একটা 'কিক' প্রয়োজন ছিল সাকিবের

টিম হোটেলের লবিতে বসে মোবাইল ফোনে কি যেন দেখছিলেন সাকিব আল হাসান। ‘ওজন এত কমালেন কিভাবে?’ প্রশ্ন শুনে মুখ তুলে তাকালেন বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক। হাসলেন। আবার ফোনের পর্দায় তাকিয়ে বললেন, “সালমান খানের ‘কিক’ সিনেমাটা দেখেননি? নিজেকে জাগাতে তার কিক লাগত! আমারও ওরকম একটা কিক প্রয়োজন ছিল।”

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি ডাবলিন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2019, 03:01 PM
Updated : 9 May 2019, 09:58 AM

সেই ‘কিক’ কবে, কিভাবে, কার কাছ থেকে এসেছে, সেসব খোলাসা করতে চাইলেন না সাকিব। তবে ফিটনেস, তার পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনায় বারবার উঠে এলো সেই ‘কিক’ পেয়ে জেগে ওঠার কথা।

ত্রিদেশীয় সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর ম্যাচে ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে অসাধারণ ছিল সাকিবের পারফরম্যান্স। চোট কাটিয়ে মাঠে ফেরার পর এটিই ছিল জাতীয় দলের হয়ে তার প্রথম ম্যাচ। ফেরার ম্যাচে এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে অবশ্য বিস্ময়কর কিছু নেই। বরাবরই তিনি দলের সেরা পারফরমারদের একজন। কিন্তু চমকে দিচ্ছে তার ফিটনেস!

আইপিএল ম্যাচগুলোর সময়ই টিভিতে দেখা গেছে, ওজন বেশ কমিয়েছেন সাকিব। দেশে ফেরার পর তার পরিবর্তনটা চোখে পড়ছে সামনে থেকেও। চার সপ্তাহে ওজন কমিয়েছেন ৬ কেজি। তবে দেখে মনে হয়, কমিয়েছেন আরও বেশি। শরীর একদম ঝরঝরে, চনমনে। যেন সেই ৮-১০ বছর আগের সাকিব!

সাকিব জানালেন, অনেকের কাছ থেকেই তিনি এই ধরনের প্রশংসা পাচ্ছেন।

“পাপন ভাইও (বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান) সেদিন বললেন, ‘তোমাকে তো ২০০৭ সালের সাকিবের মতো লাগছে।’ অনেকেই বলছেন এমন কথা। নিজেও খুব ভালো অনুভব করছি। নিজের কাছে অনেক আত্মবিশ্বাসী লাগছে, অনেক ফিট মনে হচ্ছে নিজেকে।”

“ফিট না থাকলে অনেক সময় মন চাইলেও বা চেষ্টা করলেও শরীর সমর্থন করে না। এখানে যেটা হচ্ছে যে, মন যেটা চাইছে, শরীর সেটা সমর্থন দিচ্ছে। তাই খুব ভালো অবস্থায় আছি এখন। এটা ধরে রাখাই এখন আসল।”

ফিটনেস নিয়ে আলাদা কাজ করার তাড়না জন্ম নিয়েছে অনেকটা হুট করেই। আবারও বললেন, সেই ‘কিক’ জাগিয়ে তুলেছে তাকে।

“বললাম না, মাঝে মাঝে ‘কিক’ মুভির মতো ‘কিক’ দরকার হয়! কোনো একটা ভাবে, সেই কিক আমি পেয়েছি। কিক এসেছে। কিভাবে, তা আড়ালেই থাকুক। তবে কোনো ভাবে এসেছে কিকটা, সেটিই আমাকে জাগিয়ে দিয়েছে। এমন নয় যে খুব বড় কিছু, কিন্তু একটি কিক তো এসেছেই।”

 

“২০১১ সালের আগ পর্যন্ত খুব ভালো ফিট ছিলাম। তার পর এই পর্যন্ত ফিটনেস নিয়ে আলাদা কাজ করার সেভাবে সুযোগ হয়নি বা করে উঠতে পারিনি। করার জেদও হয়তো আসেনি। এবার কিক এসেছে বলেই আলাদা করে করেছি।”

আলাদা কাজ করার সুযোগটা তিনি পেয়ে গেছেন আইপিএলে। ম্যাচের পর ম্যাচ বাইরে বসে থাকাটাই তার জন্য শাপেবর হয়েছে। যথেষ্ট সময় ছিল বলে সুযোগ পেয়েছেন নিজের মতো করে নিবিড়ভাবে কাজ করার। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ট্রেনারের সঙ্গে কাজ করেছেন ফিটেনস নিয়ে। দেশ থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে। তাকে নিয়ে ঝালাই করেছেন স্কিল।

“পরিবেশ ও পরিস্থিতিই এমন তৈরি হয়ে গিয়েছিল যে আমার প্রস্তুতি নেওয়া দরকার এবং ওখানে নিতে পারব। স্যারের সঙ্গে (সালাউদ্দিন) মূলত ব্যাটিং ও বোলিং নিয়ে কাজ করেছি। ফিটনেস নিয়ে সানরাইজার্সের অস্ট্রেলিয়ান ট্রেনারের সঙ্গে কাজ করেছি। ও খুব ভালো ট্রেনিং করাতে পেরেছে। আমার কাছে মনে হয় সেটা অনেক কাজে এসেছে। ডায়েট বদলেছে অবশ্যই। না হলে এটা সম্ভব না। সব মিলিয়ে খুব ভালো অবস্থানে আমি এখন আছি।”

কিক বা তাড়না যেটিই এসেছে, ফিটনেস ও ডায়েট নিয়ে এই সচেতনতা, স্কিল নিয়ে কাজ করা, সবই বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়ে। জানালেন, বড় আসর নিয়ে তার পরিকল্পনাও বড়।

“বিশ্বকাপ সামনে ছিল। একটি লক্ষ্য নিয়েই করেছি। সবারই লক্ষ্য থাকে। বিশ্বকাপ খেলা প্রতিটি ক্রিকেটারেরই নিজস্ব লক্ষ্য আছে। একটি কথা বলতে পারি, গত ৮-৯ বছরে মনে হয় এত কষ্ট করিনি, যতটা পরিশ্রম ও প্রস্তুতি এই বিশ্বকাপের জন্য নিয়েছি। আমার তরফ থেকে যতটুকু করার সম্ভব ছিল, করেছি। বাকিটা ওপরওয়ালার ইচ্ছা ও আমার চেষ্টা।”

চেষ্টায় কমতি না রাখলে যে ভাগ্যও পাশে থাকে, সেটি তো প্রমাণিতই। গত কয়েক মাসের ঝরানো ঘামের প্রতিদান মিলতে শুরু করেছে পারফরম্যান্সেই।