ফিটনেস নিয়ে ক্রিকেটারদের নির্বাচকের হুঁশিয়ারি

দ্বিতীয় দফায় বিপ টেস্টে উন্নতি করেছেন ক্রিকেটাররা। এরপরও বেঁধে দেওয়া ১১ পর্যন্ত যেতে পারেননি সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনেকেই। অন্যতম নির্বাচক হাবিবুল বাশার জানিয়েছেন, এবার হয়তো কিছুটা ছাড় পাবেন তারা। তবে ভবিষ্যতে ফিটনেস নিয়ে কোনো ছাড় থাকবে না কারোর জন্য।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2019, 12:57 PM
Updated : 6 Oct 2019, 01:47 PM

প্রথম দফার বিপ টেস্ট হয়েছিল উৎসব মুখর পরিবেশে। ফিটনেসের অবস্থা যাই থাকুক, পরীক্ষা বেশ উপভোগ করেছিলেন ক্রিকেটাররা। রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ইনডোরে দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় পাল্টে গেল চিত্র। এবার গুরুগম্ভীর পরিবেশে দিলেন ফিটেনেসের পরীক্ষা। দেখার সুযোগ দেওয়া হলো না সাংবাদিকদের।

সিলেট ছাড়া বাকি দলগুলোর ৪২ ক্রিকেটার ফিটনেস টেস্ট দিয়েছেন রোববার। পেসার আল আমিন হোসেন তুলেছেন ১২। মোহাম্মদ শরীফ ১১, ইমরুল কায়েস ১১.১। ১০ করে তুলেছেন রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ আশরাফুল ও আব্দুল রাজ্জাক। ১০.১ করে নাসির হোসেন ও তুষার ইমরান। সোহাগ গাজী থেমেছেন ৯.৮ করে।

বিপ টেস্ট চালুর পর থেকে এতদিন যাবৎ সবচেয়ে কম পয়েন্ট ছিল চট্টগ্রামের মাহবুবুল করিম ও ঢাকা বিভাগের রাসেল হাওলাদারের। তারা তুলেছিলেন ৬.১। তাদের চেয়েও কম স্রেফ ৫.৯ স্কোর করেছেন পেসার মোহাম্মদ শহীদ!

সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে ঢাকা বিভাগের ক্রিকেটাররা। ১৫ শতাংশ উন্নতি করে তাদের গড় পয়েন্ট ১১। সবচেয়ে কম উন্নতি হয়েছে বরিশাল বিভাগের। ৩ শতাংশ উন্নতি করে তাদের পয়েন্ট ১১.০২ পয়েন্ট।     

সোমবার নাগাদ লিগের দলগুলো দেওয়া হবে জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে হাবিবুল জানান, তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে দল সাজাচ্ছেন তারা। 

“আমরা আসলে কোনো বেঞ্চমার্ক ঠিক করি নাই। বয়স, পারফর্ম ও ফিটনেস টেস্টের ফল, এই তিনটা বিষয় দেখেই আমরা খেলোয়াড়দের দলে নিচ্ছি। যারা আজ টেস্ট দিয়েছে, তাদের ফলাফল আমরা হাতে পেয়েছি। এবার হয়তো অনেককে ছাড় দেওয়া হবে। কিন্তু ভবিষ্যতে ফিটনেসের ওপর কোনো ছাড় থাকবে না।”

বিপ টেস্টে ১২ স্কোর করা পেসার আল আমিন মনে করেন ফিটনেস নিয়ে কড়াকড়ি করায় ক্রিকেটারদেরই লাভ হবে। সারা বছর নিজের তাগিদেই ফিটনেস নিয়ে কাজ করবেন তারা।

“আমাদের ফিটনেস পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, এটা ভালো। মাঠে কিন্তু এটার গুরুত্ব আছে। তবে ফিটনেস বাড়াতে গেলে সারা বছর ক্রিকেটারদের কাজ করতে হবে।”

“একটা স্ট্যান্ডার্ড সেট করা উচিত। কাদের ১১ দিতে হবে, কাদের ১২ দিতে হবে, কাদের দশ দিতে হবে। খেলার ১৫ দিন আগে যদি এসে বলা হয় ১১ দেওয়া লাগবে, তখন কঠিন হয়ে যায়। এ বছর আমাদের ফিটনেস টেস্ট নিলো। আগামী বছর আবার কখন নেবে, সেটা আগে ভাগে জানানো হলে আমাদের জন্য উন্নতি করা সম্ভব হবে।”

আগেরবার ৯.৭ স্কোর করা আশরাফুল খুশি উন্নতি করতে পেরে। অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মনে করেন, খেলার মধ্যে থাকলে আরও বেশি উন্নতি হবে।

“আবার যদি বিপ টেস্ট দিতে হয়, দিবো। প্রক্রিয়াটা জানি না। খেলার মাঝে হয়তো দিতে হবে। আমাদের সবারই উন্নতি হয়েছে।”

“আগে জাতীয় লিগটা আমরা অতোটা সিরিয়াসভাবে নিতাম না। এখন কিন্তু সবাই অনেক সিরিয়াসলি নিয়েছি। ১১ স্কোর করতে হবে যার কারণে সবাই ১২/১৫ দিন আগে থেকে অনুশীলন শুরু করেছে। বেশিরভাগই কিন্তু ১১ দিয়েছে। আমরা যারা দিতে পারিনি, তাদেরও হয়ে যাবে। আমি বিশ্বাস করি, ১১ কঠিন কিছু নয়।”

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তুষার ইমরান। বয়স ও পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেওয়ার তাগিদ দিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।

“আজকে ৩০/৩৫ জনের মতো বিপ টেস্ট দিয়েছে। আগেরবার বিপ টেস্টে দেওয়া অনেকেই উন্নতি করেছে। তবে মানদণ্ড অনেকেই পূরণ করতে পারেনি। তাদের জন্য হয়তো জাতীয় দলের নির্বাচকরা চিন্তা করবেন। তাদের বয়স ও পারফরম্যান্স বিবেচনা করা যায় কিনা।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের সফলতম বোলার আব্দুর রাজ্জাক গুরুত্ব দিলেন বয়স বিবেচনা করে ফিটনেসের মানদণ্ড ঠিক করার দিকে। 

“ফিটনেস নিয়ে নিয়মিত কাজ করলে ট্রেনাররা বুঝবেন কাকে নিয়ে কিভাবে কাজ করা উচিত। কার জন্য কতো পয়েন্ট করা উচিত। আমার বয়সে এসে যদি আমাকে ১২ তুলতে বলা হয় তাহলে এটা আমার জন্য কঠিন এবং অসম্ভব প্রায়।”

রাজ্জাক মনে করেন, পারফরম্যান্সকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

“সবার আগে পারফরম্যান্স। আমার মনে হয় পারফরম্যান্স বিবেচনা করা উচিত সবার আগে। একজন ভালো খেলছে, ভালো আছে তখন তার জন্য মিনিমাম একটা ছাড় থাকা উচিত। তবে তার মানে এই না যে, তার ফিটনেস টেস্টের স্কোর খুব বাজে হবে। অবশ্যই একটা পর্যায়ে থাকতে হবে। নয়তো ছাড় পাওয়া যাবে না।”

“ফিট থাকার দরকার আছে। খেলতে হলে ফিটনেস লাগবেই। পারফরম্যান্সের আগে ফিটনেস বলা ভুল হবে। যদি খেলতে হয় তাহলে পারফর্ম করতেই হবে। আর ফিট না থাকলে পারফর্ম করতে পারবেন না।”

একই ধরনের উইকেট না বানিয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগে তিন ধরনের উইকেট বানানোর পরামর্শ দিলেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি এই স্পিনার।

“তিন ধরনের উইকেটে খেললে আরও ভালো হবে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে খেললে আমরা টার্নিং উইকেট নিয়ে থাকি। ওদের স্পিনারদের সামলানোর প্রস্তুতিটা যেন আমরা জাতীয় লিগে নিতে পারি। সে জন্য অমন স্পিনিং উইকেটে খেলা দরকার। তাহলে ব্যাটসম্যানদের স্পিনে ভীতি থাকবে না।”

“বিভিন্ন দলের বিপক্ষে পরিস্থিতি হয়তো বাধ্য করবে ব্যাটিং উইকেট বানাতে। ব্যাটসম্যানদের যেন ওই মানসিকতা থাকে যে লম্বা সময় ব্যাটিং করতে হবে। আর সিমিং উইকেট। উপমহাদেশের বাইরে যে দেশেই যাবো আমাদের জন্য ঘাসের উইকেট বানাবে। সেটার জন্য আমাদের সিমিং উইকেট তৈরি করতে হবে। এটা আমার মাথায় আসছে তা না, হয়তো উনাদের মাথায়ও আছে। হয়ে যাবে।”