বাংলাদেশের ওপর আফগানিস্তানের রানের বোঝা

প্রথম ওভারেই দুই উইকেট। সাকিব আল হাসানের চাওয়া মতো সত্যিই কি ‘ম্যাজিক্যাল’ কিছু করবে বাংলাদেশ! অধিনায়কের জোড়া উইকেটে ক্ষণিকের জন্য আশা জাগল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে ইব্রাহিম জাদরান, আসগর আফগানদের ব্যাটে পিষ্ট হলো জাদুকরী কিছুর আশা। বড় লিড নিয়ে আফগানিস্তান উপহার দিল কঠিন বাস্তবতা। যেখানে জয় যেন দূর আকাশের তারা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি চট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2019, 09:09 AM
Updated : 7 Sept 2019, 02:46 PM

বাংলাদেশের সব আশা মাড়িয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে আফগানরা ছুটে চলেছে স্বপ্নময় জয়ের পথে। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেটে ২৩৭ রান তুলে তৃতীয় দিন শেষ করেছে আফগানিস্তান।

প্রথম ইনিংসের ১৩৭ রানের লিড মিলিয়ে আফগানরা এগিয়ে গেছে ৩৭৪ রানে। উইকেট আছে এখনও দুটি। বাকি আছে পুরো দুটি দিন।

চতুর্থ ইনিংসে কখনোই ২১৫ রানের বেশি তাড়া করে জেতেনি বাংলাদেশ। এই মাঠে ৩১৭ রানের বেশি তাড়া করে জেতেনি কোনো দল।

আফগানরা ইনিংস ছাড়েনি, তার আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে, জিততে হলে বাংলাদেশকে করতে হবে অভাবনীয় কিছু।

প্রথম ইনিংসে বড় লিড গুনলেও বল হাতে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। প্রথম ওভারেই সাকিব নিয়েছিলেন ২ উইকেট। তৃতীয় উইকেটও ধরা দিয়েছিল দ্রুত। কিন্তু ইব্রাহিম ও আসগরের শতরানের জুটিতে আবার ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় আফগানিস্তান।

অভিষেক আন্তর্জাতিক ম্যাচেই সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েছিলেন ইব্রাহিম। কিন্তু নিজের ভুলেই আউট হয়ে যান ৮৭ রানে। প্রথম ইনিংসে ৯২ রানের পিঠে আসগর এবার করেছেন ৫০।

বাংলাদেশের আশাভঙ্গের পর্ব শুরু দিনের শুরু থেকেই। ৮ উইকেটে ১৯৪ রান নিয়ে শুরু করা দল দিনের প্রথম ওভারেই হারায় উইকেট। দিনের চতুর্থ ওভারে শেষ বাকি উইকেটও। দুই উইকেটে এ দিন তারা যোগ করতে পারে আর কেবল ১১ রান।

খানিকটা আশার আলো দেখা গিয়েছিল এরপরই। আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম ওভারেই সাকিব ফেরান ইহসানউল্লাহ ও রহমত শাহকে।

প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান রহমত শাহ এবার দেখেছেন মুদ্রার উল্টোপিঠ, গোল্ডেন ডাক!

চারে নামা হাশমতউল্লাহ শহিদিকে যখন ফেরালেন নাঈম হাসান, আফগানিস্তানের রান ৩ উইকেটে ২৮। বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরেছিল ভালোভাবেই।

সেই ভালো টেকেনি লম্বা সময়। ইব্রাহিম ও আসগরের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের কোনো জবাব পায়নি বাংলাদেশ। উল্টো সবার শরীরী ভাষা মিইয়ে আসে ক্রমে। বোলাররাও প্রায় প্রতি ওভারে করতে থাকেন হাফভলি, শর্ট পিচ, এলোমেলো লেংথে বল। ইব্রাহিম ও আসগর ফায়দা নেন দারুণভাবে।

বাজে বোলিংয়ের পাশাপাশি দায় ছিল ফিল্ডিংয়েরও। তিনবার ক্লোজ ইন ফিল্ডারদের সুযোগ দিয়েছিলেন ইব্রাহিম। খুবই কঠিন সুযোগ, কিন্তু এমন ম্যাচে ফিরতে হলে তো দারুণ কিছু করতে হবেই! বাংলাদেশ তা পারেনি। শূন্য, ৬৫ ও ৬৬ রানে বেঁচে যান ইব্রাহিম।

আসগরকে ৫০ রানে ফিরিয়ে চতুর্থ উইকেটে ১০৮ রানের জুটি ভেঙেছেন তাইজুল। ততক্ষণে আফগানদের লিড বাড়ার মেশিন চালু হয়ে গেছে।

অভিষেকেই চমকে দেওয়া পরিণত ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছিলেন ইব্রাহিম। কিন্তু অনভিজ্ঞতা ফুটে ওঠে তার বিদায়ের শটে। সীমানায় ফিল্ডার থাকলেও আচমকা নাঈমকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন লং অনে।

৬ চার ও ৪ ছক্কায় ২০৮ বলে ৮৭ রানের ইনিংসটায় ১৭ বছর বয়সী ওপেনার রেখেছেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ছাপ।

এরপর প্রথম ইনিংসের মতোই কার্যকর ইনিংস খেলেছেন কিপার ব্যাটসম্যান আফসার জাজাই। রশিদ খান করেছেন ২২ বলে ২৪, যেটির পথে নাঈমের এক ওভারে মারেন ৫ বাউন্ডারি। 

শেষ বেলায় হুট করে বিদ্যুৎ চলে যায় পুরো মাঠের। বন্ধ হয় ফ্লাডলাইট। আলোকস্বল্পতায় একটু আগেই শেষ হয় দিনের খেলা। যেটি পুষিয়ে নিতে রোববার সকালে খেলা শুরু হবে ২০ মিনিট আগে।

তবে তৃতীয় দিনের শেষটাই এই ম্যাচে যেন বাংলাদেশের বাস্তবতার প্রতীকী। সামনে কেবল অন্ধকার!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আফগানিস্তান ১ম ইনিংস: ৩৪২

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২০৫

আফগানিস্তান ২য় ইনিংস: ৮৩.৪ ওভারে ২৩৭/৮ (ইহসানউল্লাহ ৪, ইব্রাহিম ৮৭, রহমত ০, শহিদি ১২, আসগর ৫০, আফসার ৩৪*, নবি ৮, রশিদ ২৪, কাইস ১৪, ইয়ামিন ০*; সাকিব ১৬-৩-৫৩-৩, মিরাজ ১২-৩-৩৫-১, তাইজুল ২৪.৪-৫-৬৮-২, নাঈম ১৭-২-৬১-২, মুমিনুল ১০-৬-১৩-০, মোসাদ্দেক ৪-১-৩-০)।