যুবরাজের কাঠগড়ায় ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট

ব্যাট-বল হাতে ২০১১ বিশ্বকাপটা কাটে স্বপ্নের মতো। তবে জীবনের পথ চলায় একই সময়ে পান অনেক বড় এক ধাক্কা। শরীরে বাসা বাঁধে ক্যান্সার। সেটাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আবারও ফিরেন ২২ গজের উইকেটে, দীর্ঘ কঠোর প্রচেষ্টায় জায়গা করে নেন জাতীয় দলে। কিন্তু ক্যারিয়ারটাকে টেনে নিতে পারেননি বেশিদূর। আর এর পেছনে টিম ম্যানেজমেন্টের সমর্থন না পাওয়াকেই কারণ হিসেবে দেখালেন ভারতের সাবেক অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2019, 02:28 PM
Updated : 27 Sept 2019, 02:28 PM

মানিশ পান্ডে, সুরেশ রায়না, আম্বাতি রাইডু, বিজয় শঙ্কর, রিশাব পান্ত ও দিনেশ কার্তিককের সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্ট এখন একই রকম বিরূপ আচরণ করছে বলে মনে করেন যুবরাজ। ২০১৯ বিশ্বকাপে ভারতের ব্যর্থতার পেছনে একে কারণ হিসেবে দেখালেন দেশটির দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক। তার মতে, ভারতের গত বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে না পারার কোনো কারণ নেই।

তার সঙ্গে যা করা হয়েছে আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দল গুছানোর পথে সেই একই ভুল তরুণ পান্তের বেলাতেও করা হচ্ছে বলে অভিমত যুবরাজের। প্রকাশ্যে ২১ বছর বয়সী পান্তের ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনা করেছেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি, কোচ রবি শাস্ত্রী ও ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোর। এ ধরনের কিছু আর না করার তাগিদ দিয়েছেন যুবরাজ।   

২০১১ বিশ্বকাপে দলকে শিরোপা জেতানোর পথে ৮ ইনিংসে ৯০.৫০ গড়ে ৩৬২ রান করেছিলেন যুবরাজ। এক সেঞ্চুরি ও চার ফিফটি, সর্বোচ্চ ১১৩। আর বল হাতে ২৫.১৩ গড়ে নেন ১৫ উইকেট। সেরা ৫/৩১। পরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ে জিতে মাঠে ফেরেন যুবরাজ। কিন্তু এরপর দলে কখনোই তার জায়গা পাকা হয়নি।

আসা-যাওয়ার মাঝে লম্বা এক বিরতির পর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ফের ফেরেন যুবরাজ। সেবার ১১ ম্যাচে ৪১.৩৩ গড়ে ও ৯৮.৬৭ স্ট্রাইক রেটে রান করেছিলেন তিনি। তারপরও ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ‘ইয়ো-ইয়ো টেস্ট’ নামে পরিচিত ফিটনেস পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে বাদ পড়েন যুবরাজ। পরে ফিটনেস পরীক্ষায় পাশ করলেও তাকে আর জাতীয় দলে ফেরানো হয়নি।

“এই অনুশোচনা আমার সবসময় থাকবে। তবে মানুষ আমার জন্য খুশিও হতে পারে কারণ ওরকম কঠিন অসুখের পর, ঘরোয়া ক্রিকেটে দুই বছর সংগ্রাম করে, কঠিন পরিশ্রম করে আমি ফিরেছিলাম এবং ওয়ানডেতে আমার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস (২০১৭ সালে দলের ২৫ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর নেমে ১৫০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন) খেলেছিলাম। এটাও অনেক বড় প্রাপ্তি।”

“তবে এটা ভিন্ন দিক। হ্যাঁ, অনুশোচনা থাকবে। অনেক বিষয় ছিল। কারো কোনো সমর্থন ছিল না, টিম ম্যানেজমেন্ট ও আশেপাশের মানুষদের কাছ থেকে কোনো সাহায্য ছিল না। যদি কোনো সহায়তা থাকতো আমি আরেকটা বিশ্বকাপ খেলতাম। যেমন ক্রিকেটই খেলেছি, নিজের প্রচেষ্টায় খেলেছি। আমার কোনো গডফাদার ছিল না। আমি গর্বিত যে ওই অসুস্থতার পরও আমি এত বেশি ক্রিকেট খেলতে পেরেছি।”

স্মৃতি হাতড়ে যুবরাজ মনে করিয়ে দেন যে, শেষ ধাপের ফেরায় দুবার ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি।

“(চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরপরই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে) চোট পাওয়ার পর আমাকে বলা হয়েছিল শেষ টি-টোয়েন্টি না খেলতে এবং শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য প্রস্তুতি নিতে। এরপর হঠাৎ করেই আসে ওই ইয়ো-ইয়ো টেস্ট। যে-ই ওই পরীক্ষায় বাদ পড়েছিল সে-ই দলে জায়গা হারিয়েছিল…আমি ইয়ো-ইয়ো টেস্টে পাশ করার পর আমাকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে বলা হলো যা আমি খেলেছিলাম।”

তবে যুবরাজের ধারণা, তাকে বাদ দিতে সেই সব ছিল শুধু একটা অজুহাত।

“তারা আসলে ভেবেছিল আমি ইয়ো-ইয়ো টেস্ট পার করতে পারব না। কারণ, ওই বয়সে সেটা কঠিন…বিষয়টা দুর্ভাগ্যজনক। একটা মানুষ যে ১৫-১৭ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছে তাকে আপনার বসিয়ে বলা উচিত, কেন তাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। কেউ আমাকে বলেনি।”

বীরেন্দর শেবাগ ও জহির খানের সঙ্গেও একই আচরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন যুবরাজ।

শেষে গত ১০ জুন বিশ্বকাপ চলার সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন যুবরাজ। ২০১৭ সালের ৩০ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবশেষ জাতীয় দলের হয়ে খেলা যুবরাজ ক্যারিয়ারে ৩০৪ ওয়ানডেতে ১৪টি শতক ও ৫২ অর্ধশতকে করেছেন মোট আট হাজার ৭০১ রান। সেই সঙ্গে নিয়েছেন ১১১ উইকেট।

পাশাপাশি ৪০ টেস্টে তিন সেঞ্চুরি ও ১১ হাফ সেঞ্চুরিতে এক হাজার ৯০০ রান করা যুবরাজ উইকেট নিয়েছেন ৯টি।

আর ৫৮ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আটটি অর্ধশতকে এক হাজার ১৭৭ রান করা যুবরাজ বল হাতে নিয়েছেন ২৮ উইকেট।