ক্রিকেটার হিসেবে ভাস কিংবদন্তি। এখন চেষ্টা করছেন কোচ হিসেবে আপন পরিচয় গড়ে তোলার। খেলোয়াড়ি জীবনে বহুবার এসেছেন বাংলাদেশে। এবার এসেছেন শ্রীলঙ্কা ইমার্জিং দলের কোচ হিসেবে।
ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় সফলতম বাঁহাতি বোলার ভাস। তার ৭৬১ আন্তর্জাতিক উইকেটের চেয়ে বেশি আছে কেবল ওয়াসিম আকরামের (৯১৬)। ভাসের ১৯ রানে ৮ উইকেট, এখনও ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেটের অবিশ্বাস্য কীর্তি তার আছে। চোখধাঁধানো ক্যারিয়ার আরও অনেক অর্জনের মণি-মাণিক্যে ঠাসা। কিন্তু এসব পরিসংখ্যান-অর্জনের বাইরেও ক্রিকেট রোমান্টিকদের মনে ভাস চিরস্থায়ী জায়গা পেয়ে গেছেন তার সুইং বোলিং দিয়ে। স্কিলের ভাণ্ডার ছিল সমৃদ্ধ। সুইং করাতে পারতেন দুই দিকেই। ওয়াসিম আকরামের মতো অতটা না হলেও, সুইং নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ছিল তারও।
সবচেয়ে বিপজ্জনক ছিল ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য সুইং করে ভেতরে ঢোকানো ডেলিভারি। ক্যারিয়ার জুড়ে ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়ে গেছেন এই বলে। নিয়েছেন অনেক উইকেট। অনেক সময় ভেতরে ঢোকা ডেলিভারির দুর্ভাবনায় থেকে ব্যাটসম্যানরা উইকেট দিয়ে বসেছেন অন্য কোনো ডেলিভারিতে।
সোমবার মিরপুর একাডেমি মাঠে শ্রীলঙ্কা ইমার্জিং দলের অনুশীলন শেষে হোটেলে ফেরার বাসে ওঠার আগে খানিকটা সময় দিলেন ভাস। আলাপচারিতা জুড়ে থাকল কেবল ভেতরে আনা ডেলিভারি ও মুস্তাফিজ। ভেতরে আনা বলের মাস্টার ছিলেন তিনি। শোনালেন এই ডেলিভারির রসায়ন।
“অনেকের ক্ষেত্রে প্রকৃতিগতভাবেই ক্ষমতা কিছুটা থাকে। তার পর টেকনিক্যাল ব্যাপার তো আছেই। সিম পজিশন নিখুঁত হতে হয়। ফাইন লেগের দিকে নির্দেশ করা থাকবে। সিমের ওপর আঙুল ঠিকভাবে রাখতে হবে। একদম সোজাসুজি। গ্রিপ থেকে শুরু করে অ্যাকশন, রিলিজ পয়েন্টে শরীর, হাত ও মাথার অবস্থান, সব নিখুঁত হতে হবে। এরপর ঠিক লেংথে বল রাখতে হবে।”
তার নিজের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া ছিল এমনই। এই ডেলিভারি শেখার তাগিদ অনুভব করেছেন। সম্ভাব্য যাদের কাছ থেকে শেখা যায়, নিয়েছেন টোটকা। সেসবকে মাথায় রেখে পরিশ্রম করে গেছেন অক্লান্ত। পেয়েছেন ফল। তার ভাণ্ডারে যোগ হয়েছে এই মারণাস্ত্র।
“আমার কিছুটা সহজাত ব্যাপার ছিল। এছাড়াও সেই সময়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি আমি। ওয়াসিম আকরাম থেকে শুরু করে আরও অনেক সিনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে আইডিয়া নিয়েছে। ভিডিও দেখেছি। তাদের পরামর্শ মতো অনুশীলন করেছি অনেক। আস্তে আস্তে আমার নিয়ন্ত্রণে এসেছে এটি।”
বাঁহাতি পেসারদের বড় অস্ত্র এই ডেলিভারিই এখনও সেভাবে রপ্ত করতে পারেননি মুস্তাফিজ। হুটহাট দু-একটি বল তার ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য ভেতরে আসে বটে। তবে সেটা যতটা না তিনি করেন, তার চেয়ে বেশি হয়ে যায়।
একটা সময় এই ডেলিভারি অনুশীলন করতে পারেননি চোটের কারণে, কাঁধের বড় অস্ত্রোপচারের ধকল পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতেই লেগেছে অনেক সময়। সেই সময়টা পেরিয়ে যাওয়ার পর এখনও ভেতরে আনা ডেলিভারিতে দেখা যাচ্ছে না অগ্রগতির ছাপ। কেন পারছেন না মুস্তাফিজ? প্রশ্ন শুনে ভাস একটু ভাবলেন। খুব কাছ থেকে মুস্তাফিজকে সেভাবে দেখা হয়নি তার। টিভিতে যতটুকু দেখেছেন, তা থেকেই জানালেন নিজের ভাবনা।
“মুস্তাফিজ বেশিরভাগ সময় বল বাইরে নেওয়ার চেষ্টাই করে (ডানহাতির জন্য)। যেটা তার সহজাত অ্যাঙ্গেলে বেরিয়ে যায়। কাটার করে প্রচুর। টি-টোয়েন্টির যুগে টিকে থাকা সহজ নয়। সে হয়তো রান বাঁচানোর বোলিং করছে। ভেতরে আনতে গেলে লাইন-লেংথ একটু এদিক-সেদিক হলে মার খাওয়ার সুযোগ থাকে। সে হয়তো তাই নিরাপদ পথে বেশি হাঁটছে।”
“ক্যারিয়ারের শুরুতেই সে প্রচুর টি-টোয়েন্টি খেলেছে বলে এটা হতে পারে। রক্ষণাত্মক বোলিংয়ের ভাবনা বেশি থাকে। আমাদের যুগে টিকে থাকার উপায় একটিই ছিল, উইকেট নেওয়া। এখন তো টি-টোয়েন্টিতে অনেক সময় রান বাঁচানোই থাকে মুখ্য। অনেক বোলারও নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করে তোলে।”
তবে এই ডেলিভারি রপ্ত করার বিকল্প দেখছেন না ভাস। মুস্তাফিজের জন্য যেমন, যে কোনো বাঁহাতি পেসারের জন্যই। নিজের ক্যারিয়ার থেকে উদাহরণ তো দিলেনই, এই সময়ের বাস্তবতা থেকেও বাতলে দিলেন পথ।
“এখন তো প্রযুক্তির যুগ। বল ভেতরে আনার পদ্ধতিটা দেখা তো কোনো ব্যাপারই না। অসংখ্য ভিডিও ওরা দেখতে পারে। কিন্তু এরপর নিয়ম অনুযায়ী অনুশীলন করতে হবে। অনেক ঘাম ঝরাতে হবে।”
“যদি মুস্তাফিজ ভালো ফাস্ট বোলিং কোচের হাতে পড়ে ও পরিশ্রম করে, তাহলে আমি নিশ্চিত সেও বল ভেতরে আনতে পারবে। কারণ এটা তার লাগবেই। বাঁহাতি পেসারদের জন্য বল ভেতরে আনা আবশ্যিক একটা ব্যাপার। এটি না পারলে পূর্ণাঙ্গ বাঁহাতি পেসার হওয়া যাবে না।”