টিকেটের টাকা ফেরত নিয়ে ভবিষ্যতে ভাববে বিসিবি

রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা। প্রায় যুদ্ধ করে টিকেট সংগ্রহ করা। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই মাঠে ঢোকা। এরপর ভেজা শরীর আর মনে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা। কিন্তু সব প্রচেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত প্রাপ্তি শূন্য। খেলা তো বহুদূর, হয়নি টসও। ফেরত পাওয়া যায়নি টিকেটের অর্থের কোনো অংশও। তবে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে টাকা ফেরত দেওয়া যায় কিনা, ভেবে দেখবে বিসিবি।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2019, 01:26 PM
Updated : 26 Sept 2019, 10:28 AM

টানা বৃষ্টিতে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ত্রিদেশীয় সিরিজে ফাইনাল ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যায়। টুর্নামেন্টে ছিল না কোনো রিজার্ভ ডে। যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টি ছিল। টসের ঘণ্টাখানেক আগে থেকে বৃষ্টি শুরুও হয়ে যায়। তারপরও শের-ই-বাংলার গ্যালারিতে ছিল হাজার হাজার দর্শক। যেসব গ্যালারির কোনো অংশে ছাউনি ছিল, অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন সেখানে। কিন্তু দর্শকদের একটি বড় অংশ বৃষ্টিতে ভিজেই অপেক্ষা করে গেছেন খেলা শুরু হওয়ার। বিশেষ করে পূর্ব গ্যালারিতে।

কিন্তু শরীর ভিজেও মেটেনি মনের তৃষ্ণা। একটুও পাওয়া যায়নি ক্রিকেটের স্বাদ। রাত ৯টায় খেলার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি যখন ঘোষণা করা হলো, তখনও গ্যালারিতে ছিল অন্তত হাজার পনের দর্শক। হতাশা নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন সবাই।

প্রকৃতির ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই কারও। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থার কাছে একটি চাওয়ার কথা শোনা গেল অনেকের মুখেই। টসই হয়নি, এমন ম্যাচে টিকেটের মূল্য, অন্তত কিছু অংশ কি ফেরত দিতে পারে না বিসিবি?

ফেইসবুকে একটি ক্রিকেট গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত তানভির রেজওয়ান সিদ্দিক মাঠে গিয়েছিলেন গ্রুপের আরও অনেকের সঙ্গে। প্রায় ৫ ঘণ্টা গ্যালারিতে অপেক্ষা করে হতাশা নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন তারা। বিসিবির কাছে তার দাবি, দর্শকের কথা আরেকটু গুরুত্ব দিয়ে যেন ভাবা হয়।

“প্রথমত, টিকেট সংগ্রহের প্রক্রিয়াই ছিল এবার কঠিন। বুথে ছাড়া কোথাও টিকেট পাওয়া যায়নি। তার ওপর খেলাও হলো না। কয়েক ওভার খেলা হলেও তবু কিছু একটা পেতাম আমরা। সেই আশা নিয়েই বসেছিলাম এত সময়। কিন্তু একটুও যখন খেলা হলো না, বিসিবির উচিত এসব ক্ষেত্রে দর্শকের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ভাবা।”

দর্শকদের প্রতি বিসিবির দায়বদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান ও সাবেক অধিনায়ক এখন আইসিসিতে স্থায়ী পদে দায়িত্ব পালন করছেন ‘ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার-আইসিসি এশিয়া’ হিসেবে। এসিসি ও আইসিসিতে নানা দায়িত্বে কাজ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তার মতে, ক্রিকেট দর্শকদের গুরুত্ব দেওয়ার ছাপ থাকা উচিত বোর্ডের কার্যক্রমে।

“এই ম্যাচের টিকেটে উল্লেখ ছিল যে, টাকা ফেরত দেওয়া হবে না। কাজেই এখানে বিসিবিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় না। তবে আমার মনে হয়, এই ব্যাপারটি বিসিবির গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত। এখন ঘরে বসে খুব ভালো খেলা দেখা যায় টিভিতে। অনেক দেশেই লোকে মাঠে আসে না। সেখানে আমাদের দেশে এত লোক আসছে। তাদের প্রতি বোর্ডের দায়িত্ব আছে।”

“এটা কিন্তু শুধু আর্থিক ব্যাপার নয়। যে ১০০ টাকা দিয়ে টিকেট করেছে, সে হয়তো ৫০ টাকা ফেরত পেত। বড় কোনো টাকা নয়। কিন্তু মানসিক সমর্থনটা গুরুত্বপূর্ণ। লোকে জানবে যে আমাদের ক্রিকেট বোর্ড সাধারণ দর্শকের কথা ভাবছে, গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা মাঠে এসে খেলা দেখায় আরও উৎসাহী হবে।”

এতে যে বিসিবির খুব বেশি ক্ষতিও হবে না, সেটিও উল্লেখ করলেন আমিনুল।

“একটা সময় টিকেটের টাকা বোর্ডগুলোর আয়ের একটা বড় অংশ ছিল। এখন আইসিসির তহবিল, টিভি সম্প্রচার, স্পন্সর মিলিয়ে এত আয়, টিকেটের টাকা সেখানে খুবই সামান্য। তো দু-একটি ম্যাচের টিকেটের টাকা ফেরত দিলেও কিছুই যায়-আসবে না বোর্ডের।”

বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জানালেন, টাকা ফেরতের ব্যবস্থা রাখার ভাবনা এবার তাদের ছিলই না। তবে ভবিষ্যতে তারা এটি মাথায় রাখবেন।

“নিকট অতীতে কিন্তু এরকম হয়নি যে কোনো ম্যাচে টসই হয়নি। ব্যাপারটি তাই সেভাবে আমাদের ভাবনায় ছিল না। এবার টিকেটে টাকা ফেরত দেওয়ার ধারা ছিল না। খেলা না হওয়ায় আমরাও হতাশ, দর্শদের প্রতি সমব্যথী। ভবিষ্যতে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা যায় কিনা, গুরত্ব দিয়ে ভাবব আমরা।”

টিকেট সংক্রান্ত আরেকটি ব্যাপার আলোচিত ছিল অবশ্য ফাইনালের আগে থেকেই। এবার অনলাইনে বা ব্যাংকের মাধ্যমে টিকেট কেনার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে শুধু স্টেডিয়াম বুথে পাওয়া গেছে টিকেট। দর্শকদের টিকেট সংগ্রহ করতে ভোগান্তি ছিল অনেক।

সাবেক অধিনায়ক আমিনুলের মতে, টিকেট বিক্রির প্রক্রিয়া আধুনিক করলে টাকা ফেরত দেওয়ার কাজও সহজ হবে।

“গোটা দুনিয়া এখন অন্য জায়গায় চলে গেছে। আমাদের দেশে টিকেটের এত চাহিদা, অথচ সেই পুরোনো পথেই টিকেট বিক্রি হচ্ছে। অনলাইনেই এখন সবচেয়ে বেশি টিকেট ছাড়া উচিত। আর অনলাইনে বিক্রি হলে সবকিছুর ট্র্যাক থাকে। কখনও টাকা ফেরত দিতে হলে সেটিও সহজ হবে।”

বিসিবির প্রধান নির্বাহী আশ্বাস দিলেন এটি নিয়েও ভবিষ্যতে ভাবার।

“আগেও আমরা অনলাইনে টিকেট দিয়েছি। এবার দেওয়া হয়নি। সামনে আবার দেওয়া হবে। দর্শকের সুবিধার কথা আমরা সবসময়ই বিবেচনা করি। ভবিষ্যতেও তারা যাতে সহজে খেলা দেখতে পারেন, সেটি আমরা দেখব।”