হৃদয়-শুভাগতর ব্যাটিং তাণ্ডবে সেমিতে শাইনপুকুর

ইনিংস চলছিল ধীরলয়ে। দেড়শকে মনে হচ্ছিল অনেক দূরের পথ। শেষের ওভারগুলোয় ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল চিত্র। তৌহিদ হৃদয় ও শুভাগত হোমের ব্যাটিং তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল মোহামেডানের বোলিং আক্রমণ। শাইনপুকুরের স্কোর পৌঁছে গেল দুইশর কাছে। মোহামেডান পারেনি সেই স্কোরের জবাব দিতে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2019, 11:04 AM
Updated : 26 Feb 2019, 12:27 PM

৪১ বলে ৬৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন হৃদয়। দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়ে শুভাগত করেছেন ১৮ বলে অপরাজিত ৫৮। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ২২ রানে হারিয়েছে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব।

আগের দিন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকেও হারিয়েছিল শাইনপুকুর। ‘সি’ গ্রুপে টানা দুই জয়ে সবার আগে টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করল দলটি।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ২০ ওভারে শাইনপুকুর ১৯২ রান তোলে শাইনপুকুর। মোহামেডান করতে পারে ১৭০ রান।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শাইনপুকুর দুই ওপেনারকে হারায় তিন ওভারের মধ্যেই। তিনে নামা আফিফ হোসেনের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। ২১ বলে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান করেছেন ২৫ রান।

হৃদয় শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল। পাঁচে নামা মোহাম্মদ রাকিবের সঙ্গে গড়েন ৪৮ রানের জুটি। তবে ২২ রান করতে ২৭ বল খেলে ফেলেন রাকিব। শাইনপুকুরের রানের গতি তাই ছিল না খুব বেশি। ১৫ ওভার শেষে রান ছিল ১০৫।

১৬তম ওভারে রাকিব আউট হওয়ার পর উইকেটে যান শুভাগত। ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেওয়া চিত্রনাট্য রচনার সেই শুরু। দুই পাশ থেকে শুভাগত ও হৃদয়ের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বল ফেলার জায়গাই যেন পাচ্ছিল না মোহামেডানের বোলাররা।

শেষ ৩ ওভারে রীতিমতো ধ্বংসলীলা চালান দুজন। ১৮তম ওভারে কাজী অনিকের এক ওভারে তিনটি ছক্কা মারেন শুভাগত। শেষ ওভারে বাঁহাতি পেসারকেই শুভাগত গুঁড়িয়ে দেন দুটি করে চার ও ছক্কায়। মাঝে আলাউদ্দিন বাবুর ওভারে জোড়া ছক্কা আসে হৃদয়ের ব্যাটে। শেষ ৩ ওভার থেকেই শাইনপুকুর তোলে ৬২ রান!

৪টি করে চার ও ছক্কায় ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। শুভাগত ফিফটি স্পর্শ করেন ১৬ বলে, টি-টোয়েন্টিতে যা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রুততম। আগের রেকর্ড ছিল মুমিনুল হকের ১৯ বলে ফিফটি।

শুভাগত ইনিংসে চার ছিল ৪টি, ছক্কা ৬টি। দুজনের ৮৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি আসে মাত্র ২৮ বলে!

মোহামেডানের রান তাড়ার সূচনায় ছিল জবাব দেওয়ার ইঙ্গিত। অভিষেক মিত্র ও আব্দুল মজিদ ৪ ওভারেই তোলেন ৪৫ রান।

১৪ বলে ১৯ করে অভিষেক আউট হওয়ার পর থেকেই পথ হারানোর শুরু। তিনে নেমে পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারেননি মোহাম্মদ আশরাফুল। বেশ কয়েকটি ডট বল খেলে বাড়িয়ে দেন চাপ। বাজে ফিল্ডিং থেকে একটি বাউন্ডারি পেলেও বাড়াতে পারেননি স্ট্রাইক রেট। শেষ পর্যন্ত পেসার দেলোয়ার হোসেনকে স্কুপ করতে গিয়ে আউট হয়েছেন ২০ বলে ২১ রান করে।

প্রয়োজনীয় রান রেট তখন ক্রমেই বাড়ছে। ২০ বলে ৩৩ রান করে ফেরেন মজিদ। মিডল অর্ডারে জ্বলে উঠতে পারেননি কেউ। মোহামেডান ছিটকে যায় লড়াই থেকে।

সাতে নেমে কিপার ব্যাটসম্যান ইরফান শুক্কুর ২৯ বলে ৫২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন। তবে তাতে কেবল পরাজয়ের ব্যবধান একটু ভদ্রস্থ হয়েছে।

আগের দিন ১০ বলে ৩২ রান করে ম্যাচ সেরা হওয়া শুভাগত আবার ম্যাচ সেরা হয়েছেন রেকর্ড গড়া ইনিংসে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শাইনপুকুর: ২০ ওভারে ১৯২/৪ (সাব্বির ১০, শুভ ২, আফিফ ২৫, হৃদয় ৬৬*, রাকিব ২২, শুভাগত ৫৮*; আলাউদ্দিন ৪-০-৪৫-১, অনিক ৪-০-৬২-১, সোহাগ ৪-০-২৮-০, নিহাদ ৪-০-৩২-১, সাকলাইন ৪-০-২৩-১)।

মোহামেডান: ২০ ওভারে ১৭০/৯ (অভিষেক ১৯, মজিদ ৩৩, আশরাফুল ২১, রকিবুল ১৬, নাদিফ ১, সোহাগ ১, ইরফান ৫২*, আলাউদ্দিন ১৩, নিহাদ ০, অনিক ০, সাকলাইন ৪*; শুভ ৩-০-১৭-২, সুজন ৪-০-৪০-২, হামিদুল ৪-০-৩৪-২, টিপু ২-০-১৭-০, দেলোয়ার ৪-০-৩২-১, শুভাগত ২-০-১৯-০, আফিফ ১-০-৭-১)।

ফল: শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ২২ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: শুভাগত হোম