মালিঙ্গার অবিশ্বাস্য কীর্তিতে শ্রীলঙ্কার জয়

টানা চার বলে উইকেট, ক্রিকেটের পরিভাষায় বলা হয় ডাবল হ্যাটট্রিক। ক্রিকেট ইতিহাসে অমর হয়ে থাকার জন্য এই কীর্তি একবারই যথেষ্ট। জাদুকরী বোলিংয়ে লাসিথ মালিঙ্গা সেটিই করে দেখালেন দুইবার! অধিনায়কের ইতিহাস গড়া বোলিংয়ে শেষ টি-টোয়েন্টিতে নিউ জিল্যান্ডকে হারাল শ্রীলঙ্কা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2019, 06:06 PM
Updated : 6 Sept 2019, 06:31 PM

প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল নিউ জিল্যান্ড। শুক্রবার শেষ টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কা জিতেছে ৩৭ রানে।

পাল্লেকেলেতে আগের ম্যাচেই ব্যবহার হওয়া উইকেটে শ্রীলঙ্কা ২০ ওভারে করতে পেরেছিল ১২৫ রান। মালিঙ্গা সেই রানকেই যথেষ্ট করে তুলেছেন জয়ের জন্য। ১৬ ওভারে কিউইরা গুটিয়ে গেছে ৮৮ রানে।

ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪ ওভারে ৬ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন মালিঙ্গা। নিজের দ্বিতীয় ওভারে টানা চার বলে আউট করেছেন কলিন মানরো, হামিশ রাদারফোর্ড, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও রস টেইলরকে।

চার উইকেটের একটিতেও লাগেনি কোনো ফিল্ডারের সাহায্য; দুটি বোল্ড, দুটি এলবিডব্লিউ।

এর আগে ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা চার বলে উইকেট নিয়েছিলেন মালিঙ্গা।

দুইবার এই কীর্তি নেই আর কারও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসেই টানা চার বলে উইকেট আছে আর কেবল একজনের। গত মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছিলেন আফগানিস্তানের রশিদ খান।

মালিঙ্গার কীর্তির শেষ নয় এখানেই। একমাত্র বোলার হিসেবে তিনটি ওয়ানডে হ্যাটট্রিক তার ছিল আগে থেকেই। এবার প্রথম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে করলেন দুটি হ্যাটট্রিক।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার মোট ৫ হ্যাটট্রিকও রেকর্ড। পেছনে পড়ে গেলেন ৪ হ্যাটট্রিক করা ওয়াসিম আকরাম।

ব্যাটসম্যানদের ছোট পুঁজির পর জিততে হলে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল শুরুতে দ্রুত উইকেট। অধিনায়ক সেই দায়িত্ব নিলেন নিজের কাঁধে।

প্রথম ২ ওভারে ১৫ রান তুলেছিল নিউ জিল্যান্ড। এরপরই মালিঙ্গার জাদু। ভেতরে ঢোকা বলে ব্যাড-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড মানরো।

এই উইকেটেই প্রথম বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেট পূরণ হয় মাললিঙ্গার।

পরের শিকার রাদারফোর্ড। দীর্ঘদিন পর নিউ জিল্যান্ড দলে সুযোগ পাওয়া ব্যাটসম্যানের ফেরা তেতো হয়ে ওঠে দ্রুতই। ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আম্পায়ার আউট দেননি, মালিঙ্গা জেতেন রিভিউ নিয়ে।

হ্যাটট্রিক বলের মুখোমুখি হয়েছিলেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। মালিঙ্গা সেরা ডেলিভারি জমা রেখেছিলেন যেন এই মুহূর্তের জন্যই। দেরিতে সুইং করা অসাধারণ ইয়র্কারটির জবাব পাননি দারুণ ফর্মে থাকা ডি গ্র্যান্ডহোম।

পরের বলে আরেকটি ইতিহাস গড়া উপলক্ষ্য। আরেকটি ইয়র্কার। এবার এলবিডব্লিউ টেইলর।

পরের ওভারে ধরা দেয় পঞ্চম উইকেট। টিম সাইফার্ট ক্যাচ দেন স্লিপে।

২৩  রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে অনেকটা ছিটকে পড়ে নিউ জিল্যান্ড। পরে স্পিনাররাও উইকেট শিকারে যোগ দিলে আর দাঁড়াতে পারেনি কিউই ব্যাটিং। ৫২ রানে হারায় তারা নবম উইকেট। শেষ দিকে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক টিম সাউদির ৩ ছক্কায় ২৮ রানে খানিকটা ভদ্রস্থ হয় স্কোর।

অথচ মাঝ বিরতিতে কিউইরাই ছিল ফেভারিট। মন্থর উইকেটে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের ডানা মেলতে দেয়নি কিউই স্পিনাররা।

ওপেনিংয়ে দানুশকা গুনাথিলাকা ২৫ বলে ফিরেছেন ৩০ রান করে। টপ অর্ডারে রান পাননি আর কেউ। মিডল অর্ডারে নিরোশান ডিকভেলা করেছেন ১৫ বলে ২৪, অভিষিক্ত লাহিরু মাদুশানাকা ২৩ বলে ২০। বলার মতো রান নেই আর কারও।

দারুণ বোলিংয়ে তিনটি করে উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনার ও লেগ স্পিনার টড অ্যাস্টল।

কিউইদের সামনে তখন শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করার হাতছানি। কিন্তু মালিঙ্গার মনে ছিল অন্য কিছু!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১২৫/৮ (গুনাথিলাকা ৩০, কুসল পেরেরা ৩, আভিশকা ৬, ডিকভেলা ২৪, মাদুশানাকা ২০, শানাকা ৭, হাসারাঙ্গা ১৪*, উদানা ২, দনাঞ্জয়া ০, মালিঙ্গা ৬*; সাউদি ৪-০-১৬-০, র‍্যান্স ৩-০-২৯-০, স্যান্টনার ৪-১-১২-৩, কুগেলাইন ৪-০-২১-১, অ্যাস্টল ৪-০-২৮-৩, ডি গ্র্যান্ডহোম ১-০-১০-০)।

নিউ জিল্যান্ড: ১৬ ওভারে ৮৮ (মানরো ১২, সাইফার্ট ৮, রাদারফোর্ড ০, ডি গ্র্যান্ডহোম ০, টেইলর ০, মিচেল ৬, স্যান্টনার ১৬, কুগেলাইন ০, সাউদি ২৮*, অ্যাস্টল ৩, র‍্যান্স ৮; মালিঙ্গা ৪-১-৬-৫, দনাঞ্জয়া ৪-০-২৮-২, সান্দাক্যান ৪-০-৩৩-১, গুনাথিলাকা ১-০-৭-০, হাসারাঙ্গা ৩-০-১২-১)।

ফল: শ্রীলঙ্কা ৩৭ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: লাসিথ মালিঙ্গা

ম্যান অব দা সিরিজ: টিম সাউদি