উৎসবের আবহে ক্রিকেটারদের বিপ টেস্ট

পাশাপাশি দৌড়াচ্ছেন কয়েকজন। দর্শক অনেকে। চিৎকার করে উৎসাহ দিচ্ছেন কেউ কেউ, চলছে তালি। হাসি-ঠাট্টা, টিপ্পনিও চলছে সমান তালে। এক দলের পরীক্ষা শেষে শুরু হয়ে যাচ্ছে আরেক দলের পালা। সব মিলিয়ে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোর যেন এক মিলন মেলা! জাতীয় লিগের ক্রিকেটারদের বিপ টেস্ট ঘিরে দেখা গেল উৎসবের আবহ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2019, 11:45 AM
Updated : 1 Oct 2019, 11:45 AM

কয়েকদিন থেকে এমনিতেই ক্রিকেটারদের পদচারণায় মুখরিত ছিল শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম। জাতীয় লিগের অনুশীলন শুরু করেছে দলগুলি। সারা বছর যেসব ক্রিকেটার খুব একটা দেখা যায় না, তাদেরও দেখা মিলেছে নিয়মিত। মঙ্গলবার সকালে সেটি ভিন্ন মাত্রা পেল বিপ টেস্টকে ঘিরে।

উৎসবের আবহের মাঝে ছিল টেনশন, উৎকণ্ঠাও। গতবার ফিটনেস পরীক্ষায় এই বিপ টেস্ট স্কোরের ন্যূনতম মানদণ্ড ছিল ‘৯’, এবার এক লাফে সেটি করা হয়েছে ১১। হুট করে এত বাড়ানো নিয়ে গত কয়েক দিনে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে অনেক।

কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যূনতম সেই স্কোরে ছাড় দেওয়া হয়নি। যদিও পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিয়ে ফিটনেসে কিছুটা ছাড় দেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচকদের দেওয়া হয়েছে, তারপরও ন্যূনতম স্কোর বা তার কাছাকাছি অন্তত যাওয়ার তাড়না ছিল ক্রিকেটারদের।

কে কেমন স্কোর করতে পারল, এটি নিয়েই তাই ছিল আলোচনা। মিরপুর একাডেমি মাঠে দেখা গেল এক দল ক্রিকেটারের জটলা। সেখানেও মূল আলোচ্য বিষয় বিপ টেস্ট স্কোর।

মিরপুরের ইনডোরে এক পাশে চলছিল পরীক্ষা। পাশেই কেউ, কেউ স্ট্রেচিং করে নিচ্ছিলেন পরের গ্রুপে পরীক্ষা দিতে। কেউ বা আবার পরীক্ষা দিয়ে এসে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। আর চলছিল আড্ডা।

মিরপুরের পাশাপাশি মঙ্গলবার সকালে বিপ টেস্ট হয়েছে জাতীয় লিগে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য বিভাগেও। সেসব জায়গাতেও ক্রিকেটারদের মাঝে ছিল একই উত্তেজনার রেশ।

বিপ টেস্টের ন্যূনতম মান নিয়ে গত কিছুদিনের আলোচনায় ক্রিকেটাররাও ছিলেন সতর্ক। ফিটনেস নিয়ে তাদের খাটুনির প্রমাণ মিলেছে বিপ টেস্টে। বেশির ভাগ ক্রিকেটারই বেশ ভালোভাবে উতরে গেছেন পরীক্ষায়। স্বাভাবিকভাবেই তরুণদের স্কোর তুলনামূলক ভালো সিনিয়রদের বেশিরভাগের চেয়ে।

মিরপুরে বিপ টেস্ট তদারকি করছিলেন বিসিবির ট্রেনার তুষার কান্তি হাওলাদার। ক্রিকেটারদের ফিটনেসের সার্বিক মানে তিনি দারুণ খুশি।

“সবার গড় স্কোর যদি বলি, তাহলে সেটি দশের বেশি। আমার মনে হয়, খুব খারাপ নয়। সত্যি বলতে, প্রত্যাশার চেয়েও ভালো করেছে অনেকে। ফিটনেস নিয়ে সবার আগ্রহ ও সচেতনতা বেড়েছে, এটা আশার কথা।”

মূল কৌতূহল ছিল সিনিয়রদের ফিটনেস নিয়ে। সিনিয়রদের বেশির ভাগই ন্যূনতম স্কোর স্পর্শ করেছেন বা ছাড়িয়ে গেছেন। তবে মিরপুরের পরীক্ষায় পারেননি কয়েকজন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের সফলতম বোলার আব্দুর রাজ্জাক আটকে গেছেন ৯.৬ স্কোর করে। মোহাম্মদ আশরাফুল অনেক কষ্টে ৯.৭ স্কোর করেই শুয়ে পড়েছেন মাটিতে।

রাজ্জাক আক্ষেপ করলেন, ১১ স্কোর বেঁধে দেওয়ার আগে যদি আরেকটু সময় দেওয়া হতো এবং জাতীয় লিগের ক্রিকেটারদের যদি ফিটনেস ট্রেনিংয়ের ভালো ব্যবস্থা থাকতো, হয়তো আরও ভালো হতো বিপ টেস্টের স্কোর।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দেশের সফলতম পেসার মোহাম্মদ শরীফ থেমেছেন ১০.৬ স্কোরে। নাঈম ইসলাম, সোহরাওয়ার্দী শুভর মতে সিনিয়ররা অনায়াসে ১১ পেরিয়ে গেছেন। ঢাকার বাইরে জুনায়েদ সিদ্দিক, কামরুল ইসলাম রাব্বিরা পেয়ে গেছেন পাশ মার্ক। ইলিয়াস সানি থেমেছেন সাড়ে ৯ স্কোরে। তবে তার পায়ে ছিল চোট। তাই পরীক্ষা দেবেন আবার। হতাশাজনক ছিল নাসির হোসেনের স্কোর। করতে পেরেছেন কেবল ৯.৬।

নির্বাচকদের যেহেতু এখতিয়ার দেওয়া আছে, জাতীয় লিগে পারফরম্যান্স বিবেচনায় রাজ্জাক, শরীফরা হয়তো পাশ মার্ক পেয়ে যাবেন। এখনই সেটি নিশ্চিত না করলেও ক্রিকেটারদের সার্বিক ফিটনেসের মানে সন্তুষ্ট অন্যতম নির্বাচক হাবিবুল বাশার।

“আলোচনা একটু বেশি হয়েছে হয়ত যেহেতু লেভেলটা বাড়ানো হয়েছে বলে। কিন্তু আমার মনে হয়, যে যাই বলুক, খেলোয়াড়রা এটি খুব ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। এটা খেলোয়াড়দের জন্যই ভালো। সবাই এটা উপলব্ধি করতে পেরেছে, সেজন্য আমি খুবই খুশি। যতদূর দেখলাম এখন পর্যন্ত ঢাকাতে, ঢাকার বাইরের ফলাফল আমরা এখনও হাতে আসেনি। ঢাকাতে প্রায় ৯৬ শতাংশ পাশ করে গেছে। যে লক্ষ্য দেয়া হয়েছিল, সেটা পূরণ করতে পেরেছ।”

“আমরা একটা স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করার চেষ্টা করছি, সংস্কৃতি তৈরি করার চেষ্টা করছি। আমি আশা করছি সবাই এটা বুঝতে পারবে। আমার খেলোয়াড়রা বুঝতে পেরেছে, তাতে আমি খুবই খুশি।”

হাবিবুল জানালেন, যারা এবার পারেননি, কিন্তু আরেকবার দিতে ইচ্ছুক, প্রয়োজনে আরও কয়েকবার তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে।

“দরকার হলে ৫ বার পরীক্ষার সুযোগ দেব। গতবারও দিয়েছি। ৪-৫ জন পারেনি লেভেল ছুঁতে। তাদেরকে রাখা হয়নি এবং সময় দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল তোমরা যখনই পারবে, পরদিনই দলে ঢুকে যাবে। গতবার এভাবে কিন্তু ৩-৪ জন ঢুকেও গিয়েছিল।”

“আমরা সিদ্ধান্তে এসেছি যে ভবিষ্যতের ক্রিকেটের জন্য আমরা একটা ব্র্যান্ড সেট করতে চাই। সেটার প্রথম শর্ত হল ফিটনেস এবং ফিল্ডিং সবার আগে।”

এবারের জাতীয় লিগ শুরু হবে আগামী ১০ অক্টোবর থেকে।