বিসিবির ব্যবস্থাপনায় এবার ‘বঙ্গবন্ধু বিপিএল’

এবারের বিপিএল নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে বিসিবির নানা টানাপোড়েনের মধ্যে এলো চমকপ্রদ ঘোষণা। কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিকেই কোনো দল দেওয়া হচ্ছে না এবারের বিপিএলে। বিসিবি নিজেরাই চালাবে এই আসর। সবগুলো দল পরিচালনা করা হবে বিসিবি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে সামনে রেখে এবারের বিপিএলের নাম ‘বঙ্গবন্ধু বিপিএল।’

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2019, 09:12 AM
Updated : 11 Sept 2019, 11:05 AM

বুধবার দুপুরে বিসিবিতে সংবাদ সম্মেলনে  এই ঘোষণা দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। পূর্ব নির্ধারিত সময় ৬ ডিসেম্বর থেকেই হবে বিপিএল। তার আগে ৩ ডিসেম্বর হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার সঙ্গে বিসিবি কোনো মতেই মানিয়ে নিয়ে পারছে না বলে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি।  তবে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেন বঙ্গবন্ধুরকে সম্মান জানানো।

“...এটির পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, আপনারা জানেন আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। আমরা চাচ্ছি, এবারের বিপিএল আমরা বঙ্গবন্ধুর নামে উৎসর্গ করব। ‘বঙ্গবন্ধু বিপিএল’আয়োজন করে এবছর আমরা চালাব।”

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আগামী মার্চে বিশ্ব একাদশ ও এশিয়া একাদশের টি-টোয়েন্টি সিরিজের ঘোষণা আগেই দিয়েছিল বিসিবি।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মানকে সবচেয়ে বড় কারণ বলা হলেও নিজেরাই সব দল পরিচালনার এই বিস্ময় জাগানিয়া  সিদ্ধান্তের পেছনে  ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সাংঘর্ষিক দাবির কথাই আগে বললেন বিসিবি সভাপতি।

“এবার ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নতুন চুক্তি হওয়ার কথা। তাদের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। বসে যে আলোচনা হয়েছে এবং সংবাদমাধ্যমে আমরা যা দেখেছি, আমার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা হয়েছে, সব কিছু থেকে আমি বলতে পারি, কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির বেশ কিছু দাবি-দাওয়া আছে। ওই দাবিগুলো বিপিএলের অরিজিনাল মডিউলের সঙ্গে পুরোপুরিই সাংঘর্ষিক। কোনোভাবেই মানিয়ে নিতে পারছি না।”

“আবার কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি বলেছে যে, এই বছর দুটি বিপিএল না হোক, সেটিকেই তারা বেশি উপযুক্ত মনে করে ।  খেলবে না, তা নয়। তবে এক বছরে দুটি খেললে তাদের ওপরে চাপ বেশি পড়ে যায়। সবকিছু মিলিয়ে আমরা ঠিক করেছি, এবারের বিপিএল বিসিবি নিজেরাই চালাবে। কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিকে আমরা দিচ্ছি না। ”

‘নিজেরাই চালানো ‘ ব্যাপারটির ব্যখ্যাও করলেন বিসিবি সভাপতি। ফুটে উঠল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর প্রতি ক্ষোভ ও বিরক্তি।

“প্রত্যেকটি দল যা ছিল, ঠিক থাকবে। শুধু ব্যবস্থাপনায় বিসিবি। ক্রিকেটারদের থাকা-খাওয়া, টাকা-পয়সা, গাড়ী, সব আমরা করব। আমি মনে করি, এত সবাই খুশি হবে। যারা এবার করতে চাচ্ছিলেন না, তারা তো অবশ্যই খুশি হবেন। যারা আর্থিক ক্ষতির কথা বলছেন, তারা তো আরও বেশি খুশি হবেন। তাদের পুরো টাকা বেঁচে যাবে। তো আমরা ঠিক করেছি, আমরাই চালাব।”

বিসিবি সভাপতির দাবি, অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টি-টোয়েন্ট টুর্নামেন্টের আদলে এটি পরিচালনা করা হবে, “আপনারা বিগ ব্যাশের কথা চিন্তা করতে পারেন। একইরকম ফরম্যাট…।”

বিসিবির ব্যবস্থাপনায় সব পরিচালনা করা হলেও নাজমুল হাসান জানালেন, দলগুলির জন্য স্পন্সর নিতে তাদের আপত্তি নেই। এমনকি কোনো দলের স্পন্সর চাইলে বিদেশী কোচ বা বিদেশী ক্রিকেটারও দলে নিতে পারবে।

গত আসরের মতো সাতটি দল থাকবে এবারও। দলগুলির নাম আগের নামেই রাখার চেষ্টা করা হবে বলে জানালেন বিসিবি প্রধান।

ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কোন দাবিগুলো সাংঘর্ষিক, সেসব পুরো খুলে বলেননি নাজমুল হাসান। তবে বেশ কটি ফ্র্যাঞ্চাইজি বিপিএলের রাজস্বের ভাগ দেওয়ার যে দাবি করেছিল, সেটি নিয়ে তিনি বললেন আলাদা করে। জানিয়ে দিলেন বিসিবির ভাবনা।

“রাজস্বের ভাগ দেওয়া সম্ভব নয়। ব্যস, বলে দিলাম। আমাদের ৮০ কোটি টাকা করে দিক, আমরা ৪০ কোটি টাকা দিয়ে দেব। ৮ কোটি টাকা করে নেওয়া হতো ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছ থেকে (ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি), আমরা ১ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছি। ৭ কোটি তো ছেড়েই দিলাম, আবার কী চায়!”

নিয়মের মধ্যে থেকে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি না পেলে এবারের পরের আসরও প্রয়োজনে বিসিবি চালাবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি।

“আমরা সব আইন লিখে বুকলেট ছাপিয়ে দেব। তার পর সেসব মেনে কেউ যদি আসতে চায় তো আসবে, নইলে আমরাই চালাব।”

ভবিষ্যৎ ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থার প্রধান। বিপিএলকে ব্যবসার উপলক্ষ্য হতে দিতে চান না তিনি।

“একটা কথা মনে রাখবেন, আমরা চাই, বিপিএলে যারা আসবে, তারা দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য, ক্রিকেটারদের উন্নয়নের জন্য আসবেন। ব্যবসা করার জন্য নয়। এখানে লাভের সুযোগ নেই।”

“শোনেন, আর্থিক ক্ষতিই যদি হয় (ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর), ৮০ লাখ টাকার ক্রিকেটারকে ৪ কোটি টাকা দিয়ে নিত না। ক্ষতি হলে নিশ্চয়ই এত টাকা দিয়ে নিত না! অবশ্যই লাভ করে, আরও লাভ করতে চায়।”

ব্যবসার জন্য না এলে বা পেশাদারীত্বের জায়গা না থাকলে বিপিএলের সামনের পথচলা নিয়েও শঙ্কা থাকে যথেষ্টই। টুর্নামেন্টের ভবিষ্যৎ কি তাহলে অন্ধকার? বিসিবি সভাপতি উড়িয়ে দিলেন সেই ভাবনাকে।

“অন্ধকার কেন? আমরা চালাব! কী অন্ধকার? বিসিবি চালাতে পারে না। অন্ধকার কী দেখছেন, আমি তো দেখছি না।”

ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে বিসিবির এবার টানাপোড়েনের শুরু কিছুদিন আগে। গত ৪ অগাস্ট সংবাদ সম্মেলনে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল জানায়, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে বিসিবির প্রথম চক্রের ৬ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ গতবছরই। এ বছর থেকে নতুন চক্রে নতুন করে চুক্তি করতে হবে সব ফ্র্যাঞ্চাইজিকেই।

তবে গত বছর চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও এবারের বিপিএলের জন্য বিভিন্ন ক্রিকেটারদের দলে নেওয়ার কাজ এগিয়ে নিচ্ছিল বিভিন্ন  ফ্র্যাঞ্চাইজি। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও তামিম ইকবালকে নিশ্চিত করেছিল খুলনা টাইটানস, মুশফিকুর রহিমকে দলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এরপর গত ৩১ জুলাই রংপুর রাইডার্স বড় আয়োজন করে জানায় সাকিব আল হাসানকে দলে নেওয়ার খবর। বেশকজন বিদেশী ক্রিকেটারের সঙ্গেও দলগুলির কথা হয়ে গিয়েছিল।

এসবের প্রেক্ষিতেই বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল বলেছিল, ক্রিকেটারদের সঙ্গে দলগুলির চুক্তির কোনো ভিত্তি নেই। কারণ, ফ্র্যাঞ্চাইজির চুক্তির মেয়াদই শেষ!

এরপর আলাদা করে সবগুলি ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল বিসিবি। দুই পক্ষের নানা টানাপোড়েনের মধ্যে এবার বিপিএল হবে কিনা, এ নিয়ে অনেক গুঞ্জন চলছিল। শেষ পর্যন্ত এলো এই ঘোষণা।

এখন যদি আবার ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো ফিরতে চায় এবারের বিপিএলে? নাজমুল হাসানের উত্তর, “এগুলো সব শেষ... আর কোনো সুযোগ নেই। এখন সবাইকে নিয়মের মধ্যে আসতে হবে।”