এবারের অ্যাশেজ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেট পা রাখছে নতুন যুগে। এই এজবাস্টন টেস্ট দিয়ে শুরু আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। শুরুর দিনটি স্মরণীয় করে রাখল স্মিথের অপ্রতিরোধ্য ব্যাট। তার সৌজন্যেই ব্যাটিং বিপর্যয় কাটিয়ে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া করতে পারল ২৮৪ রান।
দলের অর্ধেকের বেশি রান স্মিথ করেছেন একাই। দল ১৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পর উইকেটে গিয়েছিলেন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হয়ে ফিরছেন, নামের পাশে ঝলমল করছে ১৪৪।
ইনিংসটির মাহাত্ম্য শেষ নয় এখানেই। স্টুয়ার্ট ব্রড ও ক্রিস ওকসের তোপে অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেট হারিয়েছিল ১২২ রানেই। শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে দলকে শুধু উদ্ধারই করেননি স্মিথ, নিয়ে গেছেন লড়াই করার মতো এক স্কোরে।
ইংল্যান্ডকে কিছুটা ভুগিয়েছে জেমস অ্যান্ডারসনের চোট। ফিটনেস টেস্টে উতরে এই টেস্টে খেলতে নামা অভিজ্ঞ পেসার নিজের ৪ ওভারের পর আর বোলিং করতে পারেননি নতুন করে চোট পাওয়ায়। তবে স্মিথের কৃতিত্ব তাতে খুব একটা কমছে না।
শেষ বিকেলে দুই ওভার ব্যাট করে কোনো উইকেট না হারিয়ে ইংল্যান্ড করেছে ১০ রান।
সকালে মেঘলা আকাশের নিচে টস জিতেও ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেইন। একটা সময় মনে হচ্ছিল, এই সিদ্ধান্তের জন্য পস্তাতে হবে দলকে। ব্রড ও ওকসের সুইং-কাটারের জবাবই পাচ্ছিল না অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং লাইন আপ।
স্মিথের মতো ১৬ মাস পর টেস্টে ফিরেছেন বল টেম্পারিং বিতর্কের আর দু্ই খলনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরন ব্যানক্রফটও। দুই ওপেনারকেই দ্রুত ফিরিয়ে দেন ব্রড।
তিনে নামা উসমান খাওয়াজা শিকার ওকসের। স্মিথের প্রথম প্রতিরোধ এরপর। চতুর্থ উইকেটে ট্রাভিস হেডের সঙ্গে গড়েন ৬৩ রানের জুটি।
৩৫ রান করা হেডকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন সেই ওকস। শুরু হয় অস্ট্রেলিয়া ইনিংসে ধস।
চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় স্মিথকে সঙ্গ দিলেন পিটার সিডল। স্মিথ মেলে ধরলেন দুর্দান্ত সব শটের প্রদর্শনী। বিপদ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে থাকল অস্ট্রেলিয়া। নবম উইকেট জুটিতে এল ৮৮ রান!
ইংলিশদের মাথাব্যথা হয়ে ওঠা জুটি ভাঙলেন মইন আলি। ৪৪ রান করে সিডল বিদায় নিলেন শর্ট লেগে জস বাটলারের দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচে।
কিন্তু ইংলিশদের যন্ত্রণার তখনও বাকি। শেষ উইকেটেও ন্যাথান লায়ন জোগালেন নির্ভরতা। উড়তে থাকলেন স্মিথ। চোখধাঁধানো সব শটে পৌঁছে গেলেন সেঞ্চুরিতে। ৬৫ টেস্টে ২৪তম সেঞ্চুরি!
স্মিথকে দিয়ে ব্রড ধরলেন পঞ্চম শিকার। পূর্ণ করলেন অ্যাশেজে একশ উইকেটও। কিন্তু এজবাস্টনের গ্যালারি ভরা দর্শকের করতালি যেন তখন কেবল একজনের জন্যই বরাদ্দ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঠেও দর্শকের দাঁড়িয়ে অভিনন্দনের মাঝে গ্যালারিতে ফিরলেন স্মিথ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৮০.৪ ওভারে ২৮৪ (ব্যানক্রফট ৮, ওয়ার্নার ২, খাওয়াজা ১৩, স্মিথ ১৪৪, হেড ৩৫, ওয়েড ১, পেইন ৫, প্যাটিনসন ০, কামিন্স ৫, সিডল ৪৪, লায়ন ১২*; অ্যান্ডারসন ৪-৩-১-০, ব্রড ২২.৪-৪-৮৬-৫, ওকস ২১-২-৫৮-৩, স্টোকস ১৮-১-৭৭-১, মইন ১৩-২-৪২-১, ডেনলি ২-১-৭-০)।
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২ ওভারে ১০/০ (বার্নস ৪*, রয় ৬*; কামিন্স ১-০-৩-০, প্যাটিনসন ১-০-৭-০)।