নতুনদের প্রতিভা-সামর্থ্য দেখানোর মঞ্চ পাওয়া গেল: নিগার সুলতানা

ইমার্জিং দলের মোড়কে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করে এসেছে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের ‘এ’ দল। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া কিপার-ব্যাটার নিগার সুলতানা মুখোমুখি হয়েছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের। সফরের প্রাপ্তির কথা জানালেন, শোনালেন নিজের এগিয়ে চলার গল্প।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 August 2019, 05:38 PM
Updated : 8 August 2019, 05:38 PM

দক্ষিণ আফ্রিকা মহিলা ইমার্জিং দলকে ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারায় নিগারের দল। টি-টোয়েন্টি সিরিজে সফরকারীরা হারে ২-০ ব্যবধানে।

জাতীয় দলের মেয়েরা সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সব ম্যাচ হেরে এসেছিল। সেদিক থেকে ইমার্জিং দলের সফরটায় চ্যালেঞ্জ কী আরও বেশি ছিল?

নিগার: উন্নতির গ্রাফটা যদি দেখেন আপনি, সেখান থেকেও বুঝতে পারবেন আমরা আগের চেয়ে ভালো খেলেছি। ওরা প্রায় আমাদের মানেরই একটা নিয়ে খেলেছে। আমাদের দলে যেমন জাতীয় দলের চার-পাঁচ জন ছিল, ওদের দলেও মূল ক্রিকেটারদের চার-পাঁচ জন ছিল।

প্রথম লক্ষ্য ছিল সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আমরা যে কাজগুলো করতে পারিনি, সেটা যেন করতে পারি। সামনে যেহেতু আমাদের বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব আছে, এখানে আরেকটা লক্ষ্যও ছিল। বাছাই পর্ব হবে স্কটল্যান্ডে, সেখানের কন্ডিশন আর দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন অনেকটাই একই রকম। এই ধরনের কন্ডিশনে নিজেদের অভ্যস্ত করে নেওয়ার ব্যাপার ছিল।

সিরিজ নিয়ে লক্ষ্য তো অবশ্যই ছিল। ওয়ানডে আমরা খুব কম খেলি। লক্ষ্য ছিল, লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করার, ম্যাচ গভীরে নিয়ে যাওয়ার। দুইশ-আড়াইশ ছাড়ানো সংগ্রহ যেন গড়তে পারি। আর ওই ধরনের লক্ষ্য তাড়া করতে হলে যেন কষ্ট না হয়। টপ অর্ডার যেন রান করে, এটা ছিল আরেকটা চাওয়া।

জাতীয় দলের বাইরের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার নজর কেড়েছেন এই সফরে। কাছ থেকে কেমন দেখলেন তাদের খেলা?

নিগার: এবার প্রথমবারের মতো ‘এ’ দল হওয়ায় যারা নতুন প্রতিভা আছে, তারা অন্তত নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর একটা জায়গা পেয়েছে। আমি মনে করি, নতুনদের কেউ কেউ জাতীয় দলের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। ওদের সেই যোগ্যতা আছে।

বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট প্রথমবারের মতো কোনো সুপার ওভার দেখল। কেমন ছিল অভিজ্ঞতাটা?

নিগার: সে দিনের ম্যাচটা আসলে পুরোপুরি অন্যরকম। আমি কখনও কোনো পর্যায়ে সুপার ওভারে খেলিনি, তো আমি বুঝতে পারবো না কি করতে হয়। বা আমার বোলারও বুঝতে পারবে না ও কোন অ্যাঙ্গেলে, কোথায় বল করবে। এই ধরনের পরিস্থিতির যত মুখোমুখি হবো তত শিখতে পারব।

জাতীয় দলের অপরিহার্য সদস্য হয়ে উঠেছেন আগেই। এবার প্রথমবারের মতো কোনো পর্যায়ে দেশের হয়ে অধিনায়কত্ব করলেন। কেমন ছিল অভিজ্ঞতা?

নিগার: এর আগে প্রিমিয়ার লিগে অধিনায়কত্ব করেছি, জাতীয় লিগে অধিনায়কত্ব করেছি। তবে এবারের অনুভূতি একেবারেই ভিন্ন। ক্লাব ক্রিকেটে সেভাবে চাপ থাকে না। যখন আপনি জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামবেন সেটার একেবারে আলাদা একটা ব্যাপার। দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, আবার পুরো দলের কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে। অধিনায়কত্ব আমি উপভোগ করেছি। কারণ, ওদের সঙ্গে অনেক দিন ধরে খেলছি। তাই আমার কোনো সমস্যা হয়নি।

নেতৃত্ব পাওয়ায় আরও ভালো খেলার কোনো চ্যালেঞ্জ অনুভব করেছিলেন কী?

নিগার: অধিনায়ক যদি সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেয় সেখান থেকে দল একটা অনুপ্রেরণা পায়। প্রথম ওয়ানডেতে হয়তো ভালো করতে পারিনি। আপনারা জানেন না বোধহয়, দ্বিতীয় ম্যাচে খেলার সময় চোট পেয়েছিলাম। কিছুটা সময় আমাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। দলের দুটো উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আমি মাঠে ফিরি। তখনো আমি পা ফেলতে পারছিলাম না। পরিস্থিতি এমন হয়ে গিয়েছিল যে, আমাকে নামতেই হল। তো নামলাম.. খেলে ফেললাম। সমীকরণ বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল, আমি আর শোভানা (মুশতারী) সেটা মিলিয়ে নিয়েছি।

পেশা হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নেওয়ার ভাবনা কিভাবে এলো? ক্যারিয়ারের শুরুর পথ চলাটা কেমন ছিল?

নিগার সুলতানা: ক্রিকেট আমি পরিবার থেকে পেয়েছি। যখন আমি খুব ছোট তখন আমার ভাইয়াদের ক্রিকেট খেলতে দেখতাম, তখন থেকেই মনে হয় ক্রিকেট আমার রক্তে চলে এসেছে। আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার ভাইয়া। যেখানে টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলতে যেত, আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেত। এভাবেই ক্রিকেট খেলার শুরু।

পেশাদার হয়ে খেলা শুরু করি ২০১১ সালে। সেই বছর বাংলাদেশে বসেছিল মহিলা বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব। সেটা দেখার পর মনে হয়েছে, খেলাটা চালিয়ে যাওয়া যায়। আমার কোচ মোখলেসুর রহমান স্বপন স্যার আমাকে অনুপ্রাণিত করলেন, ‘তুমি তো ভালোই খেল। তুমি শুরু কর, দেখো কি হয়।’ আর আমার ভাইয়া আমাকে বলতো, ‘তোমার যদি কিছু হওয়ার ইচ্ছা হয়, তুমি সালমা খাতুন হবা।’ আমার আইডল বলতেই ছিল সালমা আপু। বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটে সালমা আপুর নামটা খুব গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। সালমা আপুকে দেখে সব সময়ই বলতাম, আমি সালমা হবো। ওইভাবেই পেশাদার ক্রিকেট শুরু। 

২০১১ সালে আমি প্রথম প্রিমিয়ার লিগ খেলি শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের হয়ে। শুরু থেকেই আমি ব্যাটিং করতে পছন্দ করতাম। কিপিং অতোটা পছন্দ করতাম না। তখন শুধু কিপিংই করতে হতো। ১৩-১৪ বছর বয়সে খেলা শুরু করেছিলাম। তখন আমাকে শেষের দিকে ব্যাটিং দিতো। ৬/৭ নম্বরে ব্যাটিং করার সুযোগ পেতাম। প্রায়ই ব্যাটিংয়ে গিয়ে ২/১ ওভার পেতাম। এই ব্যাপারটা আমার কখনও ভালো লাগতো না। তখন আমি চিন্তা করলাম, এভাবে ক্রিকেট খেললে আমার হবে না। আমাকে ওপরে ব্যাটিং করতে হবে, ভালো খেলতে হবে। ২০১৩ ও ১০১৪ সালে দুইটা ছোট দলে খেলি। সেখানে ওপেনিং, ওয়ান ডাউনে খেলে রান করে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পাই। তখন দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলছিল। আমি মূল দল সুযোগ পাইনি। ২০১৫ সালে পাকিস্তান সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। তারপর থেকে চলছে।