মুশফিকের ইচ্ছে বিশ্বকাপে ‘শেষ পর্যন্ত যাওয়ার’

নিজের প্রথম বিশ্বকাপে মুশফিকুর রহিম ছিলেন ঘোরের মধ্যে। বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসরে মহাতারকাদের সঙ্গে মাঠে নামাই ছিল বড় পাওয়া। সময়ের পরিক্রমায় তিনিই এখন বড় তারকা; দলের বড় ভরসা। এক যুগ আগে ঘোরে থাকা তরুণ এবার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে রাঙাতে চান বিশ্ব আসর আর দলকে দেখতে চান বিশ্বকাপের বিজয় মঞ্চে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2019, 02:05 PM
Updated : 28 April 2019, 02:06 PM

২০০৭ বিশ্বকাপের বাংলাদেশ স্কোয়াডে মুশফিকের জায়গা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল তুমুল। অভিজ্ঞ খালেদ মাসুদকে বাদ দিয়ে আস্থা রাখা হয়েছিল মুশফিকের ওপর। সমালোচনাগুলোতে তিনি স্তুতিতে রূপ দিয়েছিলেন প্রথম ম্যাচেই। ভারতের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ে করেছিলেন অপরাজিত ফিফটি।

সেই মুশফিক পরে খেলেছেন আরও দুটি বিশ্বকাপ। এবার যাচ্ছেন টানা চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে। রোববার অনুশীলন শেষে বিশ্বকাপ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথোপকথনে মুশফিক ফিরে গেলেন এক যুগ আগে।

“২০০৭ বিশ্বকাপের পুরোটা আসলে ঘোরের মধ্যে ছিলাম। কখন যাব, কখন খেলব, এই উত্তেজনা ছিল। বয়স অনেক কম ছিল। এত বড় মঞ্চ, গ্রেট সব ক্রিকেটর ছিলেন তখন... শচিন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা, রিকি পন্টিং, যাদের খেলা টিভিতে দেখতাম, তাদের সঙ্গে খেলা... এসব নিয়ে অনেক রোমাঞ্চ ছিল।”

সেই বিশ্বকাপে অবশ্য প্রথম ম্যাচের পর অন্য ম্যাচগুলোয় খুব ভালো করতে পারেননি। ২০১১ সালে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপও ভালো কাটেনি। তবে গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠায় বড় অবদান ছিল মুশফিকের। দলের তিনটি জয়ের ম্যাচেই খেলেছিলেন দুর্দান্ত ইনিংস।

গত বিশ্বকাপের পর থেকে পারফরম্যান্সে আরও ধারাবাহিক মুশফিক। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জয়গুলোতে খেলেছেন ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া সব ইনিংস। এই চার বছরে ৫২ ইনিংসে ৪৭.৩৭ গড়ে ও ৮৫.৯৯ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১ হাজার ৯৪১। তার ক্যারিয়ার গড় (৩৪.৫৬) ও স্ট্রাইক রেটের (৭৭.৪৯) চেয়ে ঢের ভালো এই সময়ের পারফরম্যান্স।

এগিয়ে চলার ধারাবাহিকতায় এবার মুশফিকের চাওয়া নিজের সেরা বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স উপহার দেওয়া।

“এমন বড় ইভেন্টে সবাই চায় ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া ইনিংস খেলতে। আমিও ব্যতিক্রম নই। কন্ডিশন একটা চ্যালেঞ্জ হবে, প্রতিপক্ষ চ্যালেঞ্জ হবে। প্রচুর দর্শক থাকবে। সব মিলিয়ে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ থাকবে। আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য, এই বিশ্বকাপে যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে যেতে পারি। আমি মনে করি সেই সুযোগ আছে, সামর্থ্যও আছে।”

বিশ্বকাপে ২০ ইনিংস খেলে এখনও সেঞ্চুরি নেই মুশফিকের। এবার দৃষ্টি তার তিন অঙ্কের আক্ষেপ ঘোচানোতেও।

“মাইলফলক সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের টপ অর্ডারে যারা আছে, সবাই চেষ্টা করে বড় ইনিংস খেলার। আমিও করি। সবসময় চেষ্টা করি  জেতানোর জন্য যে রান দরকার, সেটিই করতে। বড় ইনিংস খেলার সুযোগ এলে সেটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। বড় কিছু করতে, স্মরণীয় কিছু করতে চেষ্টার কমতি থাকবে না।”

স্মরণীয় কিছু শুধু নিজের পারফরম্যান্সে নয়, দলীয় অর্জনেও দেখতে চান মুশফিক। দলের পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটারের এটি চতুর্থ বিশ্বকাপ। অভিজ্ঞতায় অনেকটাই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ নিয়ে মুশফিকের স্বপ্ন তাই ইতিহাস গড়ার।

“বাংলাদেশের হয়ে যে কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচই গর্ব ও সম্মানের ব্যাপার। আর বিশ্বকাপ তো অবশ্যই বড় মঞ্চ। আমরা কয়েকজন আছি চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি। আমাদের ইচ্ছে আছে এটাকে স্মরণীয় করে রাখার ও শেষ পর্যন্ত যাওয়ার। আমার মনে হয়, এটা অসাধ্য কিছু নয়। অবশ্যই কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।”

“যে কোনো কাজই সহজ হলে সেটি অর্জন করলে মজা থাকে না। কঠিনটাই অর্জন করতে চাই আমরা। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের যথেষ্ট সামর্থ্য আছে বিশ্বকাপে নক আউট পর্বে যাওয়ার। আর নক আউট পর্বে গেলে, যে কোনো কিছুই হতে পারে।”