দেশের ক্রিকেটের দুঃসময় কাটাতে জয় চান সাকিব

ভারত সফর দিয়ে সামনেই শুরু হবে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের পথচলা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হতে পারত দারুণ একটি প্রস্তুতি পর্ব। কিন্তু পেছনের দুঃসময় এতটা গাঢ় যে সামনে সম্ভাবনায় তাকাতেও এখন ভয়! জাতীয় দল থেকে শুরু করে দেশের ক্রিকেটের অন্যান্য পর্যায়েও যে হতাশার স্রোত, সেটি থামাতেই আফগানদের বিপক্ষে জয় খুব করে চাইছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি চট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Sept 2019, 01:30 PM
Updated : 4 Sept 2019, 05:31 PM

আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন মৌসুম। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হবে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায়।

প্রায় ৬ মাস পর টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। এর মধ্যেই ৬টি দল শুরু করে দিয়েছে নতুন শুরু হওয়া আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের অভিযান। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্টটি অংশ নয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের। টেস্টের নবীন দলটির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে তাই নিজেদের তৈরি করার ভালো সুযোগ বাংলাদেশের সামনে।

তবে তৈরি করা বা একটু পরীক্ষা-নিরিক্ষা করার বাস্তবতায় নেই বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে অষ্টম স্থানে থেকে শেষ করেছে দল। এরপর শ্রীলঙ্কায় গিয়ে হোয়াইটওয়াশড হয়ে এসেছে ওয়ানডে সিরিজে। এই সময়টায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল, হাই পারফরম্যান্স দল, বিসিবি একাদশ, জাতীয় পর্যায়ের কোনো দলই সেভাবে দেখাতে পারেনি আশা জাগানিয়া পারফরম্যান্স।

সব মিলিয়ে দেশের ক্রিকেটে যে অস্থিরতার হাওয়া, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে সেটিকে স্বস্তির সুবাতাসে রূপ দিতে চান সাকিব। টেস্ট শুরুর আগের দিন বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, এই টেস্টে জিততে চান তারা যে কোনো মূল্যে।

“বাংলাদেশ ক্রিকেটের শেষ কিছু দিন ভালো সময় কাটেনি। সবদিক থেকে, সেটা ‘এ’ দল বলেন, একাডেমি বলেন, কোথাও আমরা ভালো পারফর্ম করতে পারিনি। কেবল অনূর্ধ্ব-১৯ দল ফাইনাল খেলেছে ইংল্যান্ডে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে আমাদের জন্য এই ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ। কারণ আমরা যদি এই ম্যাচ ভালোভাবে জিততে পারি, আমার কাছে মনে হয়, অনেক কিছুই আবার একটু স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।”

জিততে কতটা মরিয়া দল, সেটি আরও স্পষ্ট হলো পরের কথায়। ‘ভালোভাবে জয়’ বলেও পরে শুধরে নিলেন অধিনায়ক। বললেন, যে কোনোভাবে জয়ই তাদের প্রবল প্রত্যাশা।

“নাহ, জয়টাই গুরুত্বপূর্ণ। ভালোভাবে আর খারাপভাবে বলে নয়। ১ রানে জিতলেও সেটি জয়, ১০০ রানে জিতলেও। ১ উইকেট হোক বা ১০ উইকেট, জয় জয়ই। জেতাটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”

আফগানিস্তান টেস্ট পরিবারের নবীন সদস্য। এখন পর্যন্ত খেলেছে কেবল দুটি টেস্ট। তবে সার্বিক বিবেচনায় তাদেরকে সেই অর্থে নতুন ভাবার সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে তারা ১০ বছর ধরে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুটায় যেমন একটি ম্যাচ খেলতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বছরের পর বছর, তারা সেখানে ম্যাচ খেলেছে নিয়মিত। এছাড়াও টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার আগে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ ও অন্যান্য টুর্নামেন্টে বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ তারা খেলেছে প্রচুর।

ভয়ডরহীন মানসিকতা ও ইতিবাচক ক্রিকেট খেলে এর মধ্যেই বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের ছাপ রাখতে পেরেছে আফগানরা। ভারপ্রাপ্ত কোচ অ্যান্ডি মোলস মঙ্গলবার বলেছেন, বাংলাদেশকে সমীহ করলেও ভয় নেই তাদের।

সব মিলিয়ে নবীন টেস্ট দলের বিপক্ষেও চ্যালেঞ্জ মোটেও সহজ হওয়ার কথা নয় বাংলাদেশের জন্য। আফগান অধিনায়ক রশিদ খানের কণ্ঠেও উঠে এলো এই বাস্তবতা।

“স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডের মতো দলগুলির বিপক্ষে আগে আমরা চার দিনের ম্যাচে ভালো করেছি। পাঁচ দিনের ম্যাচে আসার আগে কিছু অভিজ্ঞতা তাই আমাদের ছিল। ভারত ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্ট আমরা খেলেছি। কিছুটা অভিজ্ঞতা তাই আমাদের আছে।”

“অবশ্যই বাংলাদেশ আমাদের চেয়ে এগিয়ে, দেড়শর বেশি টেস্ট খেলেছে তারা (১১৪টি)। আমরা এই সংস্করণে নতুন হলেও আমাদের প্রতিভা আছে, স্কিল আছে। স্রেফ ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে হবে। নিজের শক্তি অনুযায়ী খেলতে হবে এবং নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।”

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এর মধ্যেই অনেকবার পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। পরস্পরের শক্তি-দুর্বলতাও জানা ভালোভাবেই। এখানে তাই মূল চ্যালেঞ্জ মাঠের বাইরে করা পরিকল্পনা মাঠে কাজে লাগানো।

দেশের মাটিতে টেস্টে গত তিন বছরে বাংলাদেশের পরিকল্পনার মূল অংশ জুড়ে ছিল স্পিন বোলিং। টার্নিং উইকেট বানিয়ে স্পিন সমৃদ্ধ বোলিং আক্রমণ নিয়ে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করার পরিকল্পনায় দারুণভাবে সফল হয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু আফগানদের বড় শক্তিও যে স্পিন আক্রমণ! এবার তাই কেমন উইকেটের কৌশল বেছে নেওয়া হবে, সেটি নিয়ে আছে কৌতূহল।

তবে উইকেট যেমনই থাকুক, দুই দলের মূল শক্তি যেহেতু স্পিন, ম্যাচে স্পিনারদের বড় ভুমিকা থাকবেই। সাকিব আল হাসান সেটি মানছেন। মেনেই দেখাচ্ছেন উল্টো ছবি। দুই দলের স্পিন শক্তি কাছাকাছি বলেই বাংলাদেশ অধিনায়কের ধারণা, ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেবে ব্যাটিং।

“দেখুন দেশে আমরা তো ভালোই বোলিং করেছি। আমাদের স্পিনাররা যখনই সুযোগ পেয়েছে, তাদের পছন্দমতো উইকেট যখন পেয়েছে, সবসময়ই ভালো করেছে। আবার ওদেরও মানসম্পন্ন স্পিনার আছে। আমার মনে হয় যে, এখানে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে দুই দলের ব্যাটিংটাই।”

ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জ জয়ে দলের ওপর পুরো আস্থা রাখছেন সাকিব। অধিনায়ককে বিশ্বাস জোগাচ্ছে, গত দুই সপ্তাহের প্রস্তুতি।

“আমাদের চ্যালেঞ্জ অবশ্যই থাকবে ব্যাটসম্যানদের পারফর্ম করার। ওদের যারা ফাস্ট বোলার আছে তারাও বেশ ভালো মানের। স্পিনাররা তো খুবই ভালো। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।”

“তবে আমি আমার ব্যাটসম্যানদের ওপর পুরোপুরি আস্থা রাখছি। গত দুই সপ্তাহে যতটা প্রস্তুতি নিয়েছে, আসলে এর চেয়ে বেশি কিছু করা আমার কাছে উচিত বলে মনে করি না। সবাই যার যার জায়গা থেকে সর্বোচ্চটা দিয়েছে। এখন শুধু মাঠে ওই অনুশীলনের প্রতিফলন ফেলতে পারলে, আমরা ভালো কিছু করতে পারব।”

এই ‘ভালো কিছু’ মানে জয়। সাকিব তা বলেছেন শুরুতেই, যা দেবে জয়ে মৌসুম শুরুর স্বস্তি। কাটবে দুঃসময়ের বাতাবরণ।