বোল্টের সুইংয়ে ৯২ রানেই শেষ ভারত

বিরাট কোহলি বিশ্রামে। চোটের কারণে নেই মহেন্দ্র সিং ধোনি। তাই বলে এমন দুরবস্থা হবে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের! সত্যিটা হলো, যে কন্ডিশনে বল সুইং করে এবং সেখানে যদি ছন্দে থাকেন ট্রেন্ট বোল্ট, ভুগতে হয় বিশ্বের যে কোনো ব্যাটিং লাইনআপকেই। টানা ১০ ওভারে দুর্দান্ত স্পেলে বোল্ট ধসিয়ে দিলেন ভারতীয় ব্যাটিং। জিতল নিউ জিল্যান্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2019, 06:46 AM
Updated : 31 Jan 2019, 06:46 AM

ভারত সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল প্রথম তিন ওয়ানডেতেই। চতুর্থ ওয়ানডেতে এসে জয়ের দেখা পেল নিউ জিল্যান্ড। ভারতকে হারাল তারা ৮ উইকেটে।

হ্যামিল্টনে বৃহস্পতিবার বোল্ট নেন ২১ রানে ৫ উইকেট। ভারতের ইনিংস শেষ হয় ৯২ রানে। নিউ জিল্যান্ড জিতে যায় ১৪.৪ ওভারেই।

সিরিজের আগের ম্যাচগুলোতেও খুব খারাপ করেননি বোল্ট। তবে সুইং পাননি বলে ততটা কার্যকর ছিলেন না। হ্যামিল্টনে এ দিন গরম ছিল প্রচণ্ড, ছিল না বাতাস। উইকেটে ছিল ঘাসের ছোঁয়া। ম্যাচের আগে থেকেই আলোচনা ছিল, এখানে মিলবে সুইং। টস জিতে তাই বোলিং নিতে ভাবেননি কেন উইলিয়ামসন।

বোল্ট সুইং পেতে থাকেন শুরু থেকেই। তবে প্রথম উইকেট ধরা দেয় ম্যাচের ষষ্ঠ ও তার তৃতীয় ওভারে। দুর্দান্ত ইনসুইঙ্গারে এলবিডব্লিউ হন শিখর ধাওয়ান। বোল্টের পরে ওভারেই আরেকটি সু্ইঙ্গিং ডেলিভারিতে ফিরতি ক্যাচ দেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। নিজের ২০০তম ওয়ানডেতে ভারতের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক করেছেন ২৩ বলে ৭।

কোহলি ছিলেন না, তার জায়গায় তিনে নামেন প্রতিভাবান সুবমান গিল। ১৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান অভিষেকে কঠিন পরিস্থিতিতে খুব খারাপ টেকনিক দেখাননি শুরুতে। তবে বোল্টের সামনে চ্যালেঞ্জটা একটু বেশিই কঠিন ছিল। ৯ রান করে তিনিও দেন ফিরতি ক্যাচ।

বোল্টের নতুন বলের সঙ্গী ম্যাট হেনরি খুব সুবিধা করতে পারেননি। পরিবর্ত বোলার হিসেবে এসে দারুণ করেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। নিজের প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন আম্বাতি রায়ডু ও দিনেশ কার্তিককে। দুজনেই ফিরেছেন শূন্যতে।

প্রচণ্ড গরমে ৫ ওভারের স্পেলের পর বোল্টকে আরও বোলিং করানো নিয়ে সংশয়ে ছিলেন উইলিয়ামসন। খানিকটা আলোচনার পর বোল্টের হাতেই তুলে দেন বল। সেই ওভারে বাঁহাতি পেসার উইকেট এনে দেন আরও একটি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকানো নেই। গরমের কারণে ফিল্ডিংয়ের সময় গায়ে আইস জ্যাকেট চাপিয়েছেন, আর বল হাতে ঝরিয়েছেন আগুন।

ভেতরে ঢোকা দারুণ ডেলিভারিতে ফিরিয়েছেন কেদার যাদবকে। ৮ ওভার শেষে তার বোলিং ফিগার ছিল ৩ মেডেনসহ ৯ রানে ৩ উইকেট!

চাপের ভেতরই সহজাত আগ্রাসনের পথ বেছে নেন হার্দিক পান্ডিয়া। বোল্টের নবম ওভারে মারেন তিনটি বাউন্ডারি। বোল্ট অবশ্য প্রতিশোধ নেন নিজের শেষ ওভারে। দারুণ এক বাউন্সারে ফেরান হার্দিককে।

বোল্টের বোলিং ফিগার ১০-৪-২১-৫। পাঁচ উইকেট পেলেন পঞ্চমবার। ওয়ানডেতে বাঁহাতি বোলারদের মধ্যে তার চেয়ে বেশিবার পাঁচ উইকেট আছে কেবল আর ওয়াসিম আকরামের, ৬ বার।

২০ ওভার শেষে ভারতের রান তখন ৮ উইকেটে ৫৫। বোল্টের বোলিং শেষ হওয়ায় লড়াইয়ের সুযোগ কিছুটা মেলে। দুই স্পিনার কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চেহেল নবম উইকেটে যোগ করেন ২৫ রান।

১৫ রান করা কুলদীপকে ফেরান লেগ স্পিনার টড অ্যাস্টল। শেষ উইকেটে আসে আরও ১২ রান। দশে নেমে চেহেল করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ১৮ রান।

লোয়ার অর্ডারদের সৌজন্যেই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে আগের সর্বনিম্ন ৮৮ পেরিয়ে যায় ভারত। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ডি গ্র্যান্ডহোম নেন ২৬ রানে ৩ উইকেট।

নিউ জিল্যান্ডের রান তাড়ার শুরুটা ছিল পাগলাটে। ইনিংসের প্রথম বলেই ভুবনেশ্বর কুমারকে ছক্কা মারেন মার্টিন গাপটিল। পরের দুই বলেও আসে বাউন্ডারি। চতুর্থ বলেই আউট!

পরে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকেও ফেরান ভুবনেশ্বর। তবে ম্যাচে কোনো নাটকীয়তা আসেনি। ওপেনিংয়ে নামা হেনরি নিকোলস ও রস টেইলর মিলে সহজেই জিতিয়ে দেন দলকে। ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন নিকোলস, ২৫ বলে ৩৭ রানে টেইলর।

ম্যাচ সেরায় বোল্টের বিকল্প ছিল না কোনো। সিরিজের শেষ ওয়ানডে রোববার, বাতাসের শহর ওয়েলিংটনে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৩০.৫ ওভারে ৯২ (রোহিত ৭, ধাওয়ান ১৩, গিল ৯, রায়ডু ০, কার্তিক ০, কেদার ১, হার্দিক ১৬, ভুবনেশ্বর ১, কুলদীপ ১৫, চেহেল ১৮*, খলিল ৫; হেনরি ০/৩০, বোল্ট ৫/২১, ডি গ্র্যান্ডহোম ৩/২৬, অ্যাস্টল ১/৯, নিশাম ১/৫)।

নিউ জিল্যান্ড: ১৪.৪ ওভারে ৯৩/২ (গাপটিল ১৪, নিকোলস ৩০*, উইলিয়ামসন ১১, টেইলর ৩৭*; ভুবেনশ্বর ২/২৫, খলিল ০/১৯, হার্দিক ০/১৫, চেহেল ০/৩২, কুলদীপ ০/২)।

ফল: নিউ জিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে ভারত ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: ট্রেন্ট বোল্ট