শেষ ম্যাচেও বাংলাদেশের দুঃস্বপ্নের হার

বল হাতে ভালো শুরু ম্লান হয়ে গেছে শেষের এলোমেলো বোলিংয়ে। হাত থেকে এদিনও ছুটেছে ক্যাচ। সঙ্গে আবারও দেখা গেল বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী। সব মিলিয়ে বড় হার দিয়ে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের হতাশার সফর। আবারও তিন বিভাগে নিজেদের মেলে ধরে সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করেছে শ্রীলঙ্কা।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2019, 04:38 PM
Updated : 31 July 2019, 05:55 PM

তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে একপেশে ম্যাচে ১২২ রানে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। ২৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৩৬ ওভারে ১৭২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। লঙ্কানদের কাছে এ নিয়ে পাঁচবার হোয়াইটওয়াশড হলো তারা।

দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে ভিত গড়ে দেন দিমুথ করুনারত্নে ও কুসল পেরেরা। কুসল মেন্ডিসের সঙ্গে শতরানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেওয়া অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস দারুণ এক ইনিংসে দলকে নিয়ে যান তিনশ রানের কাছে।

ব্যাটে-বলে সফরকারীদের সেরা পারফরমার সৌম্য সরকার। পঞ্চম বোলারের দায়িত্ব দারুণভাবে পালন করে ৫৬ রানে নেন ৩ উইকেট। পরে বিপর্যয়ের মাঝে খেলেন ৬৯ রানের ইনিংস। শেষের দিকে ঝড় তোলেন তাইজুল ইসলাম। আর কেউ ভালো না করায় দুইশ পর্যন্তও যেতে পারেনি বাংলাদেশ।

আগের দুই ম্যাচে ঠিক মতো লাইন-লেংথ খুঁজে না পাওয়া বাংলাদেশের বোলাররা এদিন শুরুতে ছিল দারুণ সুশৃঙ্খল। টস হেরে ফিল্ডিং করতে নেমে শুরুতেই তুলে নেয় উইকেট। শফিউল ইসলামের চমৎকার এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান আভিশকা ফার্নান্দো।

শুরুতে উইকেট হারানার ধাক্কা সামলে শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে নেন করুনারত্নে ও কুসল পেরেরা। তাড়াহুড়ো না করে, ঠাণ্ডা মাথায় ঝুঁকিবিহীন শট খেলার পথ বেছে নেন দুজন। গড়ে ওঠে জুটি।

ফিফটির আগে অধিনায়ক করুনারত্নেকে থামিয়ে ৮৩ রানের জুটি ভাঙেন তাইজুল। পরের ওভারে কুসল পেরেরাকে কট বিহাইন্ড করেন রুবেল হোসেন।

জোড়া ধাক্কা সামলে নিতে একটু সময় নেয় শ্রীলঙ্কা। মেন্ডিস ও ম্যাথিউস বেছে নেন ধীরে চলার পথ। একটু গুছিয়ে নেওয়ার পর রানের গতি বাড়ান তারা।

মাথা খাটিয়ে বোলিং করা সৌম্য ভাঙেন ১০১ রানের জুটি। ফিরিয়ে দেন ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৫৪ রান করা মেন্ডিসকে। প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশকে ভোগানো দাসুন শানাকা ক্রিজে গিয়েই ঝড় তোলেন। দুটি করে ছক্কা ও চারে ১৪ বলে ৩০ রান করা বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যানকে থামান শফিউল। পরে বিদায় করেন শেহান জয়াসুরিয়াকে।

ইনিংসের শেষ ওভারে পরপর দুই বলে ম্যাথিউস ও আকিলা দনাঞ্জয়াকে ফিরিয়ে দেন অনিয়মিত পেসার সৌম্য। ৩২ ও ৬৩ রানে দুইবার জীবন পাওয়া ম্যাথিউস থামেন ৮৭ রানে। অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের ৯০ বলের ইনিংস গড়া ৮ চার ও এক ছক্কায়। 

বাংলাদেশ ইনিংসে ছিল দৃষ্টিকটু আর আলগা শটের ছড়াছড়ি। রান তাড়ায় সেভাবে কখনও জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। সফরকারীদের উল্টো পথে হাঁটার শুরু দৃষ্টিকটু শটে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তামিম ইকবালের বিদায় দিয়ে। একাদশে ফেরা এনামুল হক আবার ব্যর্থ সুযোগ কাজে লাগাতে।

আগের দুই ম্যাচে দলকে টানা মুশফিকুর রহিম এবার পারেননি। ব্যর্থতার চক্র থেকে বের হতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন ও মাহমুদউল্লাহ। দ্রুত ফিরেন সাব্বির রহমান ও মেহেদি হাসান মিরাজও।

উইকেট পতনের স্রোতে একা বাঁধ দিয়ে দলকে টানেন সৌম্য। দনাঞ্জয়ের লেগ স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৮৬ বলে খেলা তার ৬৯ রানের ইনিংস গড়া ৫ চার ও এক ছক্কায়।

সৌম্য ছাড়া ২০ ছাড়াতে পারেন কেবল তাইজুল। শেষের দিকে চড়াও হয়ে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন বাঁহাতি এই লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান। তার দৃঢ়তায় একটু কমে পরাজয়ের ব্যবধান।

ব্যাট হাতে ঝড় তোলার পর বোলিংয়ে ২৭ রানে ৩ উইকেট নেন অলরাউন্ডার শানাকা। দুটি করে উইকেট নেন দুই পেসার কাসুন রাজিথা ও লাহিরু কুমারা।

৮৭ রানের ইনিংসের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ম্যাথিউস। আগের দুই ম্যাচে ৪৮ ও অপরাজিত ৫২ রানের কার্যকর ইনিংস খেলা এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান জেতেন সিরিজ সেরার পুরস্কারও।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৯৪/৮ (ফার্নান্দো ৬, করুনারত্নে ৪৬, কুসল পেরেরা ৪২, মেন্ডিস ৫৪, ম্যাথিউস ৮৭, শানাকা ৩০, জয়াসুরিয়া ১৩, হাসারাঙ্গা ১২*, দনাঞ্জয়া ০, রাজিথা ০*; শফিউল ১০-২-৬৮-৩, রুবেল ৯-১-৫৫-১, তাইজুল ১০-১-৩৪-১, মিরাজ ৯-০-৫৯-০, সৌম্য ৯-০-৫৬-৩, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-২২-০)

বাংলাদেশ: ৩৬ ওভারে ১৭২ (এনামুল ১৪, তামিম ২, সৌম্য ৬৯, মুশফিক ১০, মিঠুন ৪, মাহমুদউল্লাহ ৯, সাব্বির ৭, মিরাজ ৮, তাইজুল ৩৯*, শফিউল ১, রুবেল ২; জয়াসুরিয়া ৬-০-৪০-০, রাজিথা ৫-০-১৭-২, দনাঞ্জয়া ১০-০-৪৪-১, শানাকা ৬-০-২৭-৩, হাসারাঙ্গা ৪-১-১৬-১, কুমারা ৫-০-২৬-২)

ফল: শ্রীলঙ্কা ১২২ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে শ্রীলঙ্কা ৩-০ ব্যবধানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস

ম্যান অব দা সিরিজ: অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস