অসাধারণ ইনিংসে আবারও আবাহনীর নায়ক জহুরুল

ম্যাচ তখন শেষ দিকে। স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে চোট পেলেন জহুরুল ইসলাম। উইকেটে পড়ে থাকলেন বেশ কিছুক্ষণ। তবে ঠিকই উঠে দাঁড়ালেন পরে। দলকে জিতিয়ে তবেই মাঠ ছাড়লেন। এবারের লিগ বা এই ম্যাচ, এই ঘটনাকে বলা যায় দুটিরই প্রতীকী। ম্যাচের পর ম্যাচ আবাহনীকে টানছেন জহুরুল। উদ্ধার করছেন খাদের কিনারা থেকে। এই ম্যাচেও পরাজয়ের শঙ্কায় থাকা দলকে জেতালেন অসাধারণ ইনিংস খেলে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2019, 12:42 PM
Updated : 4 April 2019, 12:43 PM

শুরুর ধাক্কা সামাল, ভরসা হয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়া, শেষের বৈতরণী পার করা, জহুরুল এ দিন করেছেন সবই। লড়াইয়ে সঙ্গী পেয়েছেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনকে। দুজনের সৌজন্যে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের বড় ম্যাচে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে আবাহনী লিমিটেড।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার প্রাইম দোলেশ্বরকে ২২৪ রানে আটকে রাখে। তবে রান তাড়া সহজ হয়নি আবাহনীর। ওপেন করতে নেমে ৯১ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে ৭ বল আগে জয় এনে দেন জহুরুল।

তারকায় ঠাসা দল হলেও আবাহনীর হয়ে এবার সবচেয়ে উজ্জ্ল জহুরুল, তারকা তকমা যার পাশে সেভাবে কখনোই বসেনি। শুধু দলের হয়ে নয়, এখনও পর্যন্ত লিগের সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। এই ইনিংসের পথেই এবারের আসরের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে স্পর্শ করেছেন পাঁচশ রান। ৮ ইনিংস খেলে ৮৭ গড়ে করেছেন ৫২২ রান।

পরিসংখ্যান যেমন বলছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে জহুরুলের ইনিংসগুলোর মূল্য আরও বেশি। এই ম্যাচও সেটির প্রমাণ। উইকেট ছিল ঘাসে ভরা। ২২৫ রানের লক্ষ্য তবু খুব কঠিন হওয়ার কথা ছিল না আবাহনীর শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের জন্য। কিন্তু শুরুতেই তাদের কাঁপিয়ে দিল আবু জায়েদ চৌধুরী ও ফরহাদ রেজার সুইং বোলিং।

ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্তকে ফেরান আবু জায়েদ। প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ভারতীয় ব্যাটসম্যান প্রিয়াঙ্ক কিরিত পাঞ্চাল ব্যাটে-বলে করতেই ধুঁকছিলেন। ১০ বলেও খুলতে পারেননি রানের খাতা, বোল্ড হয়ে যান ফরহাদ রেজার বলে।

৬ ওভার শেষে আবাহনীর রান তখন ২৩।

জহুরুলের ব্যাটে কোনো অস্বস্তি ছিল না। তাকে সঙ্গ দেন চোট কাটিয়ে ফেরা মোহাম্মদ মিঠুন। চতুর্থ উইকেটে ৬৩ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরে আবাহনী।

৩ চার ও ২ ছক্কায় ৪০ রান করে আউট হয়ে যান মিঠুন। পাঁচে নেমে আম্পায়ারের সংশয়পূর্ণ সিদ্ধান্তে আউট হন ২০ বলে ২৪ রান করা সাব্বির রহমান। অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন পারেননি থিতু হতে। ১৩৫ রানে ৬ উইকেট হারানো আবাহনীকে ডাকছিল পরাজয়।

সেখান থেকেই লড়াই করে দলকে জয় এনে দেন জহুরুল ও সাইফ উদ্দিন। প্রচণ্ড চাপেও হাল না ছেড়ে দুজনে গড়েন ৯২ রানের অবিচ্ছিন্ন ম্যাচ জেতানো জুটি।

১০ চারে ১২৭ বলে ৯১ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ সেরা জহুরুল। লিগের তৃতীয় ফিফটিতে সাইফ অপরাজিত ৬৯ বলে ৫৫ রানে।

সাইফ এর আগে বল হাতেও ছিলেন সফল। সকালে টস জিতে বোলিং নেওয়া আবাহনীকে এনে দেন প্রথম ব্রেক থ্রু। প্রাইম দোলেশ্বরের আরেক ওপেনার সাইফ হাসানকে ফেরান মাশরাফি বিন মুর্তজা।

দোলেশ্বরের পরের পাঁচ ব্যাটসম্যানই ছাড়িয়েছেন ২০। কিন্তু একজনও যেতে পারেননি পঞ্চাশ পর্যন্ত। সহায়ক উইকেটে দারুণ বোলিংয়ে দোলেশ্বেরের মিডল অর্ডারকে ভোগান সৌম্য সরকার।

সর্বোচ্চ ৪৭ রান করা ফরহাদ হোসেন, ৪০ রান করা মার্শাল আইয়ুব, ৪১ রান করে শেষ দিকে দলকে টেনে নেওয়া তাইবুর রহমান, সবাইকে ফেরান সৌম্য। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পান চার উইকেটের দেখা।

বোলিংয়ের সাফল্য পরে ব্যাটিংয়ে ধরে রাখতে পারেননি সৌম্য। কিন্তু জহুরুল ছিলেন, তাই এ যাত্রায়ও রক্ষা পেল আবাহনী।

৯ ম্যাচে ৮ জয়ে আবাহনী ধরে রাখল শীর্ষস্থান। সমান ম্যাচে দোলেশ্বরের জয় ৬টি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

প্রাইম দোলেশ্বর: ৫০ ওভারে ২২৪/৯ (ইমরান ২, সাইফ ১২, ফরহাদ হোসেন ৪৭, সৈকত ২৩, মার্শাল ৪০, সাদ ৩৪, তাইবুর ৪১, ফরহাদ রেজা ৭, মানিক ৮, আরাফাত সানি ১*; সাইফ উদ্দিন ১০-২-৪৩-১, মাশরাফি ১০-০-৪৮-২, সানজামুল ৮-০-৪৪-০, সৌম্য ১০-০-৩৪-৪, মিরাজ ১০-১-৪২-১, সাব্বির ২-০-১০-১)।

আবাহনী: ৪৮.৫ ওভারে ২২৭/৬ (জহুরুল ৯১*, সৌম্য ১০, শান্ত ০, প্রিয়াঙ্ক ০, মিঠুন ৪০, সাব্বির ২৪, মোসাদ্দেক ২, সাইফ উদ্দিন ৫৫*; আবু জায়েদ ৯.৫-১-৪৭-২, ফরহাদ রেজা ৯-২-৩৭-১, মানিক ৭.২-০-৪৭-১, সৈকত ৪.৪-০-১৫-০, সাদ ৮-০-৪৪-১, আরাফাত সানি ১০-০-৩৬-১)।

ফল: আবাহনী লিমিটেড ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: জহুরুল ইসলাম