ফাইনালের আগে দলের আলোচনায় নেই ‘ফাইনাল’

ফাইনালের আগের দিন সকালে দলের অনুশীলন ছিল ঐচ্ছিক। দুপুরে ছিল টিম মিটিং, সেটিও শেষ কেবল ১৫ মিনিটেই। সেখানে আলোচনার ঝড় ছিল না, ফাইনাল নিয়ে পরিকল্পনার তোড়জোড় ছিল না। বরং ‘ফাইনাল ম্যাচ’ শব্দ যুগলকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে সযতনে। টিম ম্যানেজমেন্টের চাওয়া, ফাইনাল ম্যাচের ওজনে যেন এবার চাপা না পড়ে দল।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিডাবলিন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2019, 05:53 PM
Updated : 16 May 2019, 05:53 PM

আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ডাবলিনের মালাহাইডে ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল পৌনে পাঁচটায়। তার আগে চেষ্টা করা হচ্ছে বড় ম্যাচের উত্তাপ থেকে দলকে দূরে রাখার। ‘ফাইনাল’ শব্দটি যে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের কাছে হয়ে আছে হতাশার প্রতিশব্দ!

এবারের আগে ৪টি ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালে হেরেছে বাংলাদেশ, টি-টোয়েন্টির ফাইনালে হার দুটি। ৬ ফাইনালের ৫টিতেই দল হেরেছে জয়ের খুব কাছে গিয়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে টিম মিটিং শেষে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অধিনায়ক মাশরাফি জানালেন, আর সব ম্যাচের মতোই রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে এই ম্যাচকে।

“প্রতিটি ম্যাচই খেলতে নামি জয়ের জন্য। আর ফাইনালে তো বাড়তি প্রত্যাশা সবার থাকেই। আমরা কখনও ফাইনাল জিতিনি, সেই ব্যাপারও আছে। কিন্তু এ রকম করে করে বেশ কয়েকটা ফাইনাল হেরেছি। আমরা যেটা চেয়েছি, এই ফাইনাল নিয়ে আলোচনা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছি।”

“সেজন্যই প্রথম ম্যাচ থেকে যেভাবে চিন্তা করেছি, সেভাবেই চিন্তা করছি। আগের ম্যাচগুলি যেভাবে খেলেছি, সেভাবে খেলারই পরিকল্পনা। বেশি পরিকল্পনা করে বাড়তি চাপ নেওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না।”

আরেকটি ফাইনালের আগে আগের ফাইনালগুলোর যন্ত্রণার অভিজ্ঞতাও ফিরে আসছে। মাশরাফির ধারণা, মানসিক কোনো বাধা দলকে থমকে দিচ্ছে বলেই ফাইনালে হারের বৃত্তে থেকে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

“গত এশিয়া কাপের ফাইনালে, আমার কাছে মনে হয়েছিল, ভালো সুযোগ ছিল না। সাকিব-তামিম ছিল না। তবু আমরা খুব কাছে গিয়েছিলাম। আগেও এশিয়া কাপে কাছাকাছি গিয়েছিলাম। কয়েকটা ফাইনাল খুব কাছে গিয়ে হারায় মনে হয়েছে, কোনো মেন্টাল ব্লক হয়তো ফাইনালে প্রভাব ফেলে।”

“আজকে এজন্য আমরা টিম মিটিংয়ে ফাইনাল ম্যাচ হিসেবে আলোচনা করিনি। আর দশটা ম্যাচের মতো যেভাবে মিটিং করি, সেভাবেই করেছি। ফাইনাল খেলছি, সেই উত্তাপ থেকে ছেলেদের আসলে যতটা দূরে রাখা যায়, চেষ্টা করছি।”

মাশরাফির বিশ্বাস, ফাইনাল না জয় করা পর্যন্ত এই মানসিক বাধা জয় করা যাবে না। আর একটি ট্রফি জয় খুলে দিতে পারে অনেক ট্রফি জয়ের পথ।

“যতক্ষণ না কোনো ফাইনাল জিতছেন, যতক্ষণ না ট্রফি জিতছেন, এই ব্লক থাকবে। এটা খুবই স্বাভাবিক। যতবার ফাইনাল হারছেন, ততবারই পরের ফাইনাল নিয়ে অনেক সংশয় থাকবে। কিন্তু একবার জিতে গেলে হয়ত ওইটা পাওয়ার ইচ্ছের তীবতা কমে। আর তীব্রতা কমলে, মানসিকভাবে যে সংশয়গুলো আসে, ওসব চলে যায়। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে গেলে যেমন, সিরিজ জয়ের তাগিদ থাকলেও মানসিক চাপ ততটা থাকে না। একটা ফাইনাল জিতলে সামনে হয়তো আরও কিছু ফাইনাল জেতা সম্ভব।”

এবারের মতো দাপটে অবশ্য আগে কখনও ফাইনালে ওঠেনি বাংলাদেশ। প্রাথমিক পর্বের কোনো ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে পাত্তা দেয়নি মাশরাফিরা। ফাইনালের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে দুইবারই।

তবে সেই দুইবার জয় মানেই তৃতীয় জয়ের নিশ্চয়তা নয়, মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

“একটি দলের সঙ্গে দুটি ম্যাচ জিতলে যদি কেউ ভাবে তিন নম্বরটিও একরকম হবে, সেটি অনেক সময় হয় না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কয়েকজনের একাই ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য আছে। কোনোভাবেই আশা করছি না, ম্যাচটি আগের দুই ম্যাচের মতো হবে। একটি দল দুই-তিন ম্যাচ হারলে পরেরটি জিততে মরিয়া থাকে। কঠিন ম্যাচের প্রত্যাশাই করছি। আমরাও সেভাবে তৈরি হচ্ছি।”