মাশরাফি ভাই বলেছিলেন, তুই পারবি: মোসাদ্দেক

মুশফিকুর রহিমের পর যখন মোহাম্মদ মিঠুনও আউট হলেন, ড্রেসিং রুমে অনেকের মাথা নুইয়ে এসেছিল হতাশায়। মাশরাফি বিন মুর্তজা উঠে দাঁড়ালেন চকিতে। নতুন ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেনের কাছে গিয়ে চাপড়ে দিলেন পিঠ। বললেন দুটি কথা। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মোসাদ্দেকের মনে পড়ছে অধিনায়কের সেই কথা।

ক্রীড়া প্রতিবেদক ডাবলিন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2019, 02:42 AM
Updated : 19 May 2019, 01:51 PM

মোসাদ্দেক যখন উইকেটে গেলেন, জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৫০ বলে ৬৭ রান। এই সময়ের ক্রিকেটে এমন কঠিন কিছু নয়। তবে উইকেট পড়ে গিয়েছিল ৫টি। আরেকটি উইকেটের পতন ডেকে আনত পারত দলের বিপদ। মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক, উইকেটে থাকা এই দুজনই ছিলেন স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের শেষ জুটি। এরপর ব্যাটিংয়ের অপেক্ষায় ছিলেন বোলিং অলরাউন্ডাররা।

কিন্তু আর কারও প্রয়োজন পড়েনি। মোসাদ্দেকের ২৭ বলে ৫২ রানের অসাধারণ ইনিংসে জয় ধরা দিয়েছে ৭ বল বাকি থাকতেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বাংলাদেশ জিতেছে শিরোপা।

দলকে জিতিয়ে যখন ফিরছেন, মোসাদ্দেককে আবার পিঠ চাপড়ে দিলেন মাশরাফি। পরে হোটেলে ফেরার টিম বাসে ওঠার আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মোসাদ্দেক জানালেন, অধিনায়কের কাছ থেকে পাওয়া প্রেরণার কথা।

“উইকেটে যাওয়ার আগে মাশরাফি ভাই বলছিলেন, ‘সৈকত তুই পারবি। যা ইচ্ছা খেল, শেষ করে আয়।’ শুধু ওই সময়ই নয়, আগের ম্যাচে বোলিংয়ের সময়, এমনকি এবার ঢাকা লিগের পুরো সময়, মাশরাফি ভাই আমাকে নানাভাবে উৎসাহ দিয়ে গেছেন। দলের বাইরে ছিলাম তখন। উনি বলেছেন যে, কি কি করলে দলে ফিরতে পারি। অধিনায়ক এমন ভরসা করলে আত্মবিশ্বাস সবসময়ই ভালো থাকে।”

“ব্যাটিংয়ে যাওয়ার পর আমার একটি ব্যাপারই কাজ করছিল যে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলব। এমন একটা পরিস্থিতি ছিল যে খুব সহজ ছিল না। আমি চেষ্টা করেছি বল বুঝে খেলতে। আর কিছু না।”

শুধু তখন বা আগেই নয়, অনুপ্রেরণার পালা চলেছে ম্যাচ জুড়েই। বিশেষ করে ডাকওয়ার্থ-লুইসে যখন বাংলাদেশের লক্ষ্য নির্ধারিত হলো ২৪ ওভারে ২১০, সিনিয়ররা সবাই ড্রেসিং রুমে জুগিয়েছেন সাহস, জানালেন মোসাদ্দেক।

“আমরা যখন ফিল্ডিং করে ফিরেছি, তখন মাশরাফি ভাই থেকে শুরু করে মুশফিক ভাই, তামিম ভাই, রিয়াদ ভাই, সবাই একটা কথা বলছিলেন যে, আমাদের যে ব্যাটিং সামর্থ্য আছে এবং পুরো টুর্নামেন্টে যেমন খেলেছি, আমাদের পক্ষে এই রান তাড়া করা সম্ভব।”

সত্যিই সেটি সম্ভব করার পর খুব বেশি উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি মোসাদ্দেকের উদযাপনে। তবে জয়ের একটু আগে যখন ফিফটি স্পর্শ করলেন, সেটির উদযাপন ছিল দেখার মতো। পঞ্চাশ ছুঁয়েছিলেন ২৩ বলে। এরপর অনেকটু ছুটে গেছেন ড্রেসিং রুমে দিকে, চুমু এঁকেছেন বাতাসে, মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ছুঁড়েছেন হাওয়ায়।

সেই উদযাপনের প্রসঙ্গ উঠতেই ম্যাচ শেষে একটু যেন লজ্জা পেয়ে গেলেন মোসাদ্দেক। লাজুক হাসিতেই জানালেন কেন ছিলেন অতটা বাঁধনহারা ।

“উদযাপনটা আমার নিজের জন্যই ছিল। অন্য কারও জন্য নয়। অনেক সময় নিজের কাছে নিজের প্রত্যাশা থাকে। পূরণ হলে ভেতর থেকে অনেক কিছু বেরিয়ে আসে।”

তার অনুভূতি যেমন বেরিয়ে এসেছে, এ দিন ফিরে এসেছে মোসাদ্দেকের সেরাটুকুও। দারুণ প্রয়োজনের সময় মোসাদ্দেকের ব্যাট হেসেছে বলেই দল হেসেছে শিরোপার হাসি।