আমিনুলের বোলিংয়ে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ দেখছেন মাহমুদউল্লাহ

কিছুদিন আগেও সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনেকে তাকে চিনতেন না। বোলিং সম্পর্কে জানার তো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু নেটে কয়েক দিনের দেখা আর অভিষেক ম্যাচের পারফরম্যান্স বদলে দিয়েছে চিত্র। আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বোলিংয়ে সম্ভাবনার ছাপ দেখছে গোটা দল। সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ দেখছেন এই তরুণ লেগ স্পিনারের উজ্জ্বল ভবিষ্যত।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2019, 06:07 PM
Updated : 18 Sept 2019, 08:31 PM

বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও আমিনুল ছিলেন মূলত ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশ হাই পারফরম্যান্স দলে জায়গা পাওয়ার পর থেকে বদলে যেতে থাকে তার ক্রিকেটীয় পরিচয়। নজর কাড়েন লেগ স্পিন দিয়ে। সিনিয়র ক্রিকেটাররাও তাকে প্রথম দেখেছেন স্পিনার হিসেবে, ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের আগে জাতীয় দলের নেটে।

নেটে বোলিং করেই জাতীয় কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর চোখে পড়েন আমিনুল। হাই পারফরম্যান্স কোচ সাইমন হেলমট ও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন তো আমিনুলকে চোখে রাখছিলেন আগে থেকেই। তাদের কাছ থেকে শুনে ডমিঙ্গোর চাওয়াতেই চট্টগ্রাম পর্বের জন্য দলে নেওয়া হয় আমিনুলকে। বুধবার অভিষেকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নিয়েছেন তিনি ২ উইকেট।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের তৃতীয় বলেই নিয়েছেন উইকেট। পরে আউট করেছেন জিম্বাবুয়ের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে।

মাহমুদউল্লাহ জানালেন, নেটে দেখে আমিনুলকে আগেই মনে ধরেছিল তাদের। পরে দলে আসার পর নেটে দেখে বেড়ে যায় ভালো লাগার পরিধি। ৪১ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা মাহমুদউল্লাহ। তবে তিনি নিজে মুগ্ধ আমিনুলের পারফলম্যান্সে। ম্যাচ শেষে জানালেন, আমিনুলের স্কিল ও মানসিকতা জানান দিচ্ছে দারুণ এক ভবিষ্যতের।

“আমি আজকে মাঠে নামার সময় ব্যক্তিগতভাবে চাচ্ছিলাম যেন বিপ্লব খুব ভালো করে। আগে ওকে চিনতাম না, খেলাও দেখিনি। তবে ওকে যখন নেটে দেখলাম, তার আগে যখন ঢাকায় দেখলাম (অনুশীলনে নেট বোলার হিসেবে), তখন আমার মনে হয়েছে, ওর ভেতর এক্স ফ্যাক্টর আছে। এজন্যই চাচ্ছিলাম যেন ভালো করে। দলের জন্যও খুব ভালো হয় তাতে।”

“আজকে ও যেভাবে বল করেছে, আমি অনেক খুশি। সাকিবের সঙ্গে কথা বলছিলাম,  যে সাহস নিয়ে বোলিং করেছে, এটা অসাধারণ ছিল। ফিল্ডিং খুব ভালো করে। ব্যাটিং সামর্থ্যও ভালো। যেভাবে শুরু করেছে, ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশের জন্য অনেক সাফল্য এনে দিতে পারবে।”

ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক বছর খেলেও প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে নার্ভাস থাকেন অনেকে। আমিনুলেরও ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। সেটি বুঝেই মাঠে নামার সময় তাকে সাহস জুগিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ।

“প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে সবারই কম-বেশি নার্ভাসনেস থাকে। আমি আজকে ওকে মাঠেই বলছিলাম, ‘যা কিছুই করো, বুকে সাহস নিয়ে করো। ভয় নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকা যায় না। যা কিছু করবা, মন খুলে করবা।’ আমার মনে হয় যে, এই ব্যাপারটা সে অনুভব করেছে এবং সেভাবেই খেলেছে।”

“ওর বোলিং দেখে মনে হয়েছে সে বেশ আগ্রাসী। তার ফিল্ডিং-শরীরী ভাষা, এসবও আগ্রাসী। যেটা টি-টোয়েন্টিতে বেশি জরুরি। মাঝেমধ্যে হয়তো কাজে লাগবে না, তবে বেশির ভাগ দিনই কাজে দেবে।”

এর আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটে লেগ স্পিন দিয়েই আশার আলো হয়ে এসেছিলেন জুবায়ের হোসেন। টেস্ট ম্যাচে ভালো করার পাশাপাশি অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই নিয়েছিলেন ২ উইকেট। সময়ের পরিক্রমায় তিনি এখন জাতীয় দল থেকে অনেক দূরে।

জুবায়েরের উদাহরণ চলে এলো প্রসঙ্গক্রমেই। তবে আমিনুলকে সেই পথের যাত্রী বলে মনে করেন না মাহমুদউল্লাহ।

“লিখন (জুবায়ের) যখন শুরু করেছিল, আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছিল। ওর গুগলি পড়া কঠিন ছিল। পরে হয়তো ফর্মে ওলট-পালট হয়েছে। আমরা ভালো লেগ স্পিনার পাচ্ছিলাম না। ম্যানেজমেন্ট চেষ্টা করছিল খুঁজে পেতে। এই ছেলেটাকে (আমিনুল) আমার সম্ভাবনাময় মনে হচ্ছে খুবই। সবাই দল হিসেবে ওকে উৎসাহ দিচ্ছে। ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যত আছে।”