ব্যাটিংয়ে ভালো স্কোরের পর দুর্দান্ত বোলিংয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আফগানিস্তান। এগিয়ে যাচ্ছে বড় লিডের পথে। প্রথম ইনিংসে আফগানদের ৩৪২ রানের জবাবে বাংলাদেশ শুক্রবার দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ৮ উইকেটে ১৯৪ রানে।
এখনও ১৪৮ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ, হাতে উইকেট কেবল দুটি।
বাংলাদেশের ইনিংস যে এ দিনই শেষ হয়নি, শেষ বেলার সবচেয়ে বড় বিস্ময় এটিই। তা সম্ভব হয়েছে নবম উইকেটে মোসাদ্দেক হোসেন ও তাইজুল ইসলামের সৌজন্যে। শেষ ঘণ্টায় দারুণ দৃঢ়তায় ৪৮ রানের জুটি গড়েছেন দুজন। বাংলাদেশ ইনিংসের যা সর্বোচ্চ জুটি!
শেষ সময়টুকু বাংলাদেশ স্বস্তিতে পার করলেও দিনটি আফগানিস্তানের। দিনটি রশিদ খানের।
অথচ দিনের শুরুটা খুব খারাপ কাটেনি বাংলাদেশের। ৫ উইকেটে ২৭১ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিল আফগানিস্তান। এ দিন বাকি ৫ উইকেটে তারা যোগ করতে পারে আর ৭১ রান।
৮৮ রানে দিন শুরু করা আসগর আফগান আউট হন ৯২ রানে। ৩৫ রানে শুরু করে আফসার জাজাই বিদায় নেন ৪১ রানে। তারপরও আফগানদের রান বেড়েছে রশিদের ৫১ রানের ইনিংসে।
৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফলতম বোলার তাইজুল। প্রথম দিন উইকেটশূন্য সাকিব এ দিন নেন দুটি।
সকালের সেশনেই ৫ উইকেট নিয়ে স্বস্তিতেই মাঠ ছেড়েছিল বাংলাদেশ। দুর্দশার শুরু লাঞ্চের একটু আগে থেকে। ব্যাটিংয়ের সুযোগ ছিল ৪ ওভার। প্রথম ওভারেই বাজে শটে বিদায় নেন সাদমান ইসলাম।
ছুটিতে থাকা তামিম ইকবাল না থাকায় এক প্রান্ত আটকে রাখতে সাদমানের দিকে তাকিয়ে ছিল দল। কিন্তু অফ স্টাস্পের অনেক বাইরের বলে অযথা ব্যাট পেতে বাঁহাতি ওপেনার বিদায় নেন শূন্য রানেই। ম্যাচের একমাত্র স্পেশালিস্ট পেসার ইয়ামিন আহমাদজাই দলকে উইকেট এনে দেন প্রথম ওভারেই।
লাঞ্চের পর কিছুটা চমকে দেন সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। সহজাত আগ্রাসী দুই ব্যাটসম্যান বেছে নেন ‘ধীরে চলো’ নীতি।
নতুন বলে দারুণ বোলিং করেছেন ইয়ামিন ও মোহাম্মদ নবি। তাদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে আটকে যান সৌম্য ও লিটন। চায়নাম্যান বোলার জহির খানের বলে লিটনের ছক্কায় বাংলাদেশ ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি আসে ১৭তম ওভারে!
সেই সতর্কতার ফল শেষ পর্যন্ত নিতে পারেননি দুজনের কেউই। এক প্রান্ত থেকে টানা বোলিং করে যাওয়া নবির সোজা বলে লাইন মিস করে সৌম্য ফেরেন ৬৬ বলে ১৭ রান করে। দুই অঙ্ক ছোঁয়া ইনিংসগুলোর মধ্যে যা তার মন্থরতম টেস্ট ইনিংস। ভাঙে ১৯ ওভারে ৩৮ রানের জুটি।
লিটন শুরুর অস্বস্তি কাটিয়ে সাবলীল হতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার পতন হয়েছে থিতু হয়েও মনোযোগ হারানোর পুরানো রোগে।
রশিদ খানের সেটি প্রথম ওভার। তার বলের গতি, লেংথের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার আগেই জোরের ওপর করা বলে পুল খেলতে চাইলেন। শুনলেন স্টাম্প ভাঙার আওয়াজ। বিদায় ৩৩ রানে।
১১ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে সাকিব ফেরেন রিভিউ খুইয়ে। মুশফিক শূন্য রানে ফেরেন তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে। ব্যাট থেকে বুটের অগ্রভাগে লেগে শর্ট লেগে যাওয়া ক্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে মাঠের আম্পায়ারের সফট সিগন্যাল।
চা বিরতির পর আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহও টিকতে পারেননি রশিদের সামনে। শর্ট বল পেছনে পায়ে খেলতে চেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তাকে হতবাক করে বল অনেকটা নিচু হয়ে লাগে স্টাম্পে।
বিরুদ্ধ স্রোতে লড়াই করছিলেন তখন কেবল মুমিনুল হক। এক প্রান্তে খেলছিলেন স্বচ্ছন্দেই। ক্রমাগত উইকেট পড়ছে বলেই কিনা, আচমকাই খেলতে শুরু করলেন শট। আদায় করে নিলেন কয়েকটি বাউন্ডারি। পৌঁছে গেলেন ফিফটিতে।
কিন্তু অতি আগ্রাসী হওয়ার খেসারতই দিতে হলো তাকে। নবিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে সহজ ক্যাচ দিলেন ৫২ রানে।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তার রেকর্ড অবিশ্বাস্য। আগে ৮ টেস্টে ৬ বার পঞ্চাশ ছুঁয়ে প্রতিটিই রুপ দিয়েছেন সেঞ্চুরিতে। ফিফটিতে আটকে থাকা এই প্রথম।
এরপর কাইস আহমেদের প্রথম টেস্ট শিকার হয়ে ফিরছেন যখন মেহেদী হাসান মিরাজ, বাংলাদেশের ইনিংস তখন শেষের খুব কাছে।
দুজনের জুটিতে শেষটা স্বস্তিতে হয়েছে। তবে তাদের সামনে, দলের সামনে এখন অনেক দীর্ঘ পথ। ম্যাচে ফিরতে হলে বাংলাদেশকে করতে হবে দারুণ কিছু।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস: ৩৪২
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৬৭ ওভারে ১৯৪/৮ (সাদমান ০, সৌম্য ১৭, লিটন ৩৩, মুমিনুল ৫২, সাকিব ১১, মুশফিক ০, মাহমুদউল্লাহ ৭, মোসাদ্দেক ৪৪*, মিরাজ ১১, তাইজুল ১৪*; ইয়ামিন ১০-২-২১-১, নবি ২০-৬-৫৩-২, জহির ৯-১-৪৬-০, রশিদ ১৮-৩-৪৭-৪, কাইস ৮-২-২২-১)।