রোমাঞ্চকর ম্যাচে ব্যাটে-বলে নায়ক ফরহাদ

আগের রাতের ঝড় উড়িয়ে নিয়েছিল কাভার, পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্থ উইকেট। ম্যাচ নেমে এলো ২৬ ওভারে। ঝড়ের চিহ্ন রেখে যাওয়া উইকেটে এরপর শুরু হলো ব্যাটিং ঝড়। দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই মেতে উঠলেন রান উৎসবে। রোমাঞ্চ ছড়াল ম্যাচ। বেশ কজন পারফরমারের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ভাগ্য গড়ে দিলেন ফরহাদ রেজা। অনেক দোলাচলের ম্যাচে দোলেশ্বর জিতল শেষ বলে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2019, 12:42 PM
Updated : 1 April 2019, 06:31 PM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবকে ১ রানে হারিয়েছে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব।

লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়ে ফরহাদ খেলেছেন ২০ বলে ৫৬ রানের ইনিংস। প্রাইম দোলেশ্বর অধিনায়ক এরপর বল হাতে ৩ উইকেটসহ শেষ ওভারে বোলিং করে জিতিয়েছেন দলকে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার ২৬ ওভারে ৬ উইকেটে ২৩৯ রান তোলে প্রাইম দোলেশ্বর। শেখ জামাল থমকে যায় কাছে গিয়েও।

শেষ ৩ ওভারে যখন শেখ জামালের প্রয়োজন ২৮ রান, শেষ স্পেল বোলিংয়ে এসে ফরহাদ একটি উইকেট নিয়ে ওভারে রান দেন কেবল ৩। পরের ওভারে আবু জায়েদের বোলিংয়ে আসে ১৪ রান। 

শেষ ওভারে প্রয়োজন হয় ১১ রান। প্রথম বলে রান দেননি ফরহাদ। পরের বলে ফুল টসে চার মারেন তানবীর হায়দার। পরের বলে আবার হয়নি রান। চতুর্থ বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট তানবীর। পঞ্চম বলে আসে সিঙ্গেল।

শেষ বলে দরকার ছিল ছয়। ফরহাদের বলটি ছিল স্টাম্পের বাইরে ফুলটস। শেখ জামালের শেষ ব্যাটসম্যান খালেদ আহমেদের ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় বাউন্ডারিতে। প্রাইম দোলেশ্বর জেতে ১ রানে।

শেষ বলটিতে অবশ্য ‘নো বল’ হয়েছে বলে আম্পায়ারদের কাছে দাবি জানান শেখ জামালের দুই ব্যাটসম্যান। তবে আম্পায়ারদের চোখে বলটি ছিল বৈধ। নিজেদের সন্তুষ্টির জন্য ম্যাচ শেষে বলটির ভিডিও দেখেন আম্পায়ার মাসুদুর রহমান ও মাহফুজুর রহমান। ভিডিও দেখেও তারা জানান, সিদ্ধান্ত ঠিকই ছিল।

বৃষ্টিভেজা উইকেটের কারণে ম্যাচটি শুরু হতেই বেজে যায় বেলা সোয়া ১টা। ম্যাচের উইকেটের এক প্রান্তসহ আশপাশের উইকেটও ছিল ভেজা। তবে যে উইকেটে খেলা হলো, ব্যাটিংয়ের জন্য সেটি ছিল দারুণ।

সাইফ হাসান ও ইমরান উজ জামান দোলেশ্বেরকে এনে দেয় দুর্দান্ত শুরু। উদ্বোধনী জুটিতে ৭৫ বলে ৯৭ রানের জুটি গড়েন দুজন। মূলত ইমরানের সৌজন্যেই রানের গতি ছিল ভালো।

৪০ বলে ৩৬ করে সাইফের আউটে ভাঙে জুটি। তিনে নেমে সাদ নাসিম ধরে রাখেন রানের গতি।

এই পর্যায়ের ক্রিকেটে মাত্র তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে ইমরান খেলেন ৫৪ বলে ৭৫ রানের ইনিংস, ৬ চারের সঙ্গে যাতে ছক্কা ছিল চারটি।

ইমরানের বিদায়ের পর ১৮ ওভার শেষে উইকেটে যান ফরহাদ। শুরু হয় তাণ্ডব। বিশাল সব ছক্কায় বাড়াতে থাকেন রান। তাইজুল ইসলামকে টানা তিন ছক্কায় ছাড়িয়ে যান ফিফটি।

১৮ বলে ফরহাদ স্পর্শ করেন ফিফটি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে যা বাংলাদেশের কারও দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড, পেছনে পড়ে যায় ২০০৭ সালে নাজমুল হোসেন মিলনের ১৯ বলের ফিফটি।

৬ ছক্কায় ৫৬ রানে ফেরেন ফরহাদ। পাকিস্তানি সাদ করেন ৩৬ বলে ৫১। শেষ ৪ ওভারে দোলেশ্বর তোলে ৬৩ রান!

বড় রান তাড়ায় শেখ জামাল দ্রুত হারায় ফারদিন হাসান ও নাসির হোসেনকে। তবে ইমতিয়াজ হোসেনের ২২ বলে ৩৪ রান দলের ইনিংসে এনে দেয় গতি।

সেই গতি আরও বাড়ে মিডল অর্ডারে। অনুষ্টুপ মজুদমদার এগিয়ে যান বলপ্রতি রান করে, নুরুল হাসান সোহান ও জিয়াউর রহমান মেটান পরিস্থিতির দাবি।

এখানেও দোলেশ্বরের ত্রাতা ফরহাদ। ফিরিয়ে দেন ২০ বলে ৩৭ রান করা সোহানকে। ৪২ বলে ৪৪ করে বিদায় নেন ভারতীয় অনুষ্টুপ।

শেখ জামালকে এরপর আশা দেখান জিয়াউর। বিশাল সব ছক্কায় জমিয়ে তোলেন ম্যাচ। তবে কাজ শেষ করতে পারেননি। আউট হয়ে যান চারটি করে চার ও ছক্কায় ২১ বলে ৪৬ করে।

তানবীর হায়দার চেষ্টা করে গেছেন এরপরও। কিন্তু ফরহাদের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। ব্যাটিংয়ের শেষ ভাগের মতো বোলিংয়েও শেষ সময়ে পার্থক্য গড়ে দেন ফরহাদ।

৮ ম্যাচে ষষ্ঠ জয়ে দোলেশ্বর আরেক ধাপ এগিয়েছে সুপার সিক্সের দিকে। সমান ম্যাচে চারটি করে জয়-হারে অনিশ্চয়তায় শেখ জামাল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

প্রাইম দোলেশ্বর: ২৬ ওভারে ২৩৯/৬ (ইমরান ৭৫, সাইফ ৩৬, সাদ ৫১, ফরহাদ ৫৬, আরাফাত সানি জুনি. ২*, সৈকত ১, মাহমুদুল ৪; খালেদ ৫-০-৬৫-০, তাইজুল ৬-০-৫০-১, সাকিল ৬-০-৪০-৩, ইলিয়াস সানি ৪-০-৩৩-১, জিয়াউর ৫-০-৩০-১, তানবীর ১-০-১৪-০)।

শেখ জামাল: ২৬ ওভারে ২৩৮/৯ (ফারদিন ৫, ইমতিয়াজ ৩৪, নাসির ৯, অনুষ্টুপ ৪৪, সোহান ৩৭, জিয়াউর ৪৬, তানবীর ৩৬, ইলিয়াস সানি ৬, তাইজুল ১, সাকিল ৬*, খালেদ ৪*; আরাফাত সানি ৫-০-৪৯-০, আবু জায়েদ ৫-০-৪৮-৩, ফরহাদ ৬-০-৩৫-৩, সৈকত ৩-০-৫৬-০, সাদ ৫-০-২৯-১, আরাফাত জুনি. ২-০-২১-২)।

ফল: প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব ১ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ফরহাদ রেজা