সাইফ-মাশরাফিদের পারফরম্যান্সে বিফলে ইয়াসিরের সেঞ্চুরি

বিপর্যয়ে দাঁড়িয়ে দলকে টানলেন। নিভতে বসা আশার প্রদীপ উজ্জ্বল করে তুললেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্রাদার্সকে জয়ের আলোয় ছোঁয়া এনে দিতে পারলেন না ইয়াসির আলি চৌধুরী। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ও মাশরাফি বিন মুর্তজার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স জয় এনে দিল আবাহনীকে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2019, 12:14 PM
Updated : 14 March 2019, 12:14 PM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ১৪ রানে হারিয়েছে আবাহনী লিমিটেড। বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা এই নিয়ে জিতল তিন ম্যাচের সবকটি।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৩৬ রান তোলে আবাহনী। রান তাড়ায় ইয়াসির খেলছেন প্রায় ৯৫ স্ট্রাইক রেটে অপরাজিত ১০৬ রানের ইনিংস। অন্যদের ব্যর্থতায় ব্রাদার্স তার পরও থমকে যায় ২২২ রানে।

ইনিংসের শুরু থেকে ধুঁকতে থাকা আবাহনী লড়ার মতো রান পায় শেষ দিকে সাইফ ও মাশরাফির জুটিতে। ৪৫ বলে ৫৯ রান করে অপরাজিত থাকেন সাইফ, এবারের লিগে প্রথম খেলতে নেমে মাশরাফি ১৫ বলে ২৬। পরে ছোট রান আপে বোলিং করে মাশরাফি নিয়েছেন ২ উইকেট। সাইফের উইকেট ১টি।

টস জিতে বোলিংয়ে নেমে ব্রাদার্স যথেষ্ট ভুগিয়েছে আবাহনীর টপ অর্ডারকে। ওপেনার জাহিদ জাভেদ ফেরেন ১ রানে। আঙুলে চোট পেয়ে বাইরে চলে আসা জহুরুল ইসলাম আবার ব্যাটিংয়ে ফিরেও আউট হয়েছেন ১৪ রানে।

আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থ শ্রীলঙ্কান ওপেনার কৌশল সিলভার বদলে এই ম্যাচে আবাহনী খেলিয়েছে ওয়াসিম জাফরকে। কিন্তু অভিজ্ঞ এই ভারতীয় ব্যাটসম্যানও দলকে চাপে ফেলেছেন ২৬ বলে ৮ রান করে।

নাজমুল হোসেন শান্ত ও মোসাদ্দেক হোসেন চেষ্টা করেন দলকে উদ্ধারের। মন্থর গতিতে হলেও গড়ে তোলেন জুটি। তবে দুজনের কেউই পারেননি ইনিংসকে পূর্নতা দিতে। ৭২ বলে ৪৪ রান করে আউট হন শান্ত। সময়ের দাবি মেটাতে পারেননি সাব্বির রহমান। এক প্রান্তে পড়ে থাকা মোসাদ্দেক পারছিলেন না ইনিংসতে গতি দিতে। সাইফ নামার পর বাড়ে রানের গতি।

৯৫ বলে ৫৪ করে মোসাদ্দেক যখন আউট হলেন, আবাহনীর দুইশ নিয়েই টানাটানি। সাইফ ও মাশরাফি বদলে দেন চিত্র।

মোহাম্মদ শরীফের বিমারে ছক্কা মারেন মাশরাফি, এক বল পর চার মারেন ইনসাইড আউট শটে। মেহেদি হাসানের টানা তিন বলে বাউন্ডারি আসে সাইফের ব্যাটে। শরীফকে মাথার ওপর দিয় উড়িয়ে ইনিংস শেষ করেন সাইফ। দুজনের জুটিতে শেষ ৫.২ ওভারে আসে ৬২ রান।

ব্যাটিংয়ের শেষটা দারুণ করার পর বোলিংয়ের শুরুতেও জ্বলে ওঠেন এই দুজন। মাশরাফির থ্রোতে মিজানুর রহমানের আউটে ব্রাদার্স হারায় প্রথম উইকেট। পরে অভিজ্ঞ জুনায়েদ সিদ্দিককে ফেরান বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। সাইফ ফিরিয়ে দেন তিনে নামা হামিদুল ইসলামকে।

নতুন বলে রুবেল হোসেনের দুর্দান্ত স্পেলও চাপে ফেলে দেয় ব্রাদার্সকে। প্রথম স্পেলে রুবেলের বোলিং ফিগার ছিল ৫-৩-২-০!

ত্রয়োদশ ওভারে ৩২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর উইকেটে যান ইয়াসির। শুরু হয় লড়াই। স্রোতের প্রতিকূলে এগিয়ে নেন দলকে। উইকেট ধরে রাখার পাশাপাশি সুযোগ পেলেই বলতে পাঠিয়েছেন বাউন্ডারিতে।

তবে লম্বা সময় ইয়াসিরকে ভরসা দিতে পারেননি কোনো সতীর্থ। তার কাজ তাই হয়ে উঠেছে কঠিন। একটির পর একটি জুটিতে সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতেই আবার হারাতে হয়েছে উইকেট।

শেষ দিকে রান-বলের টানাপোড়েন যখন বাড়ছে, আবারও মাশরাফি ও সাইফ করেছেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং। ছোট রান আপে প্রথম স্পেলে লাইন-লেংথ ধরে রেখে বল করেছেন মাশরাফি। শেষ দিকে আবার দারুণ কিছু বাউন্সার ও ওয়াইড ইয়র্কারে চমকে দিয়েছেন ব্রাদার্সের ব্যাটসম্যানদের।

সব কিছু সামলে ইয়াসির চেষ্টা করে গেছেন সাধ্যমত। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার আগের সর্বোচ্চ ছিল বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ১০২। এবার ৮ চার ও ২ ছক্কায় সেটিকে ছাড়িয়ে করেছেন ১১২ বলে ১০৬।

তবে খেলাটা তো শেষ পর্যন্ত দলীয়। আবাহনীর সম্মিলিত পারফরম্যান্সের সঙ্গে তাই পেরে ওঠেনি ইয়াসিরের একার প্রচেষ্টা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

আবাহনী : ৫০ ওভারে ২৩৬/৬ (জহুরুল ১৪, জাভেদ ১, জাফর ৮, শান্ত ৪৪, মোসাদ্দেক ৫৪, সাব্বির ১৩, সাইফ ৫৯*, মাশরাফি ২৬*; শরিফ ৯-১-৫৮-০, মেহেদি ১০-০-৫৮-২, চিরাগ ৭-০-২৮-১, নাঈম জুনিয়র ৮-০-২৮-২, শরিফউল্লাহ ১০-২-৩০-১, সাখাওয়াত ৬-০-৩১-০)।

ব্রাদার্স : ৫০ ওভারে ২২২/৮ (মিজানুর ৭, জুনায়েদ ১৭, হামিদুল ০, চিরাগ ১৫, ইয়াসির ১০৬*, ফজলে রাব্বি ১৩, শরিফউল্লাহ ২১, শরিফ ১৭, নাঈম জুনিয়র ১০, মেহেদি ১*; রুবেল ৯-৩-২৬-০, মাশরাফি ৮-০-৩৯-২, সাইফ ১০-১-৫৪-১, মোসাদ্দেক ৮-০-২৮-০, সানজামুল ৬-০-২৬-১, আরিফুল ৪-০-২৭-০, সাব্বির ৫-০-২১-২)।

ফল: আবাহনী লিমিটেড ১৪ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন