আফগানদের কাছে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ

র‍্যাঙ্কিংয়ে দুই দলের যে ব্যবধান, মাঠের ক্রিকেটও তা বুঝিয়ে দিল পুরোপুরি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আফগানদের শক্তিমত্তা আর বাংলাদেশের দৈন্য ফুটে উঠল স্পষ্ট হয়ে। ম্যাচের প্রথম ৬ ওভারেই যা একটু উজ্জীবিত পারফরম্যান্স দেখাল বাংলাদেশ। বাকি সময়টায় আর পাত্তাই পেল না। মোহাম্মদ নবির দুর্দান্ত ইনিংস আর মুজিব-উর-রহমানের দারুণ বোলিংয়ে আফগানরা পেল সহজ জয়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2019, 04:30 PM
Updated : 15 Sept 2019, 08:19 PM

ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ২৫ রানে হারিয়েছে আফগানিস্তান। টানা দ্বিতীয় জয়ে এগিয়ে গেল তারা ফাইনালের পথে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের এটি টানা চতুর্থ টি-টোয়েন্টি জয়। আর সব মিলিয়ে টানা ১২ ম্যাচ জিতে তারা গড়ল নতুন বিশ্বরেকর্ড।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার বিপর্যয়ের মধ্যে ৬ নম্বরে নেমে নবি খেলেছেন ৫৪ বলে ৮৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে আফগানিস্তান তোলে ২০ ওভারে ১৬৪ রান।

রান তাড়ায় বাংলাদেশ কখনোই সেভাবে জাগাতে পারেনি জয়ের সম্ভাবনা। শেষ ওভারে অলআউট হয় ১৩৯ রানে।

ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে মুজিব নিয়েছেন ১৫ রানে ৪ উইকেট।

আফগানিস্তানের নবি একাই মেরেছেন ৭ ছক্কা। বাংলাদেশের ইনিংসে একমাত্র ছক্কা শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজের!

টি-টোয়েন্টিতে ২৫ রানের জয় এমনিতেই যথেষ্ট বড় ব্যবধান। বাংলাদেশ তবু ব্যবধান কমাতে পেরেছে শেষ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের এক ছক্কা, দুই চারে। ম্যাচের লড়াই থেকে দল ছিটকে গিয়েছিল অনেক আগেই।

অথচ বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। স্বপ্নের মতো এক ডেলিভারিতে ম্যাচের প্রথম বলেই রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফেরান সাইফ। স্টাম্পে পিচ করা আউট সুইঙ্গার ব্যাটসম্যানের ডিফেন্সকে ফাঁকি দিয়ে উপড়ে দেয় স্টাম্প।

দ্বিতীয় ওভারে আসে আরেকটি সাফল্য। আরেক বিপজ্জনক ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই বিদায় নেন সাকিবকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে।

তিনে নামা নাজিব তারাকাই পাল্টা আক্রমণের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সাইফকে ছক্কা মেরে। কিন্তু পরের বলে আবার উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন সীমানায়।

পাওয়ার প্লের মধ্যেই সাকিব এনে দেন আরেকটি উইকেট। আফগানদের আগের দিনের নায়ক নাজিবউল্লাহ জাদরান বিদায় নেন উড়িয়ে মারতে গিয়ে।

আফগানদের রান তখন ৪ উইকেটে ৪০। নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ।

সেই বিপর্যয় থেকেই আফগানদের উদ্ধার করেন আসগর আফগান ও নবি। সাকিব ও সাইফের স্পেল তখন শেষ। দুই অভিজ্ঞ আফগান ব্যাটসম্যান আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে চাপে ফেলে দেন বাংলাদেশের অন্য বোলারদের।

জুটি পঞ্চাশ পেরোনোর পর একটু স্বস্তির উপলক্ষ্য পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাইজুলের বলে ৩১ রানে ক্যাচ দেন আসগর। কিন্তু সেই স্বস্তি থাকেনি বেশিক্ষণ। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটি ছিল ‘নো!’

উল্টো এক বল পরই তাইজুলকে বিশাল ছক্কা মারেন আসগর, ওই ওভারেই আরেকটি ছক্কা আসে নবির ব্যাট থেকে।

সাইফ দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে ৩৯ রানে থামান আসগরকে। ভাঙে ৬৫ বলে ৭৯ রানের জুটি। একই ওভারে গুলবাদিন নাইবকে বোল্ড করে সাইফ পূরণ করেন টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ৪ উইকেট।

কিন্তু নবিকে থামানো যায়নি। পঞ্চম বোলারের কোটা শেষ করতে ১৮তম ওভারে সৌম্যকে বোলিংয়ে আনেন সাকিব। নবি ফায়দা নেন দুটি করে চার ও ছক্কায়।

নবির ঝড় চলতে থাকে এরপরও। সাইফের শেষ ওভারে মারেন দুটি ছক্কা। শেষ ৬ ওভারে আফগানরা তোলে ৭১ রান।

৩ চার ও ৭ ছক্কায় ৮৪ রানে অপরাজিত থেকে যান নবি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর এটিই।

বাংলাদেশের রান তাড়ার শুরু ছিল চমক দিয়ে। লিটন দাসের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন মুশফিকুর রহিম!

কিন্তু পারফরম্যান্সে কোনো চমক দেখা যায়নি। বাজে শটে ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই মুজিবকে উইকেট উপহার দেন লিটন দাস।

বাঁহাতি পেসার ফরিদ মালিককে দারুণ এক ড্রাইভে চার মেরে শুরু করেছিলেন মুশফিক। পরের বলেই স্টাম্প উন্মুক্ত করে স্কুপ করতে চাইলেন দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে। বল উড়িয়ে দিল বেলস।

রশিদ খানের সঙ্গে খানিকটা কথার লড়াইয়ের পর সাকিব ফিরলেন মুজিবের বলে উইকেট বিলিয়ে। ওই ওভারেই সৌম্য সরকার আউট নিজের প্রথম বলে।

৫ ওভার শেষে রান ৪ উইকেটে ৩২, বাংলাদেশের আশা শেষ অনেকটাই।

পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির রহমান জুটি গড়ে তোলেন বটে। তবে মাহমুদউল্লাহ খানিকটা দ্রত রান তুললেও তা পারেননি সাব্বির। ৫৮ রানের জুটিতে লেগে যায় ৫১ বল।

যখন প্রয়োজন ছিল ঝড় তোলার, তখনই ফেরেন এই দুজন। ৩৯ বলে ৪৪ করে মাহমুদউল্লাহ সীমানায় ক্যাচ দেন নাইবের স্লোয়ারে। সাব্বিরের ২৭ বলে ২৪ রানের ভোগান্তির ইনিংস শেষ হয়েছে মুজিবকে চতুর্থ উইকেট উপহার দিয়ে।

এরপর কেবল ব্যবধান কমানোর লড়াই। আগের ম্যাচের নায়ক আফিফ হোসেন ১৪ বলে করেছেন ১৬। শেষ ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজ ৭ বলে ১৫।

তাতে পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা ভদ্রস্থ হলো বটে। কিন্তু আশা জাগানিয়া কিছু মিলল না।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আফগানিস্তান : ২০ ওভারে ১৬৪/৬ ( রহমানউল্লাহ ০, জাজাই ১, তারাকাই ১১, আসগর ৪০, নাজিবউল্লাহ ৫, নবি ৮৪*, নাইব ০, করিম ৫*;  সাইফ ৪-০-৩৩-৪, সাকিব ৪-১-১৮-২, মুস্তাফিজ ৪-০-২৫-০, তাইজুল ৪-০-৩২-০, সৌম্য ২-০-৩১-০, মোসাদ্দেক ১-০-১২-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৩-০)।

বাংলাদেশ: ১৯.৫ ওভারে ১৩৯ (লিটন ০, মুশফিক ৫, সাকিব ১৫, মাহমুদউল্লাহ ৪৪, সৌম্য ০, সাব্বির ২৪, আফিফ ১৬, মোসাদ্দেক ১২, সাইফ ২, তাইজুল ০*, মুস্তাফিজ ১৫; মুজিব ৪-০-১৫-৪, ফরিদ ২.৫-০-৩৩-২, করিম ৩-০-২৭-০, নবি ২-০-১১-০, রশিদ ৪-০-২৩-২, নাইব ৪-০-২৭-২)।

ফল: আফগানিস্তান ২৫ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ নবি