অনায়াস জয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

জয় ছিল খুবই প্রত্যাশিত। আত্মবিশ্বাস ফেরানোর রেসিপিতে ছিল দাপুটে কোনো জয়। অবশেষে সেই দাপটের কিছুটা দেখা গেল বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে। চাওয়া আর পাওয়া পুরোপুরি এক বিন্দুতে না মিললেও সমান্তরাল রেখায় এগিয়ে গেল জয়ের ঠিকানায়। অনায়াস জয়ে নিশ্চিত হলো ফাইনালে খেলা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি চট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2019, 04:46 PM
Updated : 18 Sept 2019, 08:30 PM

ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৩৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে আফগানিস্তানকে নিয়ে ফাইনালে উঠে গেল বাংলাদেশ। প্রাথমিক পর্বের শেষ দুই ম্যাচ হয়ে গেল কেবল নিয়ম রক্ষার।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বুধবার বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন লিটন দাস। মিডল অর্ডারে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম গড়েন ভালো জুটি। ২০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৭ উইকেটে ১৭৫।

রান তাড়ায় শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা জিম্বাবুয়ে শেষ পর্যন্ত গুটিয়ে গেছে ১৩৬ রানে।

প্রায় দুই বছর পর টি-টোয়েন্টিতে ফিরে শফিউল ইসলাম নিয়েছেন তিন উইকেট। তবে বল হাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে চমকপ্রদ পারফরম্যান্স আরেকজনের। বিস্ময়করভাবে স্কোয়াডে আসা আমিনুল ইসলাম অভিষেকে চমকে দিয়েছেন লেগ স্পিনে। ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।

ছবি: আইসিসি

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন অভিষিক্ত নাজমুল হাসান শান্ত ও লিটন। শান্তর ব্যাট ছিল শান্তই, লিটনের ব্যাট উত্তাল।

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে কাইল জার্ভিসকে দুটি বাউন্ডারিতে ছুটতে শুরু করেন লিটন। লেগ সাইড তার শক্তির জায়গা হলেও এ দিন অফ সাইডে খেলেছেন দৃষ্টিনন্দন সব শট। টাইমিং ও প্লেসমেন্ট ছিল দুর্দান্ত। দলের রান বাড়তে থাকে তরতরিয়ে।

আরেক পাশে শান্ত আর ছন্দ পাননি। ২৯ বলে ৪৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে তার বিদায়েই। জার্ভিসের স্লোয়ারে ফিরতি ক্যাচ দেন ৯ বলে ১১ করে।

পরের ওভারেই লিটনের ঝড় থামে অসাধারণ এক ক্যাচে। ক্রিস এমপোফুর লেগ স্টাম্পের বাইরের বল মারতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন লিটন। শর্ট ফাইন লেগ থেকে পেছন দিকে ছুটে, বল থেকে একটুর জন্যও চোখ না সরিয়ে চোখধাঁধানো ডাইভিং ক্যাচে পরিণত করেন নেভিল মাদজিভা।

লিটনের সম্ভাবনাময় ইনিংস শেষ হয় ২২ বলে ৩৮ রানে। একটু পর রায়ান বার্লের বলে ক্যাচিং প্র্যাকটিস করিয়ে ফেরেন সাকিব। ভালো শুরুর পরও ৬৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন একটু বিপাকে বাংলাদেশ।

তবে অস্বস্তি ঝেরে ফেলতে একটুও সময় নেননি মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক। সাকিবের বিদায়ের পরের বলেই বার্লকে দারুণ এক ছক্কায় ওড়ান মাত্র উইকেটে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ। ওই ওভারে মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে চার। সরে যায় চাপ।

ভালো শুরুকে কার্যকর জুটিতে রূপ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল দুজনের সামনে। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান অনেকটাই মিটিয়েছেন সেই দাবি। দুজনে গড়েছেন ৪৫ বলে ৭৮ রানের জুটি।

যখন ঝড় তোলার সময়, ২৬ বলে ৩২ রান করে মুশফিক ফিরে গেছেন তখনই। মাহমুদউল্লাহ সেই পথে পা বাড়াননি। ছক্কায় শুরু করা ইনিংসটিতে ফিফটিও ছুঁয়েছেন ছক্কায়, ৩৭ বলে। টি-টোয়েন্টিতে পঞ্চাশের দেখা পেলেন তিনি ২৪ ইনিংস পর।

৫ ছক্কায় মাহমুদউল্লাহর ৪১ বলে ৬২ রানের ইনিংস শেষ হয় শেষ ওভারে জার্ভিসের ফুল টসে ছক্কা মারতে গিয়ে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে ৫ নম্বরে ব্যাট করে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এটিই।

পরের বলে ফুলটসেই শেষ হয় মোসাদ্দেকের ইনিংস। শেষ বলে সাইফ উদ্দিনের বাউন্ডারিতে শেষ হয় ইনিংস। বাংলাদেশ তোলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ রান।

জিম্বাবুয়ের রান তাড়া পথচ্যুত হয় শুরুতেই। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম ওভারে বাংলাদেশকে উইকেট এনে দেন সাইফ। জিম্বাবুয়ের বড় ভরসা ব্রেন্ডন টেইলর বিদায় নেন শূন্যতে।

পরের ওভারে রেজিস চাকাভা উইকেট দিয়ে আসেন সাকিবকে। একটু পর শফিউল যখন ফেরার ম্যাচে প্রথম বলেই নিলেন উইকেট, জিম্বাবুয়ের রান তখন ৩ উইকেটে ৮!

ম্যাচের গতিপথ তখন অনেকটাই পরিষ্কার। অপেক্ষা ছিল আমিনুলের বোলিংয়ের। ব্যাটসম্যান হয়েও লেগ স্পিন দিয়ে আলোচনায় আসা তরুণ ক্রিকেটার খুব সময় নেননি আলোচনার পালে জোর হাওয়া দিতে। অভিষেক আন্তর্জাতিক ম্যাচে তৃতীয় বলেই নিয়েছেন উইকেট।

টার্ন খুব একটা পাননি আমিনুল। তবে প্রথম ম্যাচ হিসেবে নিয়ন্ত্রণ ছিল বেশ ভালো। ফ্লাইট ও লুপে ব্যাটসম্যানদের ভাবিয়েছেন বেশ। তার ফ্লাইটে বিভ্রান্ত হয়েই আউট হয়েছেন অভিজ্ঞ হ্যামিল্টন মাসাকাদজা।

৬৬ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে এক পর্যায়ে আরও বড় ব্যবধানে হারের শঙ্কায় ছিল জিম্বাবুয়ে। অষ্টম উইকেটে রিচমন্ড মুতুমবামি ও জার্ভিস গড়েন ৫৮ রানের জুটি। ৩২ বলে ৫৪ করেছেন মুতুমবামি, তার প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটি।

জার্ভিস করেন ২০ বলে ২৭। তাতে হারের ব্যবধান কমাতে পারে জিম্বাবুয়ে।

বাংলাদেশের বোলারদের এমন পারফরম্যান্সের দিনে বেশ বিবর্ণ ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। যদিও শেষ ওভারে দুটি উইকেট নিয়ে শেষটা করেছেন তিনি স্বস্তিতে।

স্বস্তিতে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ দলও। তবে মূল পরীক্ষা আফগানদের সামনে! টুর্নোমেন্টে তাই বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ বাকি আছে আরও অনেক।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৭৫/৭ (শান্ত ১১, লিটন ৩৮, সাকিব ১০, মুশফিক ৩২, মাহমুদউল্লাহ ৬২, আফিফ ৭, মোসাদ্দেক ২, সাইফ ৬*, আমিনুল ০*; এনডিলোভু ৩-০-৩২-০, জার্ভিস ৪-০-৩২-৩, এমপোফু ৪-০-৪২-২, উইলিয়ামস ৪-০-২৬-০, বার্ল ১-০-১৩-১, মাতমবোদজি ৩-০-১৭-১, মাদজিভা ১-০-১০-০)।

জিম্বাবুয়ে : ২০ ওভারে ১৩৬ (টেইলর ০, মাসাকাদজা ২৫, চাকাভা ০, উইলিয়ামস ২, মাতমবোদজি ১১, বার্ল ১, মুতুমবামি ৫৪, মাদজিভা ৯, জার্ভিস ২৭, এনডিলোভু ২, এমপোফু ০*;  সাইফ ৪-০-১৪-১, সাকিব ৪-০-২৮-১, শফিউল ৪-০-৩৬-৩, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৮-২, আমিনুল ৪-০-১৮-২)।

ফল: বাংলাদেশ ৩৯ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ