৭০ মিনিটের লড়াইয়েও বাংলাদেশের আত্মসমর্পণ

টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। ঘড়ির কাঁটা ছুঁটছে। ফ্লাড লাইট জ্বলছে। আফগানদের আশা দুলছে। বৃষ্টিময় দিনটির শেষবেলায় ক্রিকেটীয় উত্তেজনার ঢেউ। সম্ভাবনা আর শঙ্কার দোলাচল। সময়ের দাবি ছিল একজন নায়ক। সময়ের ডাক শুনলেন আফগান অধিনায়ক। অসাধারণ বোলিংয়ে রশিদ খান গড়ে দিলেন ম্যাচের ভাগ্য। চট্টলার সাঁঝবেলায় উজ্জ্বল হয়ে উঠল আফগান ক্রিকেট। হতাশার আঁধারে ডুবল বাংলাদেশ।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি চট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2019, 12:51 PM
Updated : 9 Sept 2019, 04:15 PM

৭০ মিনিট। সম্ভাব্য ১৮.৩ ওভার। টিকে থাকলেই ড্র। ম্যাচ জুড়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে শেষ দিনে ম্যাচ বাঁচানোর দারুণ এক সুযোগ করে দিয়েছিল বৃষ্টি। কিন্তু দৃষ্টিকটু ক্রিকেটের প্রদর্শনীতে এই ম্যাচও হারল বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টে ২২৪ রানের জয়ে আফগানিস্তান গড়ল ইতিহাস।

নিজেদের মাত্র তৃতীয় টেস্টেই দ্বিতীয় জয় পেল আফগানরা। তৃতীয় টেস্টেই দ্বিতীয় জয় এর আগে পেয়েছিল কেবল অস্ট্রেলিয়া। 

৬ উইকেটে ১৩৭ রান নিয়ে শুরু করা বাংলাদেশ শেষ ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ১৭৩ রানে। তবে সমীকরণ থেকে রানের হিসাব হারিয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। ছিল কেবল টিকে থাকার লড়াই। বাংলাদেশ সেই লড়াইয়ে হার মেনেছে সম্ভাব্য ২০ বল আগে।

বাংলাদেশকে হারানোর আয়োজন প্রথম চার দিনেই করে ফেলেছিল আফগানরা। শেষ দিনে বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াল প্রকৃতি। বৃষ্টিতে দিনের অনেকটা সময় ভেসে গেলেও শেষ পর্যন্ত একটু সুযোগ পেয়ে সেটুকুই কাজে লাগিয়ে আফগানরা ভাসল জয়ের উল্লাসে।

বাংলাদেশের শেষ তিনটি উইকেট নিয়ে শেষের নায়ক রশিদ খান। গোটা ম্যাচেরও নায়ক তিনি। ইনিংসে নিয়েছেন ৬ উইকেট। ম্যাচে ১১ উইকেট। সঙ্গে প্রথম ইনিংসে ছিল ফিফটিও। নেতৃত্বের অভিষেকে এমন অসাধারণ পারফরম্যান্স নেই টেস্ট ইতিহাসে আর কারও।

রোমাঞ্চকর শেষের আগে সকাল থেকে রশিদ ও আফগানদের দিন কেটেছে অস্থির অপেক্ষায়। সোমবার ভোর থেকে ছিল প্রবল বৃষ্টি। প্রথম সেশন যায় ভেসে।

বৃষ্টি থামার পর দুপুর ১টায় শুরু হলো খেলা। সম্ভাব্য ৬৩ ওভার খেলা চালানোর লক্ষ্য।  কিন্তু ১৩ বল পরই আবার বৃষ্টি। এই সময়ে বাংলাদেশ হারায়নি উইকেট। আফগানরা হারাতে থাকে আশা।

রোদ-মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরিতে গড়াতে থাকল বেলা। শেষ পর্যন্ত প্রকৃতি সদয় হলো আফগানদের প্রতি। বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে শুরু হলো খেলা। জানানো হলো, আলো থাকলে চলবে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। চেষ্টা হবে অন্তত ১৮.৩ ওভার খেলা চালানোর।

জয়ের তাড়নায় আফগানরা মরিয়া ছিল মাঠে নামতে। কাভার সরানোর আগেই তারা নেমে যায় মাঠে। খেলা শুরুর পর প্রথম বলেই পেয়ে যায় বড় এক উপহার।

৪৪ রানে অপরাজিত থেকে খেলা শুরু করেছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু বিরতির পর প্রথম বলেই এমন একটি শট খেললেন, যেটির ব্যাখ্যা কোনোভাবেই পাওয়া কঠিন। চায়নাম্যান বোলার জহির খানের করা স্টাম্পের বাইরের যে বল ছাড়া যায় অনায়াসে, সাকিব চাইলেন শট খেলতে। কাট করতে গিয়ে কটবিহাইন্ড!

বাংলাদেশের সম্ভাবনায় বড় চোট লাগল তখনই। আফগানরা হয়ে উঠল আরও উজ্জীবিত। একবার জীবন পেয়েও মেহেদী হাসান মিরাজ পারলেন না টিকতে। রশিদ খানের বলে বিদায় নেওয়ার পাশাপাশি শেষ করে এলেন বাংলাদেশের শেষ রিভিউ।

সেটি আক্ষেপে পোড়াল একটু পরই। ব্যাটে লাগার পরও তাইজুল ইসলামকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন অভিষিক্ত আম্পায়ার পল উইলসন। হতাশ তাইজুলকে মাঠ ছাড়তে হয় রিভিউ না থাকায়।

ভরসা হয়ে টিকে তখন কেবল সৌম্য সরকার। তবে আস্থার প্রতিদান তিনি পারেননি দিতে। ছিলেন নড়বড়ে। শেষ ব্যাটসম্যান নাঈম হাসানকে স্ট্রাইক দেওয়া, না দেওয়া নিয়ে দ্বিধা ফুটে উঠছিল বারবার। পরিষ্কার ছিলেন না ভাবনায়।

আলো কমে আসছিল। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছিল। ঝিরঝির বৃষ্টি বলে দিচ্ছিল, যে কোনো সময় খেলার ইতি টানবেন আম্পায়াররা। কিন্তু বীরোচিত পারফরম্যান্সের ম্যাচের শেষটা ওভাবে কেন হতে দেবেন রশিদ!

আম্পায়ারের আঙুল যখন জানিয়ে দিল শেষ ব্যাটসম্যানের বিদায়ের ঘোষণা, রশিদ খানকে তখন পায় কে! বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে ছুটছেন তখন আফগান অধিনায়ক। ছুটছে আফগান ক্রিকেটও!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আফগানিস্তান ১ম ইনিংস: ৩৪২

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২০৫

আফগানিস্তান ২য় ইনিংস: ২৬০

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৯৮, আগের দিন ১৩৬/৬) ৬১.৪ ওভারে ১৭৩ (সাকিব ৪৪,সৌম্য ১৫, মিরাজ ১৫, তাইজুল ০, নাঈম ১*; ইয়ামিন ৪-১-১৪-০, নবি ২০-৫-৩৯-১, রশিদ ২১.৪-৬-৪৯-৬, জহির ১৫-০-৫৯-৩, কাইস ১-০-৬-০)।

ফল: আফগানিস্তান ২২৪ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: রশিদ খান