ফিল্ডিং ঠিক তো সাব্বিরের দুনিয়া ঠিক

দল জিতলে ব্যাটিং না পেলেও খুশি। ব্যাটিং পেয়ে ব্যর্থ হলে মন খারাপ হয়, তবে অনেক কিছুই নিজের হাতে থাকে না অনেক সময়। বোলিং না পেলেও আপত্তি নেই। কিন্ত ফিল্ডিংয়ের সবকিছু তো নিজের হাতে। ফিল্ডিংটা ঠিক না হলে সাব্বির রহমানের কাছে দুনিয়ার সবকিছুই ওলট-পালট লাগে। ফিল্ডিং ভালো করতে চান সবসময়, সব ম্যাচে।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিডাবলিন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2019, 03:28 AM
Updated : 15 May 2019, 03:28 AM

গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের সেরা ফিল্ডার মনে করা হয় সাব্বিরকে। সেটি তিনি প্রমাণও করে চলেছেন ম্যাচের পর ম্যাচ। চলতি ত্রিদেশীয় সিরিজেও দুই ম্যাচে ফিল্ডিংয়ে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। বৃত্তের ভেতর তিনি দারুণ ক্ষিপ্র ও তীক্ষ্ণ। সীমানা আটকাচ্ছেন চার। দ্রুতগতিতে ছুটে সম্ভাব্য দুই বা তিন রানকে থামিয়ে রাখছেন আরও কমে। ক্যাচিংয়ে যে বরাবরই নিরাপদ।
 
এই টুর্নামেন্টে ব্যাটে-বলে এখনও কিছু করে দেখানোর সুযোগই পাননি। কিন্তু ফিল্ডিং দিয়ে দলে অবদান রেখেছেন দারুণভাবে। বিশেষ করে সোমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতে ফাইনাল নিশ্চিত করার ম্যাচে দাপিয়ে বেরিয়েছেন মাঠ।
 
ফিল্ডিং তার আবেগের জায়গা, সাব্বির বলেছেন অনেকবার। ফিল্ডিং নিয়ে কাজ করতে যেমন উপভোগ করেন, ভালো লাগে কথা বলতেও। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে ফিল্ডিং নিয়ে আলাপাচারিতায়ও উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার চোখ-মুখ।
 
“ফিল্ডিংটা করি আমি প্যাশন নিয়ে। ক্রিকেটের শুরু থেকেই ফিল্ডিং করতে ভালো লাগে। ব্যাটিংয়ের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না ফিল্ডিংকে। ম্যাচে বা অনুশীলনে, ফিল্ডিং আমি সবসময়ই উপভোগ করি। ফিল্ডিং ঠিক না হলে আমার কিছুই ভালো লাগে না। ফিল্ডিং ঠিক হলে দুনিয়ার সব ঠিক।”
 
“মাঠেও দেখবেন, ম্যাচের সময় অনেক দিনই হয়তো আমার কাছে বল কম আসছে। তবু আমি মাঠে ছুটোছুটি করে, এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত দৌড়ে, স্ট্রেচিং করে নিজেকে তাজা রাখার চেষ্টা করি। এসব খুব উপভোগ করি আমি।”
 
আবেগ আর উপভোগ, ফিল্ডিংয়ে ভালো করার এই দুই সূত্র চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। একসময়ের দুনিয়া সেরা ফিল্ডার কলিন ব্লান্ড বা আধুনিক যুগের সেরা জন্টি রোডস, কিংবা রিকি পন্টিং, হার্শেল গিবস, অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের মতো সেরা ফিল্ডাররা ফিল্ডিং নিয়ে এই মন্ত্রের কথাই বলে এসেছেন সবসময়। 
বাংলাদেশের মতো জায়গায় অবশ্য ফিল্ডিং উপভোগ করা কঠিন। ফিল্ডিংয়ের তেমন কোনো সংস্কৃতি নেই এখানে। আন্তর্জাতিক মাঠগুলো ছাড়া অন্য মাঠগুলো ফিল্ডিংয়ের জন্য খুব সহায়কও নয়। উঠতি ক্রিকেটার কিংবা ক্লাব ক্রিকেটারদের ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে হৃদ্যতার পরিবেশই নেই। কিন্তু এই আবহে থেকেও সাব্বির মজেছেন ফিল্ডিংয়ের প্রেমে।
 
“এখানকার মাঠগুলো দেখুন, দেখলেই ডাইভ দিতে ইচ্ছে করে। আমাদের দেশে তো ক্লাব মাঠগুলোর সেই অবস্থা নেই। ফিল্ডিং ভালো করাও কঠিন। আমার কাছে বরাবরই খুব ভালো লাগে বলেই ফিল্ডিং নিয়ে এত কাজ করেছি।”
 
“অনেক সময়ই ব্যাটি ও বোলিংয়ের মতো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কিন্তু আমি সবসময়ই ফিল্ডিংকে সমান গুরুত্ব দিয়েছি। ফিল্ডিংয়ের সময় গতি, ডাইভ দেওয়া এসব আমার সহজাতভাবেই আসে। ডাইভ দিতে ভালো লাগে আমার।”
 
জাতীয় দলে থাকার সময় ফিল্ডিং নিয়ে আলাদা কাজ করা কঠিন। বাঁধা ছকে ফিল্ডিং কোচের তত্ত্বাবধানে কাজ করতে হয়। তবে নিজের ভালো লাগা আর তাগিদ থেকে এরপরও সুযোগ বের করে ফেলেন সাব্বির।
 
“দলের অনুশীলন শেষ হলে আমি সবসময়ই চেষ্টা করি অন্তত ১০ মিনিট হলেও আলাদা কিছু করতে। দলের অনুশীলনে অনেক দিনই এমন হয় যে খুব বেশি বল বা ক্যাচ হয়তো আমার কাছে আসেনি। বাড়তি অনুশীলন তখন কাজে লাগে। ফিল্ডিং নিয়ে কাজ করতে খারাপ লাগে না কখনও।”