিয়েছেন, তার কাছ থেকে কী চাওয়া হচ্ছে। আল আমিন সেভাবেই প্রস্তুত হতে চান। চোখ রাখছেন তিনি আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও।

“নান্নু ভাই (প্রধান নির্বাচক) বলেছেন টি-টোয়েন্টিতে আমার উইকেট নেওয়ার ক্ষমতার কারণেই দলে নেওয়া হয়েছে। বলেছেন যেন সুযোগটি পুরোপুরি নিতে পারি। আমি চেষ্টা করব। আগামী বছর বিশ্বকাপ আছে, নির্বাচকরা হয়তো বিশ্বকাপের কথাও ভাবছেন। আমিও চাইব ভালো খেলে যেন বিশ্বকাপ পর্যন্ত যেতে পারি।”