শেষ দিনে এক সেশনেই শেষ বাংলাদেশ

নিল ওয়েগনারের শর্ট বলে নাকি কিছু করার থাকে না। প্রথম ইনিংস শেষে বলেছিলেন লিটন দাস। কিন্তু যা মোটেও করা উচিত নয়, লিটন, মিঠুনরা করতে চাইলেন সেটিই। চ্যালেঞ্জ যেদিন উইকেটে পড়ে থাকার, তারা বেছে নিলেন ঝুঁকির পথ। খেসারত দিল দল। শর্ট বলের তোপে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ শেষ দিনে অলআউট হয়ে গেল প্রথম সেশনেই।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2019, 00:44 AM
Updated : 12 March 2019, 09:58 AM

ওয়েলিংটন টেস্টে বাংলাদেশকে ইনিংস ও ১২ রানে হারিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর দলটি নিশ্চিত করেছে সিরিজ জয়ও। তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে ২-০তে।

সারা দিন টিকে থাকার লড়াইয়ে শেষ দিন শুরু করা বাংলাদেশ ভেঙে পড়েছে নিল ওয়েগনার ও ট্রেন্ট বোল্টের বোলিংয়ে। গুটিয়ে গেছে ২০৯ রানেই।

ইনিংসের একমাত্র ফিফটি এসেছে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। ফিফটি জুটিও ছিল কেবল একটিই।

চোটের কারণে এ দিন মাঠে নামেননি অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন, নেতৃত্ব দেন টিম সাউদি। নিউ জিল্যান্ডের তাতে খুব সমস্যা হয়নি।

ম্যাচের প্রথম দুই দিন ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। পরের তিন দিনে ম্যাচ শেষ হতে লাগল ২০১.৫ ওভার। বাংলাদেশ তাই কার্যত হেরেছে স্রেফ দুই দিনের একটু বেশি সময়ে।

দিনের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার ও মিঠুন প্রথম ৪০ মিনিট কাটিয়ে দেন নিরাপদে। দারুণ কয়েকটি শটও খেলেন দুজন।

আশার যে রথ ছুটতে শুরু করেছিল, সেটি থামিয়ে দেন বোল্ট। অফ স্টাম্প ঘেষা বাড়তি লাফানো ডেলিভারিতে শরীর থেকে দূরে খেলে স্লিপে ক্যাচ দেন সৌম্য। ৫৭ রানের জুটির সমাপ্তি।

মিঠুনের ব্যাটে লড়াইয়ের একটু প্রত্যয় দেখা যাচ্ছিল। শর্ট বল সামলানোর জন্য নিজের সহজাত স্টান্সে বদল এনে খেলছিলেন। বিশেষ করে ওয়েগনারের বোলিংয়ে তার ব্যাটিং স্টান্সে সামনের পা ছিল প্রায় মিড উইকেটমুখী।

কিন্তু সেই লড়াইয়ের বাঁধ ভাঙল শর্ট বলের স্রোতেই। ৪৭ রানের লড়াকু ইনিংসটি শেষ হলো হতাশাজনক শটে। একের পর এক শর্ট বল করছিলেন ওয়েগনার। একটিতে চালিয়ে দিলেন মিঠুন। ধরা পড়লেন ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে সাউদির হাতে।

লিটনের আউট ছিল আরও বাজে শটে। ওয়েগনারের আগের বলেই পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে অল্পের জন্য আউট হননি মাহমুদউল্লাহ। সেটি দেখেও পরের বলে শর্ট বলে পুল করলেন লিটন। আউট হলেন দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ের আরেকটি উদাহরণ রেখে।

এরপর ছিল কেবল শেষের অপেক্ষা। ওয়েগনারের আরেকটি শর্ট বল ফিরিয়েছে তাইজুলকে। মুস্তাফিজুর রহমান এসেই চাবুকের মতো ব্যাট চালাতে থাকেন। তাতে দুটি ছক্কা পেয়েছেন, অক্কাও পেয়েছেন দ্রুত।

মাহমুদউল্লাহ শুরুতে চেষ্টা করেছেন উইকেট আঁকড়ে রাখতে। একের পর এক সঙ্গীকে হারানোর পর তিনিও বাধ্য হন আগ্রাসনের পথ নিতে। তাতে দারুণ কিছু শট খেলেছেন, আবার ব্যাটের কানায় লেগে ভাগ্যের ছোঁয়ায় বেঁচেছেন। শেষ পর্যন্ত ওয়েগনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শেষ হয়ে ১২ চার ও ১ ছক্কায় ৬৯ বলে ৬৭ রানের ইনিংস।

লাঞ্চের নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ উইকেট হারিয়েছিল ৮টি। সময় বাড়ানো হলো ১৫ মিনিট। লাগল না আর ৫ মিনিটও। এক ওভারে দুটি উইকেট নিয়ে ম্যাচ শেষ করে দিলেন ওয়েগনার।

ইনিংসে ৫ আর ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে শেষ করলেন ওয়েগনার। ইনিংসে ৪টিসহ ম্যাচে বোল্টের শিকার ৭টি। যদিও ডাবল সেঞ্চুরি করে ম্যাচের সেরা রস টেইলর।

বাংলাদেশ দলের সঙ্গী কেবলই হতাশা। প্রকৃতি সুযোগ করে দিয়েছিল অন্তত ড্র করার। কিন্তু যে দলের খেলার ধরনেই হারের সুর, তাদের বাঁচাবে কে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২১১

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৪৩২/৬ (ইনিংস ঘোষণা)

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৫৬ ওভারে ২০৯ (আগের দিন ৮০/৩) (মিঠুন ৪৭, সৌম্য ২৮, মাহমুদউল্লাহ ৬৭, লিটন ১, তাইজুল ০, মুস্তাফিজ ১৬, আবু জায়েদ ০*, ইবাদত ০; বোল্ট ১৬-৫-৫২-৪, সাউদি ১২-১-৫৭-০, হেনরি ৯-৩-৪০-১, ডি গ্র্যান্ডহোম ৫-০-১১-০, ওয়েগনার ১৪-৪-৪৫-৫)।

ফল: নিউ জিল্যান্ড ইনিংস ও ১২ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ২-০তে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: রস টেইলর