সিরিজ হারল বিবর্ণ বাংলাদেশ

মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং বীরত্বে মাঝারি সংগ্রহ গড়েছিল বাংলাদেশ। অনিয়ন্ত্রিত বোলিং ও বাজে ফিল্ডিংয়ে সেই পুঁজি নিয়ে লড়াইও করতে পারেনি সফরকারীরা। এক ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ জিতে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2019, 01:26 PM
Updated : 28 July 2019, 05:28 PM

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রোববার ৭ উইকেটে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে দিমুথ করুনারত্নের দল। ২০১৫ সালের নভেম্বরের পর দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে শ্রীলঙ্কা।

মুশফিকের অপরাজিত ৯৮ রানের ওপর ভর করে ৮ উইকেটে ২৩৮ রান করে বাংলাদেশ। কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে এটাই তাদের সর্বোচ্চ। আভিশকা ফার্নান্দো ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ফিফটিতে ৩২ বল বাকি থাকতে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা।

উইকেট বেশ মন্থর। শুরু থেকে বড় টার্ন পেয়েছেন স্পিনাররা। উইকেটে বল গ্রিপ করেছে। বল সহজে ব্যাটে না আসায় রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। এমন কন্ডিশনে কিভাবে ব্যাটিং করতে হয়, দলকে এগিয়ে নিতে হয় এর উদাহরণ হয়ে থাকল মুশফিকের অসাধারণ ইনিংসটি।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ছিল বাজে। নুয়ান প্রদিপের ফুলটস বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সৌম্য সরকারের বিদায় দিয়ে বাংলাদেশের উইকেট হারানো শুরু। গত বিশ্বকাপ থেকে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো বাইরের বল স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হয়ে যান ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আলগা শটে ফিরেন মোহাম্মদ মিঠুন।

সাবধানী ব্যাটিংয়ের পরও শুরুতে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। দলে ফেরা অফ স্পিনার আকিলা দনাঞ্জয়ার তীক্ষ্ণ বাঁক নেওয়া বলে বোল্ড হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। আগের ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করা সাব্বির রহমান ফিরেন রান আউট হয়ে।

মুশফিককে খুব একটা সঙ্গ দিতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন। ১১৭ রানে ৬ উইকেট হারানো দলকে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে জুটি গড়ে এগিয়ে নেন মুশফিক।

রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় প্রদিপের বলে মিরাজ ক্যাচ দিলে ভাঙে ৮৪ রানের জুটি। ৪৯ বলে ৬ চারে ৪৩ রান করে ফিরেন তরুণ অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।

লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দলকে ২৩৮ পর্যন্ত নিয়ে যান মুশফিক। নবম ওভারে ক্রিজে যাওয়া অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ১১০ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৯৮ রানে। 

রান তাড়ায় ফার্নান্দোর ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় শ্রীলঙ্কা। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকে থামানোর পথ যেন জানা ছিল না বাংলাদেশের বোলারদের।

নিজেকে গুটিয়ে রাখা করুনারত্নেকে বোল্ড করে ৭১ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মিরাজ। ২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো ওয়ানডে খেলতে নেমে দারুণ বোলিংয়ে সুযোগ তৈরি করেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে সীমানায় একটু এগিয়ে থাকা মোসাদ্দেক কুসল পেরেরার ক্যাচের নাগাল পাননি। পরে তাইজুলের বলেই ফার্নান্দোর ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি তিনি।  

মন্থর উইকেটে বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালানো ফার্নান্দোকে দারুণ এক কাটারে থামান মুস্তাফিজুর রহমান। ৭৫ বলে দুই ছক্কা ও নয় চারে ৮২ রান করেন ছন্দে থাকা ফার্নান্দো। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কুসল পেরেরাকেও বিদায় করেন মুস্তাফিজ।

কঠিন সময়টা মাটি কামড়ে পার করে দেন কুসল মেন্ডিস ও ম্যাথিউস। তাইজুল ও মুস্তাফিজকে খেলেন দেখেশুনে। তারা আক্রমণ থেকে সরে যাওয়ার পর দুই ব্যাটসম্যান বাড়ান রানের গতি। অনিয়মিত বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে দলকে এনে দেন সহজ জয়।

চার বাউন্ডারিতে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন মেন্ডিস। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেওয়া ম্যাথিউস ৭ চারে করেন ৫২ রান।

বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে রান তাড়ায় সুর বেঁধে দেওয়া ফার্নান্দো জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

আগামী বুধবার হোয়াইটওয়াশ হওয়া এড়ানোর লক্ষ্যে একই মাঠে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৩৮/৮ (তামিম ১৯, সৌম্য ১১, মিঠুন ১২, মুশফিক ৯৮*, মাহমুদউল্লাহ ৬, সাব্বির ১১, মোসাদ্দেক ১৩, মিরাজ ৪৩, তাইজুল ৩, মুস্তাফিজ ২*; ধনাঞ্জয়া ১০-০-০৩৯-০, প্রদিপ ১০-০-৫৩-২, উদানা ১০-০-৫৮-২, কুমারা ১০-০-৪২-০, দনাঞ্জয়া ১০-০-৩৯-০২)

শ্রীলঙ্কা: ৪৪.৪ ওভারে ২৪২/৩ (ফার্নান্দো ৮২, করুনারত্নে ১৫, কুসল পেরেরা ৩০, মেন্ডিস ৪১*, ম্যাথিউস ৫২*; মিরাজ ১০-০-৫১-১, শফিউল ৫-০-২৯-০, তাইজুল ১০-২-৩৫-০, মুস্তাফিজ ৮-০-৫০-২, মোসাদ্দেক ৭-০-৩২-০, সাব্বির ২.৪-০-২০-০, সৌম্য ২-০-১৬-০)

ফল: শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: আভিশকা ফার্নান্দো