স্টোকসের অসাধারণ ইনিংস ও অবিশ্বাস্য শেষ উইকেট জুটিতে নিজেদের রান তাড়ার নতুন ইতিহাস গড়ে জিতল ইংল্যান্ড। ৩৫৯ রান তাড়ায় ১ উইকেটের জয়ে সমতা ফেরাল অ্যাশেজে। জিইয়ে রাখল সিরিজের উত্তেজনা।
শেষ ব্যাটসম্যান জ্যাক লিচ যখন উইকেটে গিয়েছিলেন, ইংল্যান্ডের জিততে তখনও প্রয়োজন ৭৩ রান। সেই প্রায় অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে ইংলিশরা ৭৬ রানের অবিচ্ছিন্ন শেষ জুটিতে। জুটিতে লিচের অবদান কেবল ১ রান, যে রানে সমতা আসে দুই দলের স্কোরে। এরপর স্টোকসের সেই শটে জয়। শেষ জুটিতে এই অলরাউন্ডারের নিজের রান ৪৪ বলে ৭৪!
অথচ দিনের শুরুতে এক পর্যায়ে স্টোকসের রান ছিল ৮১ বলে ৯। অভাবনীয় এক জয়ের নায়ক হয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ২১৯ বলে ১৩৫ রান করেন। ১১ চারের পাশে ইনিংসে ছক্কা ৮টি!
এই জয়ই ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। সেই ১৯২৮ সালে অ্যাশেজেই ৩৩২ রান তাড়ায় জয় ছিল ইংলিশদের আগের রেকর্ড।
শুধু এই ইনিংসের প্রেক্ষাপটেই জয়টি অবিশ্বাস্য নয়। প্রথম ইনিংসে ৬৭ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। তখন এমন জয়ের কথা কে ভেবেছিল? স্টোকসের সৌজন্যে সেটিই হয়েছে বাস্তব। গত ১৩১ বছরে এক ইনিংসে এত কম রান করে টেস্ট জিততে পারেনি কোনো দল।
অস্ট্রেলিয়া দায় দিতে পারে নিজেদেরই। ম্যাচ যখন মুঠোয়, স্টোকসের রুদ্রমূর্তির সামনে তারা হয়ে পড়ে অসহায়। বল করতে পারেনি পরিকল্পনা মতো। তারপরও সুযোগ এসেছিল শেষ দিকে।
স্টোকসের ১১৬ রানের মাথায় থার্ডম্যান থেকে অনেকটা দৌড়ে এসে কঠিন ক্যাচটি হাত ছুঁইয়েও নিতে পারেননি মার্কাস হ্যারিস।
পরের বলেই লায়নকে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারলেন না স্টোকস। বল লাগল পায়ে। অস্ট্রেলিয়ার জোরালো আবেদনে সাড়া দিলেন না আম্পায়ার জোয়েল উইলসন। আগের ওভারেই বাজে একটি রিভিউ নিয়ে সফরকারীরা হারায় শেষ রিভিউটি। রিপ্লেতে দেখা গেল, আউট ছিলেন স্টোকস!
১ রানে জয়ের দুটি সুযোগ হাতছাড়া অস্ট্রেলিয়ার। এরপর আর সুযোগ দেননি স্টোকস।
৩ উইকেটে ১৫৬ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। শুরুটা তাদের জন্য ছিল হতাশার। ৭৫ রানে অপরাজিত জো রুটকে ৭৭ রানেই ফিরিয়ে দেন লায়ন।
তবে সেই ধাক্কার পরই আসে বড় স্বপ্ন দেখানো জুটি। স্টোকস ও জনি বেয়ারস্টোর জুটিতে আসে ৮৬ রান। ৪ উইকেটে ২৩৮ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় ইংল্যান্ড।
বিরুদ্ধ স্রোতে স্টোকস চালিয়ে যান লড়াই। কিছুটা সঙ্গ দেওয়ার পর বিদায় নেন জফরা আর্চার। স্টুয়ার্ট ব্রডও আউট হয়ে যান দ্বিতীয় বলে। অস্ট্রেলিয়ার জয় তখন মনে হচ্ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার। সেই ধ্বংসস্তুপ থেকেই ইংলিশদের পুনরুত্থান।
অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের গুঁড়িয়ে এগোতে থাকেন স্টোকস। খেলতে থাকেন নিজে স্ট্রাইক নিয়ে। মাঝে-মধ্যে একটি-দুটি বল খেলে পার করে দেন লিচ। বাড়তে থাকে রান। তার চেয়েও বাড়তে থাকে উত্তেজনা।
রান আউট থেকে যখন বাঁচলেন লিচ, আম্পায়ারের সৌজন্যে বেঁচে গেলেন স্টোকস, পরের ওভারের শুরু থেকেই লিচকে স্ট্রাইকে পেলেন কামিন্স। জিততে তখন ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ২ রান।
প্রথম দুই বলে টিকে গেলেন লিচ, তৃতীয় বলে নিলেন সিঙ্গেল। দুই দলের স্কোর সমতায়। ধারাভাষ্যকক্ষে নাসের হুসেইন বললেন, “লিচের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১ রান।” পরের বলেই স্টোকসের শটে জয়। অনেক নাটকীয়তা, রোমাঞ্চের চূড়ান্ত দুলুনি শেষে নতুন ইতিহাস লিখে ম্যাচের সমাপ্তি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ১৭৯
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৬৭
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ২৪৬
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস:(লক্ষ্য ৩৫৯, আগের দিন ১৫৬/৩) ১২৫.৪ ওভারে ৩৬২/৯ (রুট ৭৭, স্টোকস ১৩৫*, বেয়ারস্টো ৩৬, বাটলার ১, ওকস ১, আর্চার ১৫, ব্রড ০, লিচ ১*; কামিন্স ২৪.৪-৫-৮০-১, হেইজেলউড ৩১-১-৮৫-৪, লায়ন ৩৯-৫-১১৪-২, প্যাটিনসন ২৫-৯-৪৭-১, লাবুশেন ৬-০-১৬-০)।
ফল: ইংল্যান্ড ১ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজের তিনটি শেষে ১-১ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: বেন স্টোকস