বিশ্বকাপে চোখ রেখে ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ

আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হারের রেশ রয়েছে এখনও। কথা প্রসঙ্গে রাসেল ডমিঙ্গো বলছিলেন বাংলাদেশের টেস্ট রেকর্ডের করুণ অবস্থার কথা। তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো, বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি রেকর্ডও খুব সুবিধের নয়! কোচের মুখে খেলে গেল শুকনো হাসি। বাস্তবতা মেনে নিয়ে বললেন, বিশ্বকাপকে সামনে রেখে টি-টোয়েন্টি দলও গুছিয়ে নিতে হবে। যেটির শুরু এই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট দিয়ে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2019, 02:46 PM
Updated : 12 Sept 2019, 04:35 PM

বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের লড়াই দিয়ে শুক্রবার শুরু ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে খেলা শুরু সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। টুর্নামেন্টের আরেক দল আফগানিস্তান।

মাত্রই বাংলাদেশকে টেস্টে বিশাল ব্যবধানে হারানো আফগানিস্তান এই টুর্নামেন্টেও ফেবারিট। টি-টোয়েন্টিতে তারা বরাবরই সমীহ জাগানিয়া দল। এই টুর্নামেন্টের তিন দলের মধ্যে র‍্যাঙ্কিংয় এগিয়ে তারাই, আছে সাতে। বাংলাদেশ সেখানে আছে দশে, জিম্বাবুয়ে চতুর্দশ।

সময়ের পরিক্রমায় ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ এখন আর ক্রিকেট জগতে নতুন কিছু নয়। তবে বাংলাদেশে এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসলেও ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ হচ্ছে এই প্রথমবার। বলার অপেক্ষা রাখে না, দৃষ্টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।

আগামী বছরের অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসবে অস্ট্রেলিয়ায়। যথারীতি এবারও বাংলাদেশকে খেলতে হবে বিশ্বকাপের প্রাথমিক পর্বে।

গত দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই প্রাথমিক পর্ব উতরে বাংলাদেশ ‘সুপার টেন’ পর্বে খেলেছে। কিন্তু সে পর্বে জিততে পারেনি একটি ম্যাচও। বাংলাদেশের সার্বিক টি-টোয়েন্টি রেকর্ডও ভীষণ বিবর্ণ। ৮৫ ম্যাচ খেলে সাফল্যের হার মোটে ৩১.৩২ শতাংশ, টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে কেবল জিম্বাবুয়ের রেকর্ডই এর চেয়ে বাজে।

সব মিলিয়ে এখন যা অবস্থা, তাতে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার আশা এখন দূরাশা। বাংলাদেশের নতুন কোচ এই জায়গাতেই দলকে এগিয়ে নিতে চান উন্নতির পথে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে ডমিঙ্গো বললেন, বিশ্বকাপের জন্য দলকে গড়ে তোলার শুরু এই আসর থেকেই।

“বিশ্বকাপের আগে আমরা ২০টির মতো টি-টোয়েন্টি পাব। মনে হতে পারে অনেক ম্যাচ। কিন্তু আসলে খুব বেশি নয়। বিশেষ করে কিছু ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার শঙ্কা তো আছেই। তাই হয়তো ১৫-১৬টি ম্যাচ খেলতে পারব বিশ্বকাপের আগে। এই সিরিজ থেকেই তাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। কিছু ক্রিকেটারকে দেখতে হবে, বিশ্বকাপের জন্য যাদের প্রস্তুত করে তোলা যায়। চাপের মধ্যে পারফর্ম করার অভিজ্ঞতা যতটা সম্ভব, তাদের দিতে হবে।”

তরুণদের পরখ করার প্রমাণ বাংলাদেশের স্কোয়াডেই আছে। প্রথম দুই ম্যাচের দলে নেওয়া হয়েছে তরুণ পেসার ইয়াসিন আরাফাতকে। ফেরানো হয়েছে দুই স্পিনিং অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসানকে। বিশেষ করে আফিফকে অনেক দিন থেকেই মনে করা হচ্ছে দারুণ সম্ভাবনাময়। তার জন্য দারুণ সুযোগ এই সিরিজ।

তবে ভবিষ্যতে চোখ রাখলেও বর্তমানকে পুরো অগ্রাহ্য করার জো নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাম্প্রতিক বাস্তবতায় এই টুর্নামেন্টে ভালো পারফরম্যান্স জরুরি। জাতীয় দলসহ আশেপাশের দলগুলি গত কিছুদিনে ব্যর্থ হয়েছে প্রবলভাবে। আফগানিস্তানের কাছে টেস্ট হারার পর অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতলে সবকিছু আবার হয়তো নিয়ন্ত্রণে আসা শুরু করবে।

কোচও আশ্বাস দিলেন, প্রথম ম্যাচে নিজেদের উজার করে দেবে দল।

“টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচই জয়ের জন্য মাঠে নামব আমরা। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যে কোনো দল নিজেদের দিনে যে কাউকে হারাতে পারে। কালকে জয়ের নিশ্চয়তা তাই দিতে পারছি না। তবে যেটা বলতে পারি, আমরা নিজেদের সেরাটা দেব নিশ্চিতভাবেই।”

বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ অবশ্য নিজেরাই আছে বিপদে। বোর্ডে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে আইসিসি টুর্নামেন্ট থেকে নিষিদ্ধ জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ যে বিশ্বকাপের জন্য দল গোছাচ্ছে, জিম্বাবুয়ে সেই টুর্নামেন্টের বাছাইপর্ব খেলার যোগ্যতাই হারিয়েছে নিষেধাজ্ঞার কারণে। তাদের জায়গায় সুযোগ পেয়েছে আফ্রিকার উঠতি শক্তি নাইজেরিয়া।

ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ক্রিকেটারদের কেউ কেউ অবসর নিয়েছেন। এই টুর্নামেন্ট খেলে অবসরে যাচ্ছেন দীর্ঘদিনের সেনানী হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। সামনের পথচলা নিয়ে সংশয়ে আরও অনেকেই।

এই দুর্যোগে তাদের জন্য একটু স্বস্তিতে শ্বাস নেওয়ার উপলক্ষ্য হয়ে এসেছে এই টুর্নামেন্ট। পারিপার্শ্বিকতা ভুলে অধিনায়ক মাসাকাদজা মন দিতে চান শুধু ক্রিকেটেই।

“অবশ্যই অনেক কিছু ঘটে গেছে আমাদের ক্রিকেটে। ক্রিকেটার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সেসব মাঠের বাইরে রেখে মাঠে সেরাটা খেলা। আমাদের প্রথম ও মূল কাজ হলো ক্রিকেটে মন দেওয়া ও সামনে তাকিয়ে নিজেদের উজাড় করে দেওয়া এবং কাল মাঠে নেমে দেশের হয়ে দায়িত্ব পালন করা।”

জিম্বাবুয়ের এই বিপাকে থাকার দুটি দিকই অবশ্য দেখালেন বাংলাদেশ কোচ। আফ্রিকান হিসেবে তাদের চরিত্র সম্পর্কে যথেষ্টই ধারণা আছে ডমিঙ্গোর। সতর্ক করে তাই জানালেন, বিপদ থেকেই নিজেদের সেরাটা বের করে আনতে পারে জিম্বাবুয়ে।

“অনেক সময়ই চরম বিপদে থাকা দল অসাধারণ পারফরম্যান্স করে ফেলে। বিপদে কোনো দল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, আবার একাট্টাও হয়ে উঠতে পারে। আমি আফ্রিকারই একটি জায়গা থেকে এসেছি, আমি জানি ওখানকার চরিত্র। আমার কোনা সন্দেহই নেই যে দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট, এটা তাদেরকে আরও ঐক্যবদ্ধ করবে।”

ক্রিকেটীয় শক্তি ও স্বাগতিক হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও তাই সেই সমীকরণের মূল্য মাঠের ক্রিকেটে থাকবে সামান্যই। দুই দলই আছে বিপদে, যদিও সেটি দুই রকম। মরিয়া প্রচেষ্টা তাই জন্ম দিতে পারে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের।