দুই ম্যাচেই সিরিজ হারল বাংলাদেশ

প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয়টিতেও সেভাবে লড়াই করতে পারল না বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচই জিতে শ্রীলঙ্কা জিতে নিল সিরিজ। ৪৪ মাস পর দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল লঙ্কানরা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2019, 08:25 AM
Updated : 28 July 2019, 04:40 PM

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ এক পর্যায়ে ৬ উইকেট হারিয়েছিল ১১৭ রানের মধ্যে। মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ৯৮ রান দলকে এনে দেয় মাঝারি পুঁজি। তবে সেই রান নিয়ে শেষ পর্যন্ত সেভাবে লড়াই জমিয়ে তুলতে পারল না বাংলাদেশ। আভিশকা ফার্নান্দোর দুর্দান্ত ইনিংস লঙ্কানদের এগিয়ে নেয় জয়ের পথে। বাকি কাজ সেরেছেন মেন্ডিস-ম্যাথিউস।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৩৮/৮ (তামিম ১৯, সৌম্য ১১, মিঠুন ১২, মুশফিক ৯৮*, মাহমুদউল্লাহ ৬, সাব্বির ১১, মোসাদ্দেক ১৩, মিরাজ ৪৩, তাইজুল ৩, মুস্তাফিজ ২*; ধনাঞ্জয়া ১০-০-৩৯-০, প্রদিপ ১০-০-৫৩-২, উদানা ১০-০-৫৮-২, কুমারা ১০-০-৪২-০, দনাঞ্জয়া ১০-০-৩৯-২)।

শ্রীলঙ্কা: ৪৪.৪ ওভারে ২৪২/৩ (ফার্নান্দো ৮২, করুনারত্নে ১৫, কুসল পেরেরা ৩০, কুসল মেন্ডিস ৪১*, ম্যাথিউস ৫২*; মিরাজ ১০-০-৫১-১, শফিউল ৫-০-২৯-০, তাইজুল ১০-২-৩৫-০, মুস্তাফিজ ৮-০-৫০-২, মোসাদ্দেক ৭-০-৩২-০, সাব্বির ২.৪-০-২০-০ , সৌম্য ২-০-১৬-০)।

ম্যাচ ও সিরিজ জয় শ্রীলঙ্কার

কুসল পেরেরা আউট হওয়ার পর খানিকটা যা সম্ভাবনা জাগাতে পেরেছিল বাংলাদেশ, তা একটু একটু করে হারিয়ে গেছে কুসল মেন্ডিস ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ব্যাটে। দুজনের জুটিতেই জিতে গেছে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটের জয়ে লঙ্কানরা নিশ্চিত করেছে সিরিজ জয়ও।

অবিচ্ছন্ন চতুর্থ উইকেট জুটিতে মেন্ডিস ও ম্যাথিউস তুলেছেন ৯৬ রান। দলকে জয় এনে দেওয়া বাউন্ডারিতে ফিফটিও করেছেন অভিজ্ঞ ম্যাথিউস। অপরাজিত ছিলেন ৫৭ বলে ৫২ রানে। ৭৪ বলে অপরাজিত ৪১ মেন্ডিস।

মেন্ডিস-ম্যাথিউস জুটির ফিফটি

একটু একটু করে শ্রীলঙ্কাকে জয়ের পথে এগিয়ে নিচ্ছেন কুসল মেন্ডিস ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। বাংলাদেশ কিছু সময়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছিল বটে। তবে লম্বা সময় তা ধরে রাখতে পারেনি। চতুর্থ উইকেটে দুজনের জুটিতে এসেছে পঞ্চাশ। ম্যাচ ও সিরিজ জয় এখন শ্রীলঙ্কার নাগালেই।

পেরেরাকে ফেরালেন মুস্তাফিজ

আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কুসল পেরেরাকে এবার খুব বেশি দূর এগোতে দিল না বাংলাদেশ। আগ্রাসী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বিদায় নিলেন ৩০ রানে।

অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথ বলটি জায়গা বানিয়ে সজোরে মেরেছিলেন পেরেরা। বল তীব্র গতিতে ছুটছিল হাওয়ায় ভেসে। সোজাসুজি যায় শর্ট কাভারে ফিল্ডার সৌম্য সরকারের হাতে।

মুস্তাফিজের দ্বিতীয় উইকেটে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আরেকটি সুযোগ পেল বাংলাদেশ। ২৩৯ রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কার রান ২৪.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ১৪৬।

অবশেষে ফার্নান্দোর বিদায়

জীবন পাওয়ার পর খুব বেশিক্ষণ টিকলেন না আভিশকা ফার্নান্দো। তাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে কিছুটা স্বস্তি এনে দিলেন মুস্তাফিজুর রহমান।

মুস্তাফিজের স্লোয়ার শর্ট লেংথ বলটিতে পুল করতে চেয়েছিলেন ফার্নান্দো। বল তার প্রত্যাশার চেয়ে একটু বেশি লাফায়। গড়বড় হয় তাতেই। মিড অন থেকে একটু ডানে দৌড়ে সহজ ক্যাচ নেন তামিম ইকবাল।

শ্রীলঙ্কাকে দারুণ শুরু এনে দিয়ে ফার্নান্দো ফিরলেন ৭৫ বলে ৮২ রান করে। ২০.৪ ওভারে শ্রীলঙ্কার রান ২ উইকেটে ১২৯।

টিকে গেলেন ফার্নান্দো

আভিশকা ফার্নান্দোকে ফেরানোর দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তাইজুল ইসলামকে উড়িয়ে মেরেছিলেন ফার্নান্দো। টাইমিং হয়নি ঠিকমতো। কাভার সীমানা থেকে ছুটে বলের নিচে এসেছিলেন মোসাদ্দেক। কিন্তু বল তার আঙুল গলে পড়ে যায় মাঠে।

৭৭ রানে জীবন পেলেন ফার্নান্দো।

দ্বিতীয় জুটির পঞ্চাশ

করুনারত্নে ফিরে গেলেও শ্রীলঙ্কার রান তাড়া খুব বাধাগ্রস্ত হয়নি। আভিশকা ফার্নান্দো ও কুসল পেরেরা দারুণ খেলে এগিয়ে নিচ্ছেন দলকে। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনের জুটির ফিফটি হয়ে গেছে ৪৬ বলেই।

যথারীতি ফার্নান্দো ছিলেন জুটিতে বেশি সক্রিয়, রান করেছেন ২৮। কুসল পেরেরার ব্যাট থেকে জুটিতে এসেছে ১৮ রান।

ফার্নান্দোর পঞ্চাশ

চোখধাঁধানো সব শটে দারুণ গতিতে পঞ্চাশে পৌঁছে গেলেন আভিশকা ফার্নান্দো। পেস-স্পিন, দুটিই খেলেছেন দারুণ দক্ষতায়। তাইজুল ইসলামের বলে জোরালো একটি আবেদন ছাড়া সেভাবে তাকে বিপাকে ফেলতে পারেনি কোনো বোলার। টাইমিং ছিল দেখার মতো।

৪৩ বলে ফিফটি করেছেন ফার্নান্দো, ৭ চারের সঙ্গে ইনিংসে ছক্কা ১টি।

প্রথম উইকেট এনে দিলেন মিরাজ

দারুণ শুরু করা শ্রীলঙ্কাকে অবশেষে একটি ধাক্কা দিতে পারলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বোল্ড করে দিলেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নেকে।

প্রথম স্পেলের ৩ ওভারের পর মিরাজকে সরিয়ে নিয়েছিলেন অধিনায়ক তামিম। আবার ফিরিয়ে আনলেন দ্বাদশ ওভারে। নতুন স্পেলের তৃতীয় বলটি করলেন একটু জোরের ওপর। পেছনের পায়ে ডিফেন্স করলেন করুনারত্নে, কিন্তু মিস করলেন লাইন। বল তার পায়ে লেগে ভেঙে দিল স্টাম্পস।

৭১ রানের উদ্বোধনী জুটির পর আউট হলেন করুনারত্নে। তার অবদান ছিল কেবল ২৯ বলে ১৫।

দারুণ গতিতে পঞ্চাশে শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনারের শুরুটা ছিল সাবধানী। এরপর হাত খুললেন আভিশকা ফার্নান্দো। দুর্দান্ত সব শটে দ্রুত বাড়তে থাকল দলের রান। প্রথম ৪ ওভারে রান ছিল ১১। সেখান থেকে দলীয় ফিফটি হয়ে গেল অষ্টম ওভারেই।

সে সময় ২১ বলে ৩৪ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন ফার্নান্দো, ২৫ বলে ১৪ করুনারত্নে।

বদলি কিপার নিয়ে বাংলাদেশ
 
ব্যাটিংয়ে প্রায় ৪১ ওভার উইকেটে কাটিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসের শুরুতে তাকে দেখা গেল না মাঠে। বাংলাদেশের হয়ে কিপিং করছেন বদলি উইকেটকিপার এনামুল হক।

মুশফিকের ব্যাটে লড়ার মতো রান

মুশফিকুর রহিমের অসাধারণ ইনিংসে শেষ পর্যন্ত লড়াই করার মতো রান তুলতে পারল বাংলাদেশ। ২ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি মুশফিক, কিন্তু বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করতে পেরেছেন দলকে। ৫০ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ৮ উইকেটে ২৩৮।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ প্রথম ৫ ওভার কাটিয়ে দিয়েছিল স্বস্তিতেই। ফুল টসে সৌম্যর বিদায়ে বিপদের শুরু। এরপর একের পর এক উইকেট হারিয়ে ক্রমে বিপাকে পড়ে যায় দল। মুশফিক লড়াই করে গেছেন এক প্রান্ত আগলে। নবম ওভারে উইকেটে গিয়ে অপরাজিত থেকেছেন শেষ পর্যন্ত। ১১০ বলে করেছেন ৯৮।

খুব বড় রান করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে মন্থর উইকেটে শ্রীলঙ্কানদের চ্যালেঞ্জ জানানোর রসদ অন্তত মিলেছে। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৩৮/৮ (তামিম ১৯, সৌম্য ১১, মিঠুন ১২, মুশফিক ৯৮*, মাহমুদউল্লাহ ৬, সাব্বির ১১, মোসাদ্দেক ১৩, মিরাজ ৪৩, তাইজুল ৩, মুস্তাফিজ ২*; ধনাঞ্জয়া ১০-০-৩৯-০, প্রদিপ ১০-০-৫৩-২, উদানা ১০-০-৫৮-২, কুমারা ১০-০-৪২-০, দনাঞ্জয়া ১০-০-৩৯-২)।

রান আউট তাইজুল

মুশফিককে স্ট্রাইক দিতে গিয়ে রান আউটে ফিরলেন তাইজুল। শেষ ওভারের প্রথম বলে মুশফিকের সিঙ্গেলে স্ট্রাইকে গিয়েছিলেন তাইজুল। দলের স্বার্থেই আবার স্ট্রাইকে ফেরা প্রয়োজন ছিল মুশফিকের। তাইজুল তাই ব্যাটে-বলে করতে না পেরে কিপারের গ্লাভসে বল রেখেই ছুটলেন রান নিতে। অল্পের জন্য রান আউট হলেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে।

৯ বলে ৩ রান করে ফিরলেন তাইজুল। ৪৯.২ ওভারে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ২৩১।

আবার বেঁচে গেলেন মুশফিক

শেষ ওভারের প্রথম বলটি স্কুপ করেছিলেন মুশফিক। টাইমিং ঠিকমতো হয়নি। তবে উইকেটের পেছনে মাথার ওপরে লাফিয়ে বলে হাত ছোঁয়ালেও গ্লাভসে জমাতে পারেননি লঙ্কান কিপার। ২৪ রানের পর মুশফিক আবার জীবন পেলেন ৯৫ রানে।

ফিফটি হলো না মিরাজের

বাংলাদেশকে বিপদ থেকে কিছুটা উদ্ধার করার জুটি ভাঙল মিরাজের বিদায়ে। ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়ে ফিরলেন ৭ রান দূরে থাকতে।

১১৭ রানে দল ষষ্ঠ উইকেট হারানোর পর মুশফিকের সঙ্গে উইকেটে যোগ দিয়েছিলেন মিরাজ। দুজনে মিলে দলকে পার করান দু্‌ইশ। জুটি থামল রান বাড়ানোর চেষ্টায়। প্রদিপের স্লোয়ারে স্লগ করতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিলেন মিরাজ। আউট হলেন ৪৯ বলে ৪৩ রানের কার্যকর ইনিংস খেলে।

৪৫.৩ ওভারে বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ২০১।

ফিরলেন মোসাদ্দেকও

জুটি গড়ে ওঠার মুখে আবারও উইকেটের পতন। এবার ইসুরু উদানার বাউন্সার ফেরাল মোসাদ্দেক হোসেনকে।

স্লোয়ার বাউন্সার বলটিতে একটু আগেই ব্যাট চালিয়েছিলেন মোসাদ্দেক। বল তার প্রত্যাশার চেয়ে লাফিয়েছে একটু বেশি। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় কিপারের গ্লাভসে। মাথা নিচু করে ফিরলেন আরেক ব্যাটসম্যান।

২৭ বলে ১৩ রান করে আউট হলেন মোসাদ্দেক। ভাঙল ষষ্ঠ উইকেট জুটি। ২৯ রানের এই জুটিই এখনও পর্যন্ত ইনিংসের সর্বোচ্চ।  ৩১.৫ ওভারে বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ১১৭।

অবশেষে একশ

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা দল ধুঁকে ধুঁকে অবশেষে স্পর্শ করল তিন অঙ্ক। ওভারপ্রতি সাড়ে তিন রান তুলে একশ করতে ২৮ ওভার লেগেছে বাংলাদেশের। এক প্রান্ত আগলে রেখে ৩২ রানে অপরাজিত মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি গড়ার লড়াইয়ে আছেন মোসাদ্দেক হোসেন।

রান আউটে ফিরলেন সাব্বির

দলের ব্যাটিং বিপর্যয় আরও বাড়াল সাব্বিরের রান আউট। মুশফিকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির পর ফিল্ডারের বাজে থ্রোয়ের পরও বাঁচতে পারলেন না সাব্বির।

দনাঞ্জয়ার বল সামনের পায়ে আলতো করে খেলেই রান নিতে ছুটেছিলেন সাব্বির। তবে ফিল্ডার ছিল বলের নাগালেই। মুশফিক তাই ফিরিয়ে দেন সাব্বিরকে। দ্রুত ছুটতে থাকা সাব্বির ততক্ষণে এগিয়ে এসেছেন অনেকটা। ঘুরে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করলেন ক্রিজে ফিরতে। ফিল্ডার বল ধরে থ্রো করলে স্টাম্প থেকে অনেকটা দূরে। কিন্তু কিপার কুসল পেরেরা দারুণভাবে বলটি ধরে ডাইভ দিয়ে ভেঙে দিলেন স্টাম্পস। সাব্বির রক্ষা পেলেন না ডাইভ দিয়েও।

গত ম্যাচে ফিফটির পর উইকেট ছুঁড়ে আসা সাব্বির এবার অযথা রান আউটে ফিরলেন ১৯ বলে ১১ রান করে। ২৪.৩ ওভারে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ৮৮।

মুশফিকের রক্ষা

আকিলা দনাঞ্জয়াকে ফিরতি ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেলেন মুশফিকুর রহিম। ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারিতে জায়গা বানিয়ে তুলে মেরেছিলেন মুশফিক। মারে জোর ছিল যথেষ্ট, তবে গিয়েছিল বোলার বরাবর। দনাঞ্জয়া হাতে লাগাতে পারলেও মুঠোয় জমাতে পারেননি। মুশফিক জীবন পেলেন ২৪ রানে।

দনাঞ্জয়ার টার্নে বোল্ড মাহমুদউল্লাহ

আকিলা দনাঞ্জয়ার বিশাল টার্নের জবাব পেলেন না মাহমুদউল্লাহ। দলকে আরও বিপদে ঠেলে বিদায় নিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।

স্টাম্পের বাইরে বল দেখে জায়গা পেয়ে কাট করতে চেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু তীক্ষ্ণ টার্ন করে বল ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে ছোবল দেয় স্টাম্পে।

ওয়ানডেতে দনাঞ্জয়ার এটি ৫০তম উইকেট। ১৮ বলে ৬ রান করে আউট হলেন মাহমুদউল্লাহ। ১৯ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ৬৮।

আলগা শটে মিঠুনের বিদায়

একটি জুটি গড়ে ওঠার সম্ভাবনা খানিকটা জাগতেই আবার পথ হারাল বাংলাদেশ। আলগা শটে উইকেট ছুঁড়ে এলেন মিঠুন।

একাদশে ফেরা আকিলা দনাঞ্জয়া শ্রীলঙ্কাকে উইকেট এনে দিলেন প্রথম ওভারেই। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে পিচ করা বল শরীর থেকে অনেক দূরে খেললেন মিঠুন। কোথায় খেলতে চেয়েছিলেন, বোঝা গেল না সেটি। বল আলতো করে গেল মিড উইকেট ফিল্ডারের হাতে।

২৩ বলে ১২ রান করে আউট হলেন মিঠুন। ১৪.৩ ওভারে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৫২।

মুশফিকের ৬ হাজার

নিজের ইনিংসের শুরুর দিকেই একটি মাইলফলক ধরা দিল মুশফিকুর রহিমের। বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে পূর্ণ করলেন ৬ হাজার ওয়ানডে রান।

৬ হাজার ছুঁতে এই ম্যাচে ৮ রান প্রয়োজন ছিল মুশফিকের। ইনিংসের ১৫তম ওভারে সিঙ্গেল নিয়ে পা রাখেন কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়। মুশফিকের আগে বাংলাদেশের হয়ে ৬ হাজার রান করেছেন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান।

আবারও ব্যর্থ তামিম

বিশ্বকাপে তিন আউটে বাইরের বল স্টাম্পে টেনে এনেছেন তামিম ইকবাল। সেই ভূত ফিরে এলো আবার। একইভাবে আউট হলেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।

ইসুরু উদানার বলটি ছিল অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে নিরীহ একটি ডেলিভারি। মারার মতোই বল। তবে এই ধরনের মন্থর উইকেটে একটু ঝুঁকিপূর্ণও। সেই মন্থরতাই কাল হয়েছে তামিমের। টাইমিং হয়নি ঠিকমতো, ব্যাটের নিচের দিকে লেগে বল চলে আসে স্টাম্পে।

আরেকবার থিতু হয়ে আউট হয়ে গেলেন তামিম। বের হতে পারলেন না সাম্প্রতিক ব্যর্থতার চক্র থেকে। ফিরলেন ৩১ বলে ১৯ রান করে। ৮.১ ওভারে রান ২ উইকেটে ৩১।

ফুল টসে বিদায় সৌম্যর

দুই ওপেনারকে যখন মনে হচ্ছিল বেশ নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিং করছেন, তখনই ছন্দপতন। বিদায় নিলেন সৌম্য সরকার।

নুয়ান প্রদিপের ওভারে প্রথম বলে চার মেরেছিলেন তামিম। তৃতীয় বলে নেন তিন রান। ওভারের চতুর্থ বলে আউট হয়ে গেলেন সৌম্য। প্রদিপ ডেলিভারি করেছিলেন ওয়াইড অব দা ক্রিজ, স্টাম্পের বেশ দূর থেকে। ইয়র্কারের প্রচেষ্টায় হয়তো হয়ে যায় ফুল টস। তবে সৌম্য সেটিও খেলতে পারেননি ঠিকমত। ব্যাটের মুখ ঘুরিয়ে ফেলেন আগেই। এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিপ্লেতে দেখা যায় বল আঘাত করতো লেগ স্টাম্পে।

১৩ বলে ১১ রানে ফিরলেন সৌম্য। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারাল পঞ্চম ওভারে, রান ১ উইকেটে ২৬।

রিভিউ হারাল শ্রীলঙ্কা

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই একমাত্র রিভিউটি হারাল শ্রীলঙ্কা। নুয়ান প্রদিপের বলে তামিম ইকবালের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউয়ের রিভিউ নিয়ে সফল হতে পারেনি লঙ্কানরা।

প্রদিপের বলটি ছিল ফুল লেংথ। ঠেকাতে গিয়ে ভূপাতিত হয়ে গিয়েছিলেন তামিম। জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়াররা। অনেক আলোচনা করে শেষ মুহূর্তে রিভিউ নেন লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। লঙ্কানদের ধারণা ছিল বল লেগেছে তামিমের বুটে। তবে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল প্রথম তামিমের ব্যাটে লাগে।

আচমকা প্রায় ইয়র্কারে তামিমকে চমকে দিলেও উইকেট নিতে পারলেন না প্রদিপ। দল হারাল রিভিউ।

‘শুষ্ক’ উইকেট

টসের সময় তামিম ইকবাল বললেন, উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো। তবে একটু টার্ন করতে পারে। তার ধারণা, কৃত্রিম আলোয় পেসারদের জন্যও খানিকটা সহায়তা মিলতে পারে শুরুতে।

পিচ রিপোর্টে ধারাভাষ্যকার রাসেল আরনল্ড অবশ্য স্পিনারদের জন্য আশা দেখালেন আরও বেশি। সাবেক লঙ্কান ক্রিকেটারের মতে, উইকেট বেশ শুষ্ক, সময় যত গড়াবে, তত মন্থর হবে এবং আগের ম্যাচের চেয়ে বেশ খানিকটা বেশি টার্ন থাকবে।

আরনল্ডের মতে, আগে ব্যাট করলে ২৮০ রানই জয়ের জন্য যথেষ্ট হতে পারে।

শ্রীলঙ্কা দলে পরিবর্তন দুটি

শ্রীলঙ্কান একাদশে একটি পরিবর্তন অবধারিতই ছিল। প্রথম ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন লাসিথ মালিঙ্গা। তার জায়গায় একাদশে এসেছেন বাঁহাতি পেসার ইসুরু উদানা। 

আরেকটি বড় পরিবর্তন আছে লঙ্কান একাদশে। অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরা জায়গা হারিয়েছেন। পেস বোলিং অলরাউন্ডারের বদলে স্পিনার বাড়িয়েছে শ্রীলঙ্কাও। একাদশে ঢুকেছেন আকিলা দনাঞ্জয়া।

শ্রীলঙ্কা একাদশ: দিমুথ করুনারত্নে (অধিনায়ক), কুসল পেরেরা, আভিশকা ফার্নান্দো, কুসল মেন্ডিস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, লাহিরু থিরিমান্নে, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, ইসুরু উদানা, আকিলা দনাঞ্জয়া, নুয়ান প্রদিপ, লাহিরু কুমারা।

বাংলাদেশ একটি পরিবর্তন

আগের ম্যাচের একাদশ থেকে একটি বদল এনে একাদশ সাজিয়েছে বাংলাদেশ। পেসার রুবেল হোসেনের জায়গায় একাদশে এসেছেন তাইজুল ইসলাম। প্রায় তিন বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামছেন বাংলাদেশের টেস্ট দলের নিয়মিত এই বাঁহাতি স্পিনার। সবশেষ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে খেলেছেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ২৪ টেস্ট খেলা স্পিনারের এটি মাত্র পঞ্চম ওয়ানডে।

টসের সময় অধিনায়ক তামিম ইকবাল বললেন, আগের ম্যাচে উইকেটে কিছুটা টার্ন মিলেছে বলে স্পিনার বাড়িয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, শফিউল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ

নেতৃত্বের দ্বিতীয় ম্যাচে টসে হাসতে পারলেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশ অধিনায়ক অনুমিতভাবেই বেছে নিয়েছেন ব্যাটিং।

শ্রীলঙ্কার সুযোগ

গত কিছুদিনে অনেক ভাঙা-গড়া ও বিতর্কের মধ্য দিয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার সামনে বড় সুযোগ সিরিজ জয়ের। এই ম্যাচ জিতলেই নিশ্চিত হয়ে যায় সিরিজ জয়। গত বছরের অগাস্টের পর থেকে টানা দুই ওয়ানডে জিততে পারেনি লঙ্কানরা। দেশের মাটিতে সবশেষ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে তারা সেই ২০১৫ সালের নভেম্বরে!

বাংলাদেশের আবশ্যিক জয়ের ম্যাচ

প্রথম ওয়ানডের আগে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছিলেন, শুরুটা ভালো করে সিরিজে এগোতে চায় বাংলাদেশ। হয়েছে উল্টো। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে স্রেফ উড়ে গেছে তামিম-মুশফিকরা। চ্যালেঞ্জ তাই এখন অনেক কঠিন। সিরিজে টিকে থাকতে হলে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। দলের মানসিক শক্তি ও স্কিলের আরেকটি বড় পরীক্ষা হবে এই ম্যাচে।

এই ম্যাচ হেরে গেলে সিরিজ হারের পাশাপাশি টানা চার ওয়ানডে হারবে বাংলাদেশ। এই সিরিজের আগে হেরেছিল বিশ্বকাপের শেষ দুটি ম্যাচ। ২০১৭ সালের অক্টোবরের পর টানা চার ওয়ানডে হারের তেতো স্বাদ আর পায়নি বাংলাদেশ।