জিয়ার ছক্কার ঝড়ে ফাইনালে শেখ জামাল

এই মাঠে ১৫ ছক্কায় দেড়শ রানের বিস্ফোরক ইনিংস আছে তার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। ঘরোয়া ক্রিকেটের কত ম্যাচে ছক্কার মালা সাজিয়েছেন কতবার! অনেকদিন পর আবার সেই দিনগুলোকে মনে করিয়ে দিলেন জিয়াউর রহমান। বিশাল সব ছক্কায় সাজানো টর্নোডো ইনিংস খেলে শেখ জামালকে তুললেন ফাইনালে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2019, 12:08 PM
Updated : 1 March 2019, 12:08 PM

ম্যাচ জেতানো জুটিতে জিয়াকে দারুণ সঙ্গ দিলেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো জয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির ফাইনালে উঠল শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব। প্রথম সেমি-ফাইনালে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব হারল ৫ উইকেটে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার ২০ ওভারে ১৮১ রান তুলেছিল শাইনপুকুর। তাদের বোলাররা পরে কোণঠাসা করে ফেলেছিল শেখ জামালকে। কিন্তু জিয়ার ব্যাটিং তাণ্ডব ও সোহানের সঙ্গে জুটিতে ধরা দেয় স্মরণীয় জয়।

দুজন যখন জুটি বেধেছিলেন, জয়ের জন্য তখন ১১ ওভারে শেখ জামালের প্রয়োজন ১১৭ রান। অবিশ্বাস্য এক জুটিতে চোখধাঁধানো সব শটের প্রদর্শনীতে দুজন ম্যাচ শেষ করে দেন ১৪ বল বাকি রেখেই!

৭ ছক্কায় ২৯ বলে ৭২ রানে অপরাজিত জিয়া। সোহান অপরাজিত ৩১ বলে ৪৩ রানে। দুজনের ১১৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি এসেছে মাত্র ৫২ বলে। ষষ্ঠ উইকেটে যা অনায়াসেই বাংলাদেশের রেকর্ড।

বড় রান তাড়ায় শেখ জামালের ওপেনার ফারদিন হোসেন করেন ১৭ বলে ২২। অন্যরাও শুরুটা করেছেন ভালো। তবে কেউ টিকতে পারেননি। নিয়মিত উইকেট হারিয়ে ৯ ওভার শেষে দলের রান ছিল ৫ উইকেটে ৬৫।

সেখান থেকেই জিয়া ও সোহানের জুটি। জিয়া শট খেলেছেন শুরু থেকেই। এমনিতে উইকেটে বরাবরই বেশ ছটফটে থাকলেও সোহান পরিস্থিতি বুঝে দিয়ে গেছেন সঙ্গ। জিয়ার ব্যাটিংয়ে  জয় নাগালে আসার পর শেষটা সোহানের হাতেই। পেসার হামিদুল ইসলামকে স্লগ করে ছক্কায় দলকে নিয়ে গেছেন জয়ের ঠিকানায়।

এমন রানের জোয়ারের ম্যাচে শুরু ছিল মেডেন উইকেটে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে শাইনপুকুর। শেখ জামালের বাঁহাতি পেসার সালাউদ্দিন সাকিলের করা প্রথম ওভারের ৫ বলে রান নিতে পারেননি মোহাম্মদ রাকিব। শেষ বলে ক্যাচ তুলে দেন কাভারে।

আফিফ উইকেটে গিয়েই দুটি চার মারেন নাসির হোসেনকে। দারুণ কিছু শটে বাউন্ডারি পান পরের ওভারগুলোয়। সুযোগও দিয়েছেন এর ফাঁকে। ৮ রানে উইকেটের পেছনে ডাইভ দিয়েও ক্যাচ নিতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান।

আরেক প্রান্তে সাব্বিরের ব্যাট তখনও ছিল শান্ত। প্রথম ৭ ওভারেও পাননি বাউন্ডারির দেখা, রান ছিল তার কেবল ১৩।

নাসিরকে ছক্কা মেরেই সাব্বিরের ঝড়ের শুরু। ওই ওভারে ছক্কা আসে আফিফের ব্যাটেও। এরপর দুজনই খেলতে থাকেন দারুণ সব শট।

জুটি ভাঙতে আক্রমণে ফেরানো হয় সাকিল। বাঁহাতি পেসার সফলও হন। তবে তার আগে তাকেও খানিকটা তুলোধুনো করে আফিফ। জায়গা বানিয়ে পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছক্কার পর বাউন্ডারি মারেন টানা দুই বলে।

পরের বলে আবার জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন আফিফ। ৬৫ রানের ইনিংসে চার ৭টি, ছক্কা ৩টি। ভাঙে ১১৩ রানের জুটি।

পরের ওভারে ফেরেন সাব্বিরও। প্রথম ফিফটির সুবাস পেয়েও হারান ইলিয়াস সানির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। ৩ ছক্কায় ৩২ বলে করেছেন ৪৭।

দারুণ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে এরপর ঝড় তোলেন ফর্মে থাকা শুভাগত হোম ও তৌহিদ হৃদয়। শেখ জামালের বাজে বোলিংকে কাজে লাগান দুজনই। জিয়ার টানা দুই ফুলটসে দুটি ছক্কা মারেন শুভাগত।

১৯তম ওভারে পরপর দুই বলে দুজনকে থামান শহিদুল ইসলাম। ১৭ বলে ৩১ করে আউট হন শুভাগত, ১৭ বলে ২৪ হৃদয়। শেষ ওভারে সাকিলও নেন দুটি উইকেট। শেষ করেন ৪ উইকেট নিয়ে।

শেষ দুই ওভারে প্রত্যাশিত রান পায়নি শাইনপুকুর। তার পরও লক্ষ্য ছিল বেশ বড়। একটা সময় ফাইনালের দুয়ারেও পৌঁছে গিয়েছিল তারা। কিন্তু অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ে ফাইনালের দুয়ার শেখ জামালের জন্যই খুলে দিলেন জিয়া।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শাইনপুকুর: ২০ ওভারে ১৮১/৭ (রাকিব ০, সাব্বির ৪৭, আফিফ ৬৫, হৃদয় ২৪, শুভাগত ৩১, দেলোয়ার ০, ধীমান ৬, শুভ ১*; সাকিল ৪-১-২৮-৪, নাসির ২-০-২৪-০, শহিদুল ৪-০-২৫-২, জিয়াউর ২-০-৩১-০, সানি ৩-০-২৭-১, তানবীর ১-০-১১-০)।

শেখ জামাল: ১৭.৪ ওভারে ১৮২/৫ (ইমতিয়াজ ১১, ফারদিন ২২, হাসানুজ্জামান ১৩, নাসির ১৬, সোহান ৪৩*, তানবীর ০, জিয়াউর ৭২*; শরিফুল ৩-০-৩৭-০, শুভাগত ১-০-১৩-০, হামিদুল ৩.৪-০-৩৭-০, শুভ ৩-০-৩১-২, টিপু ৩-০-২৩-১, দেলোয়ার ৪-০-৪১-১)।

ফল: শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব ৫ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: জিয়াউর রহমান