স্টোকসের সেঞ্চুরি ও লাবুশেন চমকের পর ম্যাচ ড্র

প্রায় দুটি দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর ড্র ছিল ম্যাচের সবচেয়ে অনুমিত ফল। হয়েছে সেটিই। তবে তার আগে লড়াই হলো জমজমাট। দেখা গেল পারফরম্যান্সের দ্যুতি। বেন স্টোকসের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ড পেল ইনিংস ঘোষণার সুযোগ। অস্ট্রেলিয়ার সামনে তখন ম্যাচ বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ। শুরুতে হোঁচট খেলেও অস্ট্রেলিয়াকে উদ্ধার করলেন ‘কনকাশন’ বদলি হিসেবে খেলতে নামার ইতিহাস গড়া মার্নাস লাবুশেন।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2019, 06:57 PM
Updated : 19 August 2019, 12:09 PM

শেষ বেলায় লাবুশেনকে ফিরিয়ে আবার জেগে উঠে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিল ইংলিশরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি। ম্যাচ ড্র-ই হয়েছে। প্রথম টেস্টে জয়ী অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে আছে সিরিজে।

রোববার ম্যাচের শেষ দিনে ৫ উইকেটে ২৫৮ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড। আগের দিন দলের বিপর্যয়ে ব্যাট করতে নেমে স্টোকস শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১১৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে।

প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ৮ রানের লিড মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৬৭। তবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমীকরণ ছিল ওভারের। ম্যাচের তখন বাকি সম্ভাব্য ৪৮ ওভার। রান তাড়ার চেয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের মূল ভাবনা ছিল টিকে থাকা। ইংল্যান্ডের সামনে ছিল খানিকটা হলেও জয়ের আশা।

জফরা আর্চারের আগুনে প্রথম স্পেলে সেই আশা আরও জোরালো হয়েছিল ইংলিশদের। কিন্তু ট্রাভিস হেডকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন লাবুশেন। পরে জ্যাক লিচ ও আর্চারের সৌজন্যে ম্যাচে রোমাঞ্চ ফিরলেও হয়নি অভাবনীয় কিছু।

ম্যাচ শুরুর একাদশে না থাকলেও লাবুশেন খেলার সুযোগ পান আইসিসির নতুন নিয়মের সৌজন্যে। ম্যাচে কোনো ক্রিকেটার গুরুতর আঘাত পেলে সেটির গুরুত্ব বুঝে তাকে ম্যাচ থেকে তুলে নিয়ে বদলি নামানোর নিয়ম করা হয়েছে সম্প্রতি। তবে সেই বদলি ক্রিকেটারকে হতে হবে যতটা সম্ভব একই ধরনের ক্রিকেটার। যেটির কেতাবি নাম ‘কনকাশন সাব।’ চোটের পরিস্থিতি বুঝে ও একই ধরনের বিকল্প ক্রিকেটার আছে কিনা, সব বিবেচনা করে বদলির অনুমতি দেওয়া বা না দেওয়া ম্যাচ রেফারির এখতিয়ার।

এই ম্যাচে চতুর্থ দিনে ব্যাটিংয়ের সময় আর্চারের বলে ঘাড়ে আঘাত পেয়েছিলেন স্টিভেন স্মিথ। উইকেটে পড়ে গিয়েছিলেন তখনই। বাধ্য হয়েছিলেন মাঠ ছাড়তে। পরে অবশ্য ব্যাটিংয়ে ফিরে আউট হন ৯২ রানে। কিন্তু দিনের খেলা শেষে আবার অবনতি হয় তার অবস্থার। শেষ দিন শুরুর আগে তার অবস্থা বুঝে অস্ট্রেলিয়াকে বদলি নামানোর সুযোগ দেন ম্যাচ রেফারি।

প্রখম ‘কনকাশন’ সাব হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখা হয়ে যায় লাবুশেনের। স্মিথের মতোই তিনি ব্যাটসম্যান ও লেগ স্পিনার। ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখেন তিনি দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা ইনিংস খেলে।

ইংল্যান্ড দিন শুরু করে ৪ উইকেটে ৯৬ রান নিয়ে। জস বাটলারকে নিয়ে ৯০ রানের জুটিতে ইংল্যান্ডের বিপদ অনেকটা কাটিয়ে দেন স্টোকস। স্বভাববিরুদ্ধ খেলে ১০৮ বলে ৩১ রান করেন বাটলার।

ইংল্যান্ড ইনিংস ঘোষণার সাহস পায় পরের জুটিতে। স্টোকস ও বেয়ারস্টো ৯৭ রান তোলেন ৮৪ বল খেলে।

১০৬ বল খেলে ফিফটি ছুঁয়েছিলেন স্টোকস। পরের পঞ্চাশে এগিয়ে যান ওয়ানডের গতিতে। ১৬০ বলে স্পর্শ করেন সপ্তম টেস্ট সেঞ্চুরি। এবারের আগে সবশেষ টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন ৩১ ইনিংস আগে, ২০১৭ সালে।

বেয়ারস্টো অপরাজিত থাকেন ২ ছক্কায় ৩০ রান করে। দ্বিতীয় সেশনের মাঝামাঝি ইংল্যান্ড ঘোষণা করে দেয় ইনিংস।

অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিংয়ে নেমে পড়ে যায় আর্চারের তোপের মুখে। নিজের প্রথম তিন ওভারের মধ্যেই এই ফাস্ট বোলার ফিরিয়ে দেন ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাওয়াজাকে।

স্মিথের চার নম্বর পজিশনেই খেলতে নামেন লাবুশেন। ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে নিয়ে জুটিতে সামাল দেন শুরুর ধাক্কা। ১৬ রান করা ব্যানক্রফটকে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার জ্যাক লিচ। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন শঙ্কায় অস্ট্রেলিয়া। লাবুশেন ও ট্রাভিস হেডের জুটি সেখান থেকে টেনে নেয় দলকে। ৮৫ রানের জুটি গড়েন দুজন, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কাটিয়ে দেন ২২ ওভার।

৫৯ রান করে লাবুশেনের বিদায়ে ভেঙেছে এই জুটি। লিচের বলে জো রুটের ক্যাচটি নিয়ে অবশ্য সংশয় ছিল যে হাতে জমার আগে মাটি ছুঁয়েছিল কিনা। মাঠের আম্পায়ারের সফট সিগন্যাল ছিল ‘আউট’, টিভি আম্পায়ার বারবার দেখেও নিশ্চিত হতে না পেরে অনুসরণ করেছেন সফট সিগন্যালকে। লাবুশেন মাঠ ছেড়েছেন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে গজরাতে গজরাতে।

উজ্জীবিত ইংল্যান্ড এরপর চেপে ধরে অস্ট্রেলিয়াকে। লিচ ফিরিয়ে দেন ম্যাথু ওয়েডকেও। আর্চারের বলে জো ডেনলির অসাধারণ ক্যাচ ফেরায় টিম পেইনকে। কিন্তু ইংলিশদের হাতে ছিল না পর্যাপ্ত সময় আর ওভার। ৪২ রানের অপরাজিত ইনিংসে ড্র নিশ্চিত করে ফেরেন হেড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৫৮

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২৫০

ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৯৬/৪) ৭১ ওভারে ২৫৮/৫ (ডি.)(স্টোকস ১১৫*, বাটলার ৩১, বেয়ারস্টো ৩০*; কামিন্স ১৭-৬-৩৫-৩, হেইজেলউড ১৩-১-৪৩-০, সিডল ১৫-৪-৫৪-২, লায়ন ২৬-৩-১০২-০)।

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৬৭) ৪৭.৩ ওভারে ১৫৪/৬ (ওয়ার্নার ৫, ব্যানক্রফট ১৬, খাওয়াজা ২, লাবুশেন ৫৯, হেড ৪২*, ওয়েড ১, পেইন ৪, কামিন্স ১*; ব্রড ৭-০-২৯-০, আর্চার ১৫-২-৩২-৩, ওকস ৩-০-১১-০, লিচ ১৬.৩-৫-৩৭-৩, স্টোকস ৩-১-১৬-০, রুট ১-০-৭-০, ডেনলি ২-২-০-০)।

ফল: ম্যাচ ড্র

সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজের দুটি শেষে অস্ট্রেলিয়া ১-০তে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: বেন স্টোকস