শারিরীক প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেটে পাঁচ জাতির টুর্নামেন্টের জয়মালা উঠলো ভারতের গলায়।
Published : 14 Aug 2019, 01:31 AM
উস্টারশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট মাঠে মঙ্গলবার স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে ৩৬ রান হারিয়ে জয়মালা ছিনিয়ে নেয় ভারত।
এর আগে সকালে একই মাঠে ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে আফগানিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে। আর গ্রুপ পর্বের চ্যাম্পিয়ন ভারত ফাইনালে আসে সরাসরি।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারত ২০ ওভার খেলে ৭ উইকেটে ১৮০ রান করে। ভারতের পক্ষে রবীন্দ্র সন্তু ৩৪ বলে ৫৩ রান সংগ্রহ করেন। কুনাল ৩৫ বলে ৩৬ রান করেন। বল হাতেও দারুণ পারফরমেন্স দেখিয়ে তিনিই ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে ভারতের পক্ষে ব্যাট হাতে সবচেয়ে মারকুটে খেলেছেন সুগনেশ মাহেন্দ্র। তিনি ১১ বলে ৩৩ রান করেন। এছাড়াও ২৭ বলে ২৯ রান করেন ভিক্রমকেনি।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দারুণভাবে খেলায় দারুণ সূচনা করে ইংল্যান্ড। অ্যাঙ্গাস ব্রাউন ও জেমি গুডউইন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যাটে-বলেএগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। ৩ ওভার ১ বলে গুডউইন আউট হলে গেলেও ক্যালাম ফ্লিন-অ্যাঙ্গাস জুটি সেটা সামলে নেন।
তবে ইংল্যান্ডের বিপর্যয় শুরু হয় সম্ভবত অ্যাঙ্গাসের আউট হওয়ার মধ্য দিয়ে। ১০ ওভার তিন বলে অ্যাঙ্গাস যখন আউট হন, তখন দলের সংগ্রহ ছিল ৯০রান। তখনও মনে হচ্ছিল জিতে যেতে পারে ইংল্যান্ড।
এরপর ৯৭ রানের মাথায় ক্যালাম ফ্লিনও ফিরে যান দর্শক সারিতে। উইল ফ্লিন ছাড়া এরপর আর কেউ কার্যত দাঁড়াতেই পারেননি। এদের মধ্যেফ্লিনই কেবল ২১ করেন। বাকীরা শূন্য, এক, আট, দুই, শূন্য রানে আউট হয়ে ফিরে যান। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার টিকে থাকতে পারলেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ১৪৪রান তুলতে পারে ইংল্যান্ড।
প্রথম পর্বের চার ম্যাচের কোনটিতেই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। পাকিস্তান এক ম্যাচে জয় পেয়েছিল। আর আফগানিস্তান সেমি-ফাইনালে উঠেইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলে বাদ পড়ে। প্রথম পর্বের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ভারত সরসারি ফাইনালে আসে।
শারিরীক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটে এটি পাঁচ জাতির দ্বিতীয় আসর। এর আগে ২০১৫ সালে ঢাকায় বসে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। তাতেওএই পাঁচ দেশই অংশ নেয়।
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে। ওই বছর রেডক্রস পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করা সিআরপিকে (সেন্টার ফর দ্যরিহ্যাবিলেটেশন অফ দ্য প্যারালাইজড) একটি ক্রিকেট দল গড়তে সহায়তা দেয়। একই বছর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজনকরে রেডক্রস।
এছাড়া সিআরপির প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দল ওই বছরের ১৭ থেকে ২০ মার্চ ভারতের ডিজ্যাবলড স্পোর্টিং সোসাইটি (ডিএসএস) দলের বিরুদ্ধে তিন দিনেরএকটি টুর্নামেন্টে অংশ নেয়।
২০১৪ সালে সিআরপির পাশাপাশি বাংলাদেশ ফিজিকালি চ্যালেঞ্জড ডিজ্যাবলড অ্যাসোসিয়েশন ও ফিজিকালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করে।
পরে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় বিকেএসপি, প্যারা অলিম্পিকস, স্পেশাল অলিম্পিকস ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং ব্রিটিশ হাই কমিশন ও ইংল্যান্ড অ্যান্ডওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড।
পরের বছর মার্চে রেডক্রসের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো ‘ট্যালেন্ট হান্ট ক্যাম্প’ হয়।
২০১৬ সালে দুবাইয়ে আরেকটি টুর্নামেন্টের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল। সেখানেও বাংলাদেশ দলকে সহযোগিতা দেয় আইসিআরসি।ওই টুর্নামেন্টের আগে দ্বিতীয় প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি হয়। এরপর ২০১৭ সালে তৃতীয় ‘প্রতিভা অন্বেষণ’ হয়।
২০১৮ সালে ইসিবির আমন্ত্রণে ইংল্যান্ডে আরেকটি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে আসে বাংলাদেশ দল।
বাংলাদেশে শারিরীক প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেটে অনেকে যুক্ত হলেও এই দলটির মূল পৃষ্ঠপোষকতা আসে আইসিআরসি থেকেই। অন্য দেশগুলোতে বোর্ডের আরো নিবিড় তত্ত্বাবধান থাকলেও বাংলাদেশে সেটি নেই।
ফলে এ সব দেশ যে গতিতে সামনে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে তাল মেলাতে পারছে না বাংলাদেশ টিম।
এবারের আসরে ভারত প্রথম থেকে কেবল দৃষ্টিনন্দন ক্রিকেটই খেলেনি। তাদের শারিরীক ভাষাও বদলে গিয়েছিল। এক বছর আগে ভারতের মুখোমুখি হওয়া বাংলাদেশি খেলোয়াড়দেরকেও বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
বছরজুড়ে লীগসহ বিভিন্ন খেলায় ব্যস্ত ছিল বাকিগুলোও। অন্যদিকে বাংলাদেশের এই দলটির সর্বশেষ খেলা ছিল গত বছরের ইংল্যান্ড সফর। এরপরএবারের ক্যাম্প হওয়ার আগের সময়টা তাদের কেটেছে নিরবে-নিভৃতে।