জাতীয় লিগে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকদের চাওয়া

গোটা দলের সঙ্গে রানিং, ফিটনেস ট্রেনিং করলেন সময় নিয়ে। এরপর মিরপুর একাডেমির মাঠে নেটে ব্যাটিং টানা প্রায় দেড় ঘণ্টা! নেট থেকে যখন বেরিয়ে এলেন, ঘেমে-নেয়ে তখন একাকার মাহমুদউল্লাহ। ‘জাতীয় লিগের জন্য এত কঠিন প্রস্তুতি?’, কণ্ঠ শুনে ফিরে তাকালেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, “রান করতে হবে ভাই, প্রচুর রান…।”

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2019, 02:37 PM
Updated : 3 Oct 2019, 02:39 PM

মাহমুদউল্লাহ ও তার মতো জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা এবার জাতীয় লিগ খেলবেন, বড় খবর এটিই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততা নেই এখন বাংলাদেশ দলের। নভেম্বরে ভারত সফরে আছে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ। সব মিলিয়ে জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটারদের বেশির ভাগই এবার খেলবেন জাতীয় লিগের অন্তত দুটি রাউন্ডে। এমনিতে বরাবরই নানা পর্যায়ে অবহেলিত টুর্নামেন্ট ঘিরে তাই এবার আগ্রহ তুমুল।

স্রেফ খেলার জন্যই খেলা নয়, জাতীয় লিগে জাতীয় তারকাদের চাওয়া আছে কিছু। সেই চাওয়ার সঙ্গে পাওয়াগুলোকে এক বিন্দুতে মেলাতে চেষ্টাও চলছে দেখার মতো। অনুশীলনে তারা ঘাম ঝরাচ্ছেন নিয়মিত। বৃহস্পতিবার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের নানা প্রান্তে সবাইকে দেখা গেল অনুশীলনে ব্যস্ত সময় কাটাতে।

মাহমুদউল্লাহ

ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ সবশেষ খেলেছেন গত বছরের এপ্রিলে, বিসিএলে। জাতীয় লিগে সবশেষ খেলেছেন সেই ২০১৫ সালে। তারকারা জাতীয় লিগে খেলতে চান না, এই অভিযোগের তির তার দিকেও ছোটে। মাহমুদউল্লাহ বর্ম বানালেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততাকে।

“দেখুন, বেশির ভাগ সময়ই জাতীয় লিগ যখন হয়, জাতীয় দলের খেলা থাকে। কখনও আবার দেখা যায়, জাতীয় দলের খেলা মাত্রই শেষ হলো। তখন শরীরকে রিকভারি টাইম দিতে হয়। সব মিলিয়েই খেলা হয়ে ওঠে না। কিন্তু আমরা খেলতে চাই না, এটা ঠিক নয়। খেলাই আমাদের কাজ, সুযোগ থাকলে খেলব না কেন?”

এবার সুযোগটা এসেছে অনেক দিন পর, মাহমুদউল্লাহ তাই রোমাঞ্চিত। সামনে ভারত সফর বলেও বেড়ে যাচ্ছে টুর্নামেন্টের গুরুত্ব। ঢাকা মেট্রোপলিটনের হয়ে খেলার এই সুযোগ কাজে লাগাতে চান ভারত সফরের প্রস্তুতির জন্য।

“ম্যাচ খেলতে পারাই বড় অনুশীলন। যেটা বলছিলাম, আমি রান করতে চাই প্রচুর। রান করা একটি অভ্যাসের মতো। এখানে রান করলে সেটি জাতীয় দলেও কাজে লাগবে। আত্মবিশ্বাস ভালো থাকবে।”

“রান করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ উইকেটে প্রচুর সময় কাটানো। দুটিই করতে চাই আমি। আর চাই বল সিলেকশন আরও ভালো করতে। ভারতের বিপক্ষে টেস্টে এটি গুরুত্বপূর্ণ হবে। ওদের যা বোলিং শক্তি, বাজে বল মিলবে কদাচিৎ। উইকেটে টিকে থাকা ও শট খেলা বা ছাড়ার সঠিক বল নির্বাচন বড় ব্যাপার হবে। জাতীয় লিগে সেই কাজগুলি ঠিকঠাক করতে চাই এবার।”

টেস্টের প্রস্তুতি যখন, উইকেট ও প্রতিপক্ষের বোলিং শক্তিও চলে আসে আলোচনায়। বোলিংয়ের মান নিয়ে রাতারাতি করার আছে সামান্যই। তবে উইকেট নিয়ে দাবি আছে মাহমুদউল্লাহর।

“আমি চাই কঠিন উইকেট। ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন। খুব বাজে ব্যাটিং উইকেট অবশ্যই নয়। তবে চাই এমন উইকেট দেওয়া হোক, যেখানে রান করা অনেক কঠিন হবে। তাহলে টেস্টের জন্য ভালো অনুশীলন হবে বলে মনে করি আমি।”

মুশফিকুর রহিম

নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন যথারীতি। পাশাপাশি ফিল্ডিং অনুশীলনও মুশফিকুর রহিম করেছেন সময় নিয়ে। জাতীয় লিগে কিপিং না করার সম্ভাবনা আছে, নিজেকে তাই প্রস্তুত রাখছেন ফিল্ডিংয়ের জন্য।

বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচের প্রতি তার অনুরাগ বরাবরেই। তাই আন্তর্জাতিক ব্যস্ততার ফাঁকে সুযোগ পেলে টুকটাক খেলেছেন ঘরোয়া প্রথম শ্রেণিতে। মাহমুদউল্লাহর মতো তারও সবশেষ ম্যাচ বিসিএলে, গত বছরের এপ্রিলে। তবে জাতীয় লিগ চার বছর আগে নয়, খেলেছিলেন ২০১৭ সালে। তার আগে ২০১৫ সালে জাতীয় লিগে খেলেন চার ম্যাচ।

এবার দুটি ম্যাচ অন্তত খেলতে চান। তিনিও বড় করে দেখছেন ম্যাচ অনুশীলনকেই।

“আমাদের ভাবনায় তো ভারত সফর থাকবেই। যে কোনো পর্যায়েই ম্যাচ খেলার চেয়ে বড় অনুশীলন আর নেই। সেখানে জাতীয় লিগ তো আমাদের প্রধান টুর্নামেন্ট এই ফরম্যাটের জন্য। আশা করি খুব ভালো প্রস্তুতি হবে।”

“স্রেফ খেলার জন্য খেলে লাভ নেই। রান করলে, উইকেটে সময় কাটালে তবেই এখানে খেলাটা কাজে দেবে। আশা করব, জাতীয় লিগে ভালো খেলে টেস্টের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারব।”

ভালো প্রস্তুতি চান বলে উইকেট নিয়ে বলার আছে মুশফিকেরও। তিনি আরও নির্দিষ্ট করে বললেন, কেমন উইকেট হওয়া উচিত।

“জাতীয় লিগে উইকেট তো বরাবরই বড় একটি ইস্যু। অনেক সময়ই দেখা গেছে, উইকেটে ঘাস আছে। কিন্তু ২-১ ঘণ্টা পরই সেই ঘাস মিশে গিয়ে ভালো ব্যাটিং উইকেট হয়ে যায়। আবার দেখা যায়, ঘাস আছে, কিন্তু তলার মাটি নরম। সেখানে পেসারদের চেয়ে সহায়তা পায় স্পিনাররা। পেসারদের কোনোরকমে একটু বোলিং করিয়েই স্পিন আনতে হয়। লাভ বেশি হয় না।”

“ব্যাটিংয়ের দিক থেকেই শুধু নয়, আমি যদি সবদিক থেকে বলি, স্পোর্টিং উইকেট চাই। যেখানে শুরুতে পেসার, পরে স্পিনার, সবার সহায়তা থাকবে। ব্যাটসম্যানদের কাজ সহজ হবে না। তবে টিকে থাকলে রান করতে পারবে। খুব কঠিন নয় কিন্তু এরকম উইকেট বানানো! আর ভারত সফরে আমাদের হয়তো এরকম উইকেটেই খেলতে হবে। তাই উইকেটের ব্যাপারটিতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত জাতীয় লিগে।”

তামিম ইকবাল

জাতীয় দল থেকে বিরতির সময়টুকু তামিম ইকবাল কাজে লাগিয়েছেন ফিটনেস ট্রেনিংয়ে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিশ্বের অন্যতম সেরা একজন ট্রেনারকে নিয়ে দেশের বাইরে মাসখানেক ঘাম ঝরিয়েছেন নিবিড়ভাবে। তাতে ওজন কমেছে ৫ কেজির মতো, মানসিকভাবেও হয়ে উঠেছেন চনমনে। দেশে ফিরে ব্যাটিং অনুশীলন করে যাচ্ছেন নিয়মিত।

তামিম ঘরোয়া প্রথম শ্রেণিতে সবশেষ খেলেছেন ২০১৫ সালে। এবার চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে খেলবেন প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ডে কিংবা প্রথম ও তৃতীয় রাউন্ডে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারত সফরের জন্য আদর্শ প্রস্তুতিই চাইবেন দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান।

সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি মুর্তজা

কিছুদিন আগে ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষেই সাকিব আল হাসান বলেছেন, জাতীয় লিগে খেলা তার জন্য খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক সেটি প্রমাণও করেছেন আগে। এখন তিনি ব্যস্ত ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে।

সাকিব ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ম্যাচে সবশেষ খেলেছেন ২০১৫ সালে জাতীয় লিগে। সেবার একটি ম্যাচই খেলেছিলেন। তার আগে খেলেন ২০১২ সালে একটি ম্যাচ। তার আগে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন ২০০৮ সালে।

বিসিএলে তিনি খেলেননি কখনোই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৯২ ম্যাচের কেবল ১৪টি খেলেছেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে, খুলনা বিভাগের হয়ে। টেস্ট ক্রিকেটারের জন্য এই পরিসংখ্যান আদর্শ নয় অবশ্যই। তারপরও দারুণ সমৃদ্ধ সাকিবের টেস্ট ক্যারিয়ার। এবারও সিপিএল শেষে তার জাতীয় লিগে খেলার সম্ভাবনা আছে সামান্যই।

মাশরাফি টেস্ট খেলেননি গত ১০ বছরে। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার এখনও শেষ না হলেও টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ ধরে নেওয়া যায় নিশ্চিতভাবেই। তাই ঘরোয়া প্রথম শ্রেণিতে তার খেলা জরুরি নয়। তারপরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রস্তুতির জন্য গত কয়েক বছরে খেলেছেন টুকটাক।

এবারও তার খেলার সম্ভাবনা সামান্য। বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সফরের আগে চোট নিয়ে ছিটকে পড়ার পর এখনও মাঠে ফেরেননি। শুরু করেননি ট্রেনিং। ভারত সফরে ওয়ানডে ম্যাচও নেই, তাই নেই তার কোনো তাড়া। তবে সামনের দিকে তাকিয়ে, জাতীয় লিগের শেষ দিকে তাকে এক ম্যাচে খেলতে দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।