নতুন চক্রে নতুন করে বিপিএল

কয়েক দিন আগে ঘটা করে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে রংপুর রাইডার্স। অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোও দেশি-বিদেশি অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গে চুক্তি করেছে বা পাকা কথা হয়ে গেছে। কিন্তু সেসবের আসলে আইনগত ভিত্তিই নেই। কারণ, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর চুক্তিই তো নবায়ন করা হয়নি! বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল জানিয়েছে, নতুন করে চুক্তি করতে হবে সব ফ্র্যাঞ্চাইজিকে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2019, 01:30 PM
Updated : 4 August 2019, 01:51 PM

রোববার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল জানিয়েছে, ২০১২ সালে বিপিএল শুরুর সময়ই নির্ধারিত ছিল, প্রথম চক্রে ছয়টি আসরের জন্য চুক্তি হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে। গত আসর দিয়েই তাই শেষ হয়েছে সেই চুক্তি। এবার সপ্তম আসর থেকে শুরু হবে নতুন চক্র। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নতুন চুক্তি থেকে শুরু করে ক্রিকেটারদের দলে নেওয়ার পদ্ধতি, ক্যাটেগরি এবং অন্য সবকিছুই হবে নতুন করে।

নতুন চক্রে এই আসর থেকে চারটি আসরের জন্য চুক্তি হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে। পুরানো ফ্র্যাঞ্চাইজি যারা থাকতে চায়, গভর্নিং কাউন্সিলের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতা হলে তারা থাকতে পারবে। কেউ থাকতে না চাইলে বা সমঝোতা না হলে, নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি চেয়ে ‘এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট’ আহবান করা হবে।

চিটাগং ভাইকিংস কর্তৃপক্ষ এর মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর ফ্র্যাঞ্চাইজি ধরে রাখতে ইচ্ছুক নয়। চিটাগংসহ নতুন আরও একটি দলের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি চেয়ে এর মধ্যে ‘এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট’ আহবান করেছে গভর্নিং কাউন্সিল। নতুন চক্রে সর্বোচ্চ ৮ দল নিয়ে বিপিএল আয়োজন করতে চায় আয়োজকরা। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি না পাওয়া গেলে দল কম হতে পারে।

সাকিবের সঙ্গে রংপুরের চুক্তি ও দেশি-বিদেশি আরও অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর চুক্তি বা আলোচনা নিয়ে গত কিছুদিনের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই এই সংবাদ সম্মেলনে ডেকেছিল গভর্নিং কাউন্সিল। বিপিএল নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটির চেয়ারম্যান, সদস্য সচিব, অন্যান্য সদস্যসহ ছিলেন বিসিবি পরিচালক মাহবুব আনাম। গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য না হলেও প্রতিবার বিপিএলের নিলাম পরিচালনা করেন প্রভাবশালী এই বিসিবি পরিচালক। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ার পাশাপাশি প্রশ্নোত্তর পর্বে জবাব দিয়েছেন তিনিই।

গভর্নিং কাউন্সিলের হয়ে মাহবুব আনাম জানালেন, সাকিবসহ অন্যান্য ক্রিকেটারদের সঙ্গে দলগুলির চুক্তির কোনো ভিত্তি বা স্বীকৃতিই নেই তাদের কাছে।

“দেখুন, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সঙ্গে এখনও কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির চুক্তি হয়নি, তারা (দলগুলি) যা করেছে, সেটির সঙ্গে বিসিবি বা বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের কোনো সম্পর্ক নেই। এটির স্বীকৃতিরও দরকার নেই, আলোচনারও দরকার নেই।”

“দলগুলির সঙ্গেই যেখানে চুক্তি নেই, নিয়মগুলোর আউটলাইনই যদি না থাকে, যা কিছুই করা হোক, সেটির গ্রহণযোগ্যতায় কোনো অবস্থান নেই।”

যদিও ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তি বা ক্যাটেগরি ঠিক করার আগেই সাকিবের সঙ্গে চুক্তি করেছে রংপুর রাইডার্স, তাকে নিয়ে তবু প্রশ্ন উঠতেই থাকল। মাহবুব আনাম আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন বাস্তবতা।

“এই চুক্তির তো কোনো বৈধতা নেই। যে চুক্তির বৈধতা নেই, সেটিকে নিয়ে আলাপ-আলোচনার যুক্তিই দেখি না। শুধু সাকিব নয়, আরও অনেক নাম এসেছে। আমরা শুনেছি। সবার ক্ষেত্রেই একই বাস্তবতা।”

মাহবুব আনাম জানিয়েছেন, প্রথম চক্রের চুক্তির মেয়াদ যে শেষ, দলগুলি তা ভালোভাবেই জানে। চুক্তিতেই উল্লেখ আছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তি নবায়নের আগেই দলগুলি কিভাবে ক্রিকেটারদের সঙ্গে চুক্তি করছে, সেই প্রশ্ন দলগুলির কোর্টেই ঠেলে দিয়েছে গভর্নিং কাউন্সিল।

চুক্তিতে উল্লেখ থাকলে কেন সংবাদ সম্মেলন করে জানানোর প্রয়োজন পড়ছে, এই প্রশ্নে মাহবুব আনাম বললেন, “আমাদের ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন ছিল না। তবু করতে হচ্ছে, কারণ উনারা (দলগুলি) যেহেতু ব্যাখ্যা দেননি, আমরা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিলাম।” বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য জালাল ইউনুস যোগ করেছেন, সাকিবের সঙ্গে রংপুরের চুক্তিসহ গত কিছুদিনে নানা ঘটনায় ‘ধূম্রজাল’ সৃষ্টি হওয়ায় তারা সবকিছু ব্যাখ্যা করার তাগিদ অনুভব করেছেন।

মাহবুব আনাম জানান, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুরানো ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে আলোচনার জন্য আহবান করবে তারা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অবশ্য সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে গভর্নিং কাউন্সিলের আশা, এই মাসের মধ্যেই সেসবের সুরাহা হয়ে যাবে।

বিপিএল শুরুর অন্তত দুই মাস আগে প্লেয়ার্স ড্রাফট আয়োজনের ইচ্ছে গভর্নিং কাউন্সিলের। এবারের বিপিএল শুরু হওয়ার কথা আগামী ৬ ডিসেম্বর, তার আগে ৩ ডিসেম্বর হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

নতুন চক্রে সবকিছু নতুন করে শুরু হওয়ায় আগের দল থেকে ক্রিকেটার ধরে রাখার কোনো নিয়ম এবার থাকছে না। তবে দলের ধারাবাহিকতার স্বার্থে অষ্টম আসরে খেলোয়াড় ধরে রাখার নিয়ম থাকবে।