প্রথম ট্রফি জয়ের উদযাপন যেমন হলো

উইকেটে দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানের উদযাপনে ছিল না চোখে পড়ার মতো উচ্ছ্বাস। সীমানার বাইরে থেকে কেউ ছুটে যায়নি মাঠে। ড্রেসিং রুমের সামনে অপেক্ষমান ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাস অবশ্য যথেষ্টই প্রাণবন্ত ছিল। তবে ছিল না বাঁধনহারা আনন্দ। পরে ড্রেসিং রুমে বা টিম হোটেলেও ছিল না তেমন কোনো আয়োজন। বহু আরাধ্য ট্রফির ছোঁয়া পেয়েও খুশিতে ভেসে যায়নি বাংলাদেশ দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদক ডাবলিন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2019, 10:37 AM
Updated : 18 May 2019, 10:37 AM

আগে এমনকি স্রেফ একটি জয়েও অনেক সময় দেখা গেছে আনন্দের আতিশয্য। এবার প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়কেও দল নিয়েছে স্বাভাবিকভাবে।

জয়ের পর প্রাথমিক উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া, পরস্পর পিঠ চাপড়ে দেওয়া, আলিঙ্গন তো ছিলই। ট্রফি হাতে দলীয় ছবি তুলতে গিয়ে হই-হুল্লোড় হলো বেশ। মাশরাফি বিন মুর্তজার হঠাৎ খেয়াল হলো, কোচিং স্টাফের কেউ নেই ছবিতে। একটু দূরেই তারা দাঁড়িয়ে দেখছিলেন হাসিমুখে। অধিনায়ক চিৎকার করে ডাকলেন কোচদের। সমস্বরে ডেকে উঠলেন তখন প্রায় সবাই। মেহেদী হাসান মিরাজ ছুটে গিয়ে ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ণের ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে এলেন ছবির জন্য। মাহমুদউল্লাহ ফ্রেমে ডেকে নিলেন টিম বয়, ম্যাসেজম্যানদের। একের পর এক ক্লিক চলল।

দলীয় ছবির পর শুরু হলো একক ছবির জন্য পোজ। ট্রফির সঙ্গে স্মৃতির ফ্রেমে বন্দী হতে চান সবাই। এমনকি স্পিন কোচ সুনীল যোশী, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ক্রিকেট দুনিয়ায় রাজত্ব করা কোর্টনি ওয়ালশ পর্যন্ত ট্রফি নিয়ে আলাদা করে দাঁড়ালেন ক্যামেরার সামনে।

খানিকপর সবার ডাক পড়ল ড্রেসিং রুমে। কাঁচ ঘেরা ড্রেসিং রুমে বাইরে থেকেই সবকিছু দেখা যাচ্ছিল স্পষ্ট। গোল হয়ে পরস্পরের কাঁধে হাত রেখে কোচ স্টিভ রোডস কিছু বললেন। বললেন অধিনায়কও। ভেসে এলো উল্লাসধ্বনি। এই পর্ব শেষ হতেই ড্রেসিং রুমে নানা পোজে চলল আরেক দফা ছবি তোলার পালা।

উচ্ছ্বাসের মাত্রা সবার চেয়ে অনেকটা ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। তার মুখ থেকে হাসি সরছিলই না। এমনিতে একটু অন্তর্মুখী হলেও এ দিন ছিলেন প্রাণখোলা। দলীয় ছবিতে পোজ দিলেন নিয়ে আধশোয়া হয়ে ট্রফি মাথায় নিয়ে। ট্রফি নিয়ে তার ছুটোছুটি, সেলফি, সতীর্থদের সঙ্গে খুনসুটি চলছিলই। পিঠের অস্বস্তিতে ফাইনালে খেলতে না পারলেও সতীর্থদের সঙ্গে প্রাণবন্ত অংশগ্রহণ ছিল সাকিব আল হাসানের।

ব্যাট হাতে ঝড়ো সূচনায় দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেওয়া সৌম্য সরকারের হয়তো টেনশনে খাওয়ার কথা মনে ছিল না। অন্যদের হাসি-মজার মাঝেই তিনি চলে গেলেন পাশের ডাইনিং কক্ষে খেতে।

খুব দীর্ঘায়িত হয়নি এসব। হয়নি আর বিশেষ কিছু। এমনকি বরাবরই বাংলাদেশের বিজয় সঙ্গীত হিসেবে ড্রেসিং রুমে গাওয়া হয় যে গান, সেই ‘আমরা করব জয়’ কোরাসও ধরা হয়নি এবার।

একটি কারণ অবশ্য ছিল ফেরার তাড়া। বৃষ্টিতে এমনিতেই ম্যাচ অনেক দেরিতে শেষ হয়েছে। মাশরাফি, তামিম ইকবালসহ দলের কয়েকজনের ছিল ফ্লাইট ধরার তাড়া। মাশরাফি দিন চারেকের ছুটিতে দেশে ফিরছেন পরিবারকে সময় দিতে। তামিম পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবেন দুবাইয়ে। আর ত্রিদেশীয় সিরিজের যারা বিশ্বকাপ দলে নেই, তারা ফিরছিলেন দেশে।

এছাড়াও অন্যদের ছিল হোটেলে ফেরার তাড়া। শনিবার ডাবলিন থেকে লণ্ডন হয়ে তাদের গন্তব্য লেস্টার। তাদের গোছগাছ, লাগেজ গুছিয়ে জমা দেওয়ার ঝামেলা ছিল। হোটেলে ফিরে কেক কাটা কিংবা অন্য কোনো আয়োজনও ছিল না। হয়তো দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই ট্রফি ধরা দিতে দিতেই আরও উঁচুতে চড়ে গেছে প্রত্যাশার পারদ!